নিজের সাজা অন্যকে খাটিয়ে ধরা

চট্টগ্রাম নগরীতে পোশাক কর্মীকে খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক নারীকে রায়ের সাড়ে তিন বছর পর গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, রায়ের পর থেকে ওই নারী পলাতক ছিলেন। তবে তার বদলে কারাগারে থেকে সাজা ভোগ করছিলেন আরেক নারী। সন্তানদের ভরণপোষণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নিরপরাধ ওই নারীকে কারাভোগের জন্য ভাড়া করেছিলেন দণ্ডিত নারী। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানির পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে নিরপরাধ নারী ছাড়া পান এবং ১৩ দিন পর ট্রাকচাপায় মারা যান।

মর্মান্তিক এই ঘটনার পর থেকে পুলিশ ওই হত্যা মামলায় দণ্ডিত আসল অপরাধীকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছিলেন। অবশেষে বুধবার (২৮ জুলাই) গভীর রাত তিনটার দিকে তাকে নগরীর ইপিজেড থানার মাইলের মাথা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

গ্রেফতার কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমীর (৪৫) বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া জেলায়। পুলিশ জানিয়েছে, ১৬ বছর আগে তিনি নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। কুলসুমের সঙ্গে নিরপরাধ নারীকে সাজা খাটানোর ঘটনায় জড়িত মর্জিনা আক্তার (৩০) নামে আরেক নারীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বাসা নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার ছিন্নমূল এলাকায়।

আর ঘটনার শিকার মিনু আক্তারের বাড়ি কুমিল্লা জেলার ময়নামতি এলাকায়। তিনি সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুর এলাকায় থাকতেন।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, ২০০৬ সালের ২৯ মে নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় পারভিন আক্তার নামে এক পোশাক কর্মীকে গলাটিপে হত্যা করা হয়। পরে তার লাশ গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গেলে প্রতিবেশি কুলসুম দাবি করেন, পারভিন আত্মহত্যা করেছেন।

কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে আসে, হত্যাকাণ্ডে কুলসুম জড়িত। মোবাইল নিয়ে বিরোধের জেরে পারভিনকে কুলসুমই খুন করেন। এরপর ২০০৭ সালের ২৬ অক্টোবর তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন। জামিনে বেরিয়ে পলাতক হয়ে যান। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ কুলসুমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।

ওসি নেজাম বলেন, ‘পলাতক থাকা অবস্থায় কুলসুম জানতে পারেন, তার যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। তখন মর্জিনার মাধ্যমে তিনি মিনুকে খুঁজে বের করেন। মিনুর স্বামী ট্রাকচালক বাবুল আক্তার তখন মাত্র মারা যান। তিন সন্তান নিয়ে চরম কষ্টে মিনুর দিন কাটছিল। তখন সন্তানদের ভরণপোষণ দেওয়ার প্রস্তাবে অসহায় মিনু রাজি হয়ে কুলসুম সেজে ২০১৮ সালের ১২ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সেই থেকে মিনু কুলসুম হয়ে কারাগারে ছিলেন।’

ওসি আরও জানান, বিষয়টি জানাজানির পর চট্টগ্রাম আদালতের একজন আইনজীবী এ বিষয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন। হাইকোর্ট গত ৭ জুন মিনুকে মুক্তির আদেশ দেন। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামের বিচারিক আদালত থেকে কুলসুমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। ১৬ জুন মিনু কারাগার থেকে মুক্তি পান। ২৯ জুন রাতে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার লিঙ্ক রোডে আরেফিন নগর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মিনু।

‘আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা অনুযায়ী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা কুলসুমকে গ্রেফতার করি। এর আগেই আমরা তদন্তে মর্জিনার সম্পৃক্ততা পাই। তার অবস্থান শনাক্ত করে তাকেও গ্রেফতার করি। আদালতের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ওই মামলায় আমরা দু’জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করব’- বলেন ওসি নেজাম উদ্দিন।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.