আইআইইউসির টাকা আত্মসাৎ: ফেঁসে যাচ্ছেন জামায়াত নেতারা

নিউজ ডেস্ক

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) ফান্ড থেকে টাকা সরিয়ে মানি লন্ডারিং, অনিয়ম, দুর্নীতির মামলায় ফাঁসছেন জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতা। আইআইইউসি পরিচালনায় সরকার গঠিত বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়োজিত অডিট কমিটি গত নয় মাসের হিসাব থেকে ২ কোটি ৬৭ লাখ ১৯ হাজার ৭৭৪ টাকার অনিয়ম পেয়েছে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির ও সাতকানিয়া আসনের সাবেক সাংসদ আ ন ম শামসুল ইসলাম ৬৩ লাখ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল্লাহ  ও জামায়াতের আইআইইউসি শাখা আমির মাহবুবুর রহমান প্রত্যেকে ৭০ লাখ করে এবং আরেক নেতা কামাল উদ্দিন ৬০ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে নগদ উত্তোলন করেছেন। এই টাকার বিপরীতে অডিট কমিটি খরচের কোনো ভাউচার পায়নি।

আ ন ম শামসুল ইসলাম সরকার কর্তৃক ভেঙে দেওয়া বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর চেয়ারম্যান ছিলেন। আহসান উল্লাহ অর্থ কমিটির চেয়ারম্যান, মাহবুবুর রহমান ব্যবসায় অনুষদের ডিন ও কামাল উদ্দিন একটি বিভাগের পরিচালক ছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ও সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাংসদ অধ্যাপক ড. আবু রেজা নদভী। তিনি বলেন, সরকার আমাদের দায়িত্ব দেওয়ার পর রানিং মাসের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খেয়েছিলাম। অথচ অন্যান্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আইআইইউসিরও টাকা উদ্বৃত্ত থাকার কথা। তাই আমরা অডিট কমিটি গঠন করেছি। কমিটি মাত্র গত ৯ মাসের হিসাব অডিট করে ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা লুটপাটের প্রমাণ পেয়েছে। হিসাব তো এখনও অনেক বাকি।

এই টাকা কোথায় খরচ হয়েছে জানতে চাইলে এমপি নদভী বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের নির্বাচনী খরচ বহন করতে আইআইইউসির ফান্ড থেকে তারা টাকা সরিয়েছেন। অডিট কমিটি তাদের প্রতিবেদন যখন যা দেবে তা আমরা গণমাধ্যমকে জানাব। সব হিসাব নিরীক্ষা শেষে বিস্তারিত জানাব।

আইআইইউসির টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী হলেন আ ন ম শামসুল ইসলামের বেয়াই। মীর কাসেম আলীর ভাই এবং শামসুল ইসলামের ছেলে দুইজনই দেশের বাইরে থাকেন। তাদের মাধ্যমে এই টাকার একটা অংশ শামসুল ইসলাম কর্তৃক বিদেশে পাচার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আগে অডিট শেষ হোক। তখন কোন টাকা কোথায় গেছে, সেটারও তদন্ত হবে।

দীর্ঘদিন অভিযোগ ছিল, বায়তুশ শরফ দরবার শরিফের প্রধান রূপকার শাহ সুফী মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল জব্বার (রহ), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক অধ্যাপক ড. মঈন উদ্দিন আহমেদ খানদের হাতে প্রতিষ্ঠিত আইআইইউসি দখলে নেয় জামায়াত। সম্প্রতি সরকার জামায়াত নিয়ন্ত্রিত বোর্ড অব ট্রাস্টিজ বিলুপ্ত করে নতুন বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজ গঠন করে।

এই পরিবর্তনের মধ্যে নতুনভাবে আলোচনায় এল আগের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের অর্থ আত্মসাৎ। আইআইইউসির অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ কি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে জানতে চাইলে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক ব্যক্তি মহানগর নিউজকে জানান, অডিটে যাদের অনিয়মের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হবে।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.