অনলাইন ডেস্ক কালের কন্ঠ
বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জে গিয়ে ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’ স্লোগান দিয়েছেন এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম ও তার সহযোদ্ধারা। সফরের আগে তারা সরাসরি উসকানিমূলক বক্তব্য দেন, এমনকি বিদেশি পৃষ্ঠপোষক ও দেশীয় পরামর্শদাতাদের ইন্ধনে বঙ্গবন্ধুর নাম গোপালগঞ্জ থেকে মুছে ফেলার ঘোষণা দেন। জুলাই মাসের কর্মসূচির নামও বদলে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ রাখা হয়েছিল। সাংবাদিক ও কলামিস্ট আনিস আলমগীর মনে করেন, এটি নিছক কাকতালীয় নয়, বরং প্রতীকী আগ্রাসন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে আনিস আলমগীর লিখেছেন, এনসিপির এসব উসকানির প্রতিক্রিয়া এখন স্পষ্ট। দেখা যাচ্ছে, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ছাড়া তারা দেশের কোথাও পা ফেলতে পারছে না। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে—কেন তাদেরকে ভিআইপি সুরক্ষা দিতে হচ্ছে? অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি দাবি তুলছে, বিএনপির নেতা তারেক রহমান দেশে এলে কি তাকেও এভাবে নিরাপত্তা দেওয়া হবে?
স্ট্যাটাসে আনিস আলমগীর আরও লেখেন, নাহিদ ইসলাম গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুকে অবজ্ঞা করে বক্তৃতা দিয়ে এসে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ হিসেবে উপস্থাপন করে এক ধরনের রাজনৈতিক ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছেন। তবে সেই ভারসাম্য কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন।
‘‘তাদের কথা-বার্তা শুনে মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধ যেন বঙ্গবন্ধু ছাড়াই হয়েছে! তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্থাপনা, মুরাল—সবকিছু থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম-চেহারা মুছে ফেলার প্রতিযোগিতায় নেমেছে,’’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইউনূস সরকারও তাদের খুশি করতে নতুন মুদ্রা থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি সরিয়ে দিয়েছে।
তার মতে, বর্তমানে আওয়ামী লীগবিরোধিতায় সবচেয়ে সরব বিএনপি বা জামাত নয়, বরং এনসিপি। আওয়ামী লীগকে শেষ করার নৈতিক দায়িত্ব যেন তারা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। কিন্তু এই রাজনীতি তাদের একঘরে করে দিয়েছে—এটা তাদের দেশি-বিদেশি মুরুব্বিরাও বোঝাতে পারছেন না।
তিনি মনে করিয়ে দেন, আওয়ামী লীগকে মুছে দেওয়ার এই প্রচেষ্টা নতুন নয়। এরশাদ আমলেও একইভাবে বঙ্গবন্ধুকে ভুলিয়ে দিতে ফ্রিডম পার্টি বানানো হয়েছিল। সেই ফ্রিডম পার্টির পরিণতি কী হয়েছে, তা ইতিহাসে লেখা আছে।
তার ভাষায়, ‘‘আমরা আবার সেই সময়ের মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি। তবে এবার সংঘর্ষের প্রতিপক্ষ বিএনপি বা জামাত নয়, বরং নতুন গজিয়ে ওঠা এনসিপি।
যারা ‘জুলাই বিপ্লব’ নাম দিয়ে নতুন মতাদর্শ দাঁড় করাতে চাইছে, তাদের অবস্থাও ভিন্ন কিছু হবে না।’’
আনিস আলমগীর আরও লিখেছেন, সরকার মাসজুড়ে ‘জুলাই চেতনা’ নিয়ে নানা কর্মসূচি চালালেও জনমানসে তেমন উত্তাপ নেই। বরং অনেকে বিরক্ত।
সবশেষে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘ড. ইউনূস সরকারের বিদায়ের পর কে তাদের পাহারা দেবে? বিএনপি-জামাত কি সেই দায়িত্ব নেবে? আর যারা মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ধ্বংস করছে, তারা নিজেরাই তাদের গড়া ‘জুলাই স্তম্ভ’ টিকিয়ে রাখতে পারবে? হয়তো পারবে—যদি আওয়ামী লীগ না থাকে। যদি তারা সত্যিই মুজিববাদকে কবর দিতে পারে। কিন্তু ইতিহাস বলে, যারা বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলতে চেয়েছে, তাদেরই নাম মুছে গেছে। এনসিপি কি পারবে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দিতে? ফ্রিডম পার্টি এখন কোথায়? এবারের পালা কার?’’