৬ এপ্রিল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত মুসল্লি নিয়ে মসজিদে নামাজ আদায়ের নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। নির্দেশনা মানাতে দায়িত্ব পড়েছে মসজিদের ইমাম, পরিচালনা কমিটির ঘাঁড়ে। আর এই নির্দেশনা মানাতে গিয়েই এবার চাকরি হারানোর পথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এক ইমামের।
ঘটনার সূত্রপাত ২৩ এপ্রিল। সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের বারদোনা আদর্শ পাড়া এলাকার শাহ আকামুদ্দিন জামে মসজিদে। বেলাল উদ্দিন নামে ওই ইমাম করোনাভাইরাস রোধে মসজিদে সরকারি নির্দেশনা মেনে নামাজ আদায়ের অনুরোধ করেন। এতে পরিচালনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ নবী সওদাগর, মোস্তাক সওদাগর, আলী, জাফর সিকদারপাড়ার অলি মিয়ার ছেলে ইলিয়াছসহ আরও কয়েকজন মুসল্লি ক্ষেপে যান। তখন তিনি কোরআন হাদিসের নানা উধ্বৃতি দিয়ে বিষয়টি তাদের বুঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের সাফ জবাব ‘সরকারি নিয়মে মসজিদ চলবে না। এটা মুসল্লিদের মসজিদ থেকে দুরে সরানোর কৌশল। ইমাম ভিতু মানুষ। তাই এসব কথা বলছে।’
পরে মসজিদের ইমাম বিষয়টি পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাশেদুল ইসলামকে জানালে তারা সরকারি নির্দেশনা মেনেই নামাজ আদায়ের সিদ্ধান্ত দেন। পরদিন ফজর নামাজের পর ওই মুসল্লিদের কয়েকজন জড়ো হয়ে ৫ জনের বেশি যত মুসল্লি হোক সবাইকে নামাজ পড়ার ঘোষণা দেন। এনিয়ে ইমামের সঙ্গে মুসল্লিদের তর্ক-বিতর্ক হলে পরিচালনা কমিটির লোকজন তাকে ছুটিতে পাঠায়। পরে পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তে ৭ মে মসজিদে আসেন তিনি। এদিন জোহরের নামাজে ইমামতি করতে গেলে ইলিয়াস সুবেদার, মোস্তাক, মো. ইলিয়াছ, আলী, মো. রফিক ও নবীসহ আরও কয়েকজন মসজিদে হট্টগোল করলে পরিচালনা কমিটির সভাপতির ছেলে মোসাদ্দেক হোসেনসহ স্থানীয় সময়ের বাতিঘর সংগঠনের সদস্যদের হস্তক্ষেপে মসজিদের মুয়াজ্জিনের ইমামতিতে নামাজ শেষ হয়। নামাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত মুসল্লিরা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারির কাছে ইমাম বেলালকে চাকুরিচ্যুত করতে হট্টগোল শুরু করে। কমিটির সেক্রেটারি কোনো কারণ ছাড়া ইমামকে চাকরিচ্যুত করা হবে না জানালে ইলিয়াস সুবেদারের নেতৃত্বে কতিপয় মুসল্লিরা বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই ইমাম বেলালকে মসজিদ ত্যাগের নির্দেশ দেন। অন্যথায় যেকোন ঘটনার জন্য ইমাম, পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি দায়ী থাকবেন বলে হুমকি দেন।
মসজিদের ইমাম মাওলানা বেলাল উদ্দিন বলেন, মুসল্লিদের সরকারি নির্দেশনা মেনে নামাজ আদায় করতে বলেছিলাম। এতে কয়েকজন মুসল্লি আমাকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেন ও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে চলে যেতে বলেন। আমি কমিটির কাছে দুটি প্রস্তাব রেখেছিলাম। তাঁরা আমার একটি প্রস্তাবও রাখেননি। আমি সরকারি নির্দেশনা মানতে বলায় এই দুর্যোগ মুহুর্তে আমাকে কোনো সময় না দিয়ে বিদায় করে দেন। এটা তাঁরা আমার প্রতি অমানবিক আচরণ করল।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাশেদুল ইসলাম বলেন, করোনা বিস্তার রোধে সীমিত সংখ্যক মুসল্লি নিয়ে নামাজ আদায়ের জন্য ধর্ম মন্ত্রণাল যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলেন, ইমাম সাহেব সরকারি সে নির্দেশনা মানার জন্য মুসল্লিদের বার বার অনুরোধ করেছেন। এজন্য কয়েকজন তার পেছনে লেগে এলাকায় অশান্তি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। আমি বলেছি তাকে বিদায় না করতে। এতে অনেকে আমার উপরও ক্ষেপেছে