প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগেনি চবির একাডেমিক শাখায়

চবি প্রতিনিধিঃ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মাস্টার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম। করোনায় দীর্ঘদিন ছিলেন বাড়িতে। পরীক্ষার তারিখ ঘোষণায় ক্যাম্পাসে এসে দেখেন কটেজে থাকা রেজিস্ট্রেশন কার্ডসহ প্রয়োজনীয় অনেক কাগজ-পত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এরইমধ্যে চাকরির আবেদন করতে প্রয়োজন হচ্ছে অনার্সের সার্টিফিকেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী সেই সার্টিফিকেটের আগে নষ্ট হওয়া রেজিস্ট্রেশন কার্ড তুলতে হবে। সেজন্য একাডেমিক শাখা থেকে আবেদনপত্র নিয়ে পূরণ করে বিভাগীয় সভাপতির স্বাক্ষর নেন। তারপর হল প্রভোস্টের স্বাক্ষর নিয়ে লম্বা লাইনে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে আবেদন জমা দিতে আসেন একাডেমিক শাখায়। এই কাজ সম্পন্ন করতেই তার লেগেছে তিন দিন। রেজিস্ট্রেশন কার্ড প্রাপ্তির পর সার্টিফিকেট তুলতে কয়দিন দৌড়াতে হবে জানে না সে।

শুধু রাশেদই নন। সরেজমিনে একাডেমিক শাখার দপ্তরে আসা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে , সেই আগের দিনের চালু থাকা নিয়মে তাদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। চবির এই শাখায় সামান্য কোন ডকুমেন্টস তুলতে কিংবা হারিয়ে গেলেই চরম জটিলতায় পরে শিক্ষার্থীরা। দিনের পর দিন চলে যায় এগুলো নতুন করে তুলতে। বিভিন্ন ফরম পূরণ করা, তারপর বিভিন্ন দপ্তরের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে স্বাক্ষর নেয়া। ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে আবেদন শেষে আবার বেশ কয়েকদিন একাডেমিক শাখার টেবিলে টেবিলে ঘুরাঘুরি শেষে উত্তোলন করতে পারেন শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় এসব কাগজপত্র।

তার উপর রেজিস্ট্রার ভবনের এই শাখায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা সর্বোপরি প্রশাসনিক কাজের ধীরগতির ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসন চাইলেই ডিজিটালাইজড প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করতে পারে যেখানে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই অনলাইনে এসব একাডেমিক কার্যক্রমের বেশিরভাগই শেষ করতে পারবেন।

সংশ্লিরা বলছেন, প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় পাল্টেছে বিশ্ব। বিশ্বায়নের প্রভাবে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে গতিশীল হয়েছে বাংলাদেশও। প্রযুক্তির এই স্নায়ু প্রতিযোগিতায় সবকিছু এগিয়ে গেলে এখনও ডিজিটালের ছোঁয়া লাগেনি দক্ষিণ-পূর্ব বংগের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একাডেমিক শাখার নিয়মিত কার্যক্রমে। এখনও শিক্ষার্থীদের দিনের বেশিরভাগ সময় কাগজ-ফাইল নিয়ে এক অফিস থেকে অন্য টেবিল ঘুরে বেড়াতে হয়। প্রায় আটাশ হাজার শিক্ষার্থীর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এনালগ’ নিয়মের কারণে ভোগান্তির মাত্রা চরমে পৌঁছেছে এই শাখায়।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখার কার্যক্রমে ডিজিটাল নিয়মকানুন চালু হয়েছে। ফলে তারা ঘরে বসেই করতে পারেন বেশিরভাগ কাজ। বাকি কিছু কাজ ‘ওয়ানস্টপ’ সার্ভিসেই সম্পন্ন করতে পারেন। চবিতেও ডিজিটাল কার্যক্রম চালু থাকলে এসব কাজ খুব দ্রুত করতে পারতেন বলে অভিমত তাদের। তারা বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ভিসি আসে আর যায়। কিন্তু কোন ভিসিই আন্তরিকতা দেখাননি শিক্ষার্থীদের এই কষ্ট লাগবে। অথচ চবির অনেক পরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগলেও চবিতে তার কোন পরিকল্পনাই গ্রহণ করছেন না কতৃপক্ষ।

জানা যায়, শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ ডাটা সংরক্ষিত থাকে এই শাখায়। ভর্তি কার্যক্রমের পর থেকে এই বিভাগের সাথেই শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি কাজ থাকে। ডিজিটাল কার্যক্রম চালু আছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরপরই ওয়েবসাইটে সয়ংক্রিয় একাউন্ট তৈরি হয়। শিক্ষার্থীরা নিজস্ব আইডি নাম্বার দিয়ে সার্চ দিলেই জানতে পারেন তার একাডেমিক অবস্থা। এর ফলে দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজে সুবিধা পায় ছাত্র-ছাত্রীরা।

একাডেমিক শাখায় আসা আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার রেজিস্ট্রেশন কার্ড তুলতে হবে। তার জন্য আবেদন ফর্ম নিয়ে বিভাগে গেলাম। সেখান থেকে গেলাম হল অফিসে। হলে গিয়ে দেখি প্রভোস্ট স্যার নেই। জমা দিয়ে চলে আসছি। আগামীকাল হয়ত হল অফিসের কাজ সেরে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হবে। তারপর রেজিস্ট্রেশন কার্ড উত্তোলনের আবেদন জমা দিব। কয়দিনে পাব জানি না। একাডেমিক বিভিন্ন তথ্য অনলাইনে না থাকায় এভাবে অন্যান্য অফিস কেন্দ্রিকও জটিলতার শিকার হচ্ছি আমরা। বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে প্রযুক্তির মাধ্যমে এসব কাজে দ্রুত সার্ভিস প্রদান করতে পারেন।’

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ডিজিটাল ও প্রযুক্তি নির্ভর দেশ গঠন করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন অফিসে চালু হয়েছে আধুনিক ও বিশ্বমানের সেবা। ফলে সেবাপ্রার্থীরা ঘরে বসেই দ্রুত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারছেন। আবার ইন্টারনেট সিস্টেমের কারণে অফিস কেন্দ্রিক দালালদের দৌরাত্ম্যও কমেছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও সম্মানিত অভিভাবকতূল্য শিক্ষকরা চাইলেই এসব আধুনিক সেবা শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করতে পারে। এর জন্য আইটি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটা উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে এপস কিংবা আরও আধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাগব হবে।’

এ বিষয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সাথে। তিনি বলেন, ‘পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে অনলাইন কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা আমাদের আছে৷ করোনার কারণে এখন অনেক অফিস বন্ধ। স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু হলে বাস্তবায়ন করা হবে।’

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.