চাকুরী করেন ভারতে , বেতন-ভাতা তোলেন সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেও
নেপথ্যে ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুনের আর্থিক উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
টানা প্রায় ৬মাস ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো দায়িত্ব পালন না করেও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বেতন-ভাতা, ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন পান্না রানী দাশ নামে এক উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক ।
একই সময়ে তিনি ভারতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীতে যোগদান করছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্র প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।
দেশের বাইরে কর্মরত থাকলেও তাঁকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন সহ আজাদ নামে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক হিসাব রক্ষক কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
তবে সম্প্রতি ভারতে অবস্থানকারী পরিদর্শক পান্না রানী দাশের এ ধরনের অনৈতিক সুবিধা ও বেতন ভাতাদি পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত স্থগিতপূর্বক জোরালো তলব করেছে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়।
প্রায় ৬মাস ধরে স্বাস্থ্য পরিদর্শক পান্না রানী দাশ ভারতে অবস্থান করলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত আব্দুল্লাহ আল মামুন মোটা অংকের বিনিময়ে এত বড় ঘটনাটি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানায়নি বলেও অভিযোগ ওঠেছে তার বিরুদ্ধে।
তবে ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন বড় অংকের ঘুষ নিয়ে বিষয়টি গোপন রাখলেও চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডাক্তার মো: ইলিয়াস চৌধুরীর চোখ ফাঁকি দিতে পারেননি।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের ২ই জুলাই এর স্বারক নং সিএসসি/শা-৫/২০২৪/২৩২০ একটি পত্রে সিভিল সার্জন ডাক্তার মো: ইলিয়াস চৌধুরী সাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয় চলতি বছরের ২৩শে ফেব্রুয়ারি থেকে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে পদায়িত পান্না রানী দাশ কোন ধরনে ছুটি এবং অনুমতি ব্যতিরেকে চাকুরীস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন,পরে সিভিল সার্জন বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে অনুপস্থিতির তারিখ হতে তিনি প্রতিবেশী দেশ ভারতে অবস্থান করছেন।
তিনি তার সাক্ষরিত পত্রে আরো উল্লেখ করেন যে পান্না রানী দাশের এমন আচরণ সম্পূর্ন চাকুরীর বিধি পরিপন্থী।
পান্না রানী দাশকে গত ২রা জুলাই তার মূল পাসপোর্ট নিয়ে স্ব শরীরে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল সিভিল সার্জন ডাক্তার মো ইলিয়াস চৌধুরী সাক্ষরিত ওই চিঠিতে ।
এবং পান্না রানী দাশের ব্যবহৃত মুঠোফোনেও সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল, তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি বলেও উল্লেখ করা হয় উপরোক্ত স্বারকের একই পত্রে।
তবে বিশ্বস্ত সূত্র প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন, নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও তিনি চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে স্ব শরীরে উপস্থিত হননি, কারণ তিনি এখনো ভারতের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
অপরদিকে একই পত্রে আরেকটি আদেশে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হিসাব রক্ষক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শক (ইনচার্জ)কে জানুয়ারী -২০২৪থেকে জুন-২০২৪ এর মাসিক বেতন ভাতাদির রেজিস্ট্রার, মাসিক সমন্বয় সভার হাজিরা খাতা,মাসিক অগ্রীম ট্যুরসহ যাবতীয় ডকুমেন্টস চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে স্ব শরীরে হাজিরা নিশ্চিত করার জন্যও নির্দেশনা প্রদান করেন সিভিল সার্জন ডাক্তার মো ইলিয়াস চৌধুরী।
এদিকে সূত্র আরো নিশ্চিত করেছেন, সাতকানিয়ার কালিয়াইশের রূপসী দাশ নামে আরেক উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শককে ভারতে অবস্থানকারী পান্না রানী দাশের সকল কাজ তাকে দিয়ে চালাতেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে।
এবং অনুপস্থিতির ৬মাসে পান্না রানী দাশের একাউন্টে বেতন ভাতাদি সব জমা হওয়ার জন্য ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুনের যথেষ্ট আন্তরিকতার কথাও সূত্রটি প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন।
এদিকে অনুসন্ধানে ওঠে আসে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন এর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও তার অধীনে থাকা নার্সদের অনৈতিক প্রস্তাব দেয়ার কথাও।
এক পর্যায়ে এক ভুক্তভোগী নার্স চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বরাবর ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন এর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে লিখিত অভিযোগ দিলে, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার(মামুন) বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিল চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়।
যা দৈনিক সকালের সময়ে আর চট্টগ্রাম সংবাদে গত ১২ই ফেব্রুয়ারি-‘ অনৈতিক প্রস্তাবের বিচার চাওয়ায় নার্স বদলি’ -শিরোনামে- ধারাবাহিক ভাবে খবর ছাপানো হয়েছিল।
এবং হাসপাতালের কোয়ার্টার ভাড়া ও সে( ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন) গিলে খায় বলে চলতি বছরের ২৭শে ফেব্রুয়ারি দৈনিক সকালের সময় ও চট্টগ্রাম সংবাদে ‘ সাতকানিয়া হাসপাতালের কোয়ার্টার ভাড়া যায় কার পকেটে?
শিরোনামে বেশ কয়েকটি খবর প্রচার করেছিল।
শুধু তাই নয়,স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি পুকুরের মাছ কোন ধরনের নিলাম না দিয়ে ডলুব্রীজ থেকে জেলে ডেকে এনে মাস দুয়েক আগে প্রকাশ্যে জাল ফেলে প্রায় ৫লক্ষ টাকার মাছ আত্মসাৎ করেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হাসপাতালের কর্মচারী প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন।
বন্ধ চালকবিহীন এ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি তেলের বিল নেয়ার মত গুরুতর অভিযোগও রয়েছে এই ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন এর বিরুদ্ধে, তবে অদৃশ্য খুঁটির জোরে তার বিরুদ্ধে আর হিসাব রক্ষক কর্মচারী আজাদের বিরুদ্ধে তদন্ত বার বার থেমে যায় বলে সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
সাতকানিয়া উপজেলা হিসাব রক্ষক কার্যালয়ের অডিটর মো: সাইফুদদীন বলেন,হ্যাঁ বেতন ভাতাদি স্থগিতের এরকম একটি নির্দেশনার চিঠি আমি রিসিভ করেছি।
তবে তিনি আরো বলেন,ড্রয়িং ও ডিসপার্সিং অফিসার ( ডিডি আব্দুল্লাল আল মামুন) যদি বেতন ভাতাদির ডকুমেন্টস সাবমিট করে থাকে তাহলে গত ৬মাসের বেতন ভাতাদি ট্রেজারী অফিসার অবশ্য transmit করবেন।
এদিকে ট্রাজারি অফিসের কথামতো সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হিসাব রক্ষক আজাদকে কল করা হলে তিনি ফোন ধরেননি,এবং মুঠোফোনে টেক্সট করলেও তার জবাব দেননি।
পরে উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে কল দিলে তিনিও তা ধরেননি হোয়াটস অ্যাপে টেক্সট দিলেও তার উত্তর প্রদান করেননি।
এদিকে আরেক উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক রপসী দাশকে কল করা হলে তিনি বলেন,হ্যাঁ গত ২মাস ধরে আমি ওনার কাজ করতেছি ওনি নাকি অসুস্থ তবে বর্তমানে তার অবস্থান কোথায় তা আমি জানিনা।