সাতকানিয়ায় অবশেষে জামাতি সভাপতিকে সরাতে ইউএনও বরাবর আবেদন

 

সৈয়দ আককাস উদদীন

সাতকানিয়ার বাজালিয়ার ঐতিহ্যবাহী শেরে বাংলা স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আক্তার কামালকে সরাতে অবশেষে বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া হচ্ছে অভিযোগ।
গত ২০শে জুন(রবিবার)সকালে বাজালিয়ার সাবেক ছাত্রলীগনেতা ব্যাংকার আজাদ সিকদার সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে।

জানাযায়,কোনো বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির মৃত্যু হলে নিয়মনুযায়ী মৃত্যুর এক সপ্তাহের মধ্যেই কমিটির সব সদস্যদের নিয়ে সভা ডাকতে হবে। সভায় প্রয়াত সভাপতির মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব আনা হবে। এরপরেই ওঠে আসবে এডহক কমিটির নতুন সভাপতি কে হবেন! সবই সময়সাপেক্ষ। তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শোক প্রস্তাব তো দূরের কথা শোক বার্তাও দেননি। এখানেই তিনি ক্ষান্ত হননি তোড়জোড় করে অর্থের বিনিময়ে নতুন সভাপতি বানিয়েছেন জামায়াতের চিহ্নিত এক অর্থের জোগানদাতাকে।

ঘটনাটি ঘটেছে সাতকানিয়ার বাজালিয়ার ঐতিহ্যবাহী শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে।

গেল ১০ জুন বাজালিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের অন্যতম অর্থযোগান দাতা আক্তার কামাল চৌধুরীকে তোড়জোড় করে সভাপতি বানানো হয়েছে। এতে সব হয়েছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সজল কান্তি দাশ ও এক আওয়ামী লীগ নেতার যোগসাজশে।

বাজালিয়ার বাসিন্দা ব্যাংকার আজাদ সিকদারের অভিযোগ, ২ জুন বাজালিয়া শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি জাফর উল্লাহ চৌধুরী মারা যান। এতে শূন্য হয় সভাপতির পদ। তখন এডহক কমিটিতে ছিলেন ৪জন। জাফর উল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব মিটিংতো ডাকেনইনি, বরং একটা শোক বিবৃতিও দেয়নি প্রধান শিক্ষক।উল্টো বাজালিয়ার চিহ্নিত একজন জামায়াতের অন্যতম অর্থদাতাকে সভাপতি হিসেবে বোর্ডে সুপারিশ করেছেন ।

আজাদ সিকদার আরো অভিযোগ করে বলেন, আমি যখন এমপি মহোদয় থেকে কিছু বরাদ্দ নিয়ে স্কুলে উন্নয়ন করতে যাই তখন এই জামায়াতি আক্তার কামাল স্কুল কাজে বাঁধা দিয়েছিলো, কিন্তু এখন কতিপয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতাসহ বিশেষ করে বাজালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ চৌধুরী ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিলে মোটা অংকের টাকা নিয়ে এই জামায়াত নেতাকে সভাপতি বানিয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, এই জামায়াত নেতা সুকৌশলে সরকারি চাকরি বাগিয়ে সামান্য একজন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারি তহসিলদারের পদে চাকরি করেও কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন নামে বেনামে।

চট্টগ্রাম শহরের বাকলিয়ায় ৫ কাঠার একটি প্লট, চট্টগ্রামের জহুর হকার মার্কেটে ২টি দোকান,চট্টগ্রামের রেয়াজুদদীন বাজার এলাকায় জলশা মার্কেটে একটি দোকান ও বাজালিয়া এলাকায় নামে বেনামে গড়েছেন অঢেল সম্পদের পাহাড়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজালিয়ার এক ইউপি সদস্য বলেন, স্ত্রীর নামেও আছে ব্যাংকে কয়েক কোটি টাকা।

এমন একজন দূর্নীতিগ্রস্থ মানুষকে সরকার দলীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার যোগসাজেশে প্রধান শিক্ষকসহ মিলে ঐতিহ্যবাহী স্কুলের এডহক কমিটির সভাপতি বানিয়েছেন।

এদিকে বাজালিয়ার একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, ২০১৩ আর ২০১৪ সালের সরকার বিরোধী তান্ডবে এই আক্তার কামাল প্রকাশ্যে নাশকতা বিরোধী কার্যকলাপে যে নেতৃত্ব দিলেন, তা পুরো সাতকানিয়ায় জানে অথচ বাজালিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ চৌধুরী নিজেই গিয়ে এমপি নজরুল ইসলাম থেকে সুপারিশ নিয়ে এই জামায়াত নেতাকে বাজালিয়ার প্রাচীন বিদ্যাপীঠকে স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে তুলে দিয়েছেন।

এদিকে অভিযুক্ত আক্তার কামাল চৌধুরী বলেন, আমি সভাপতি হয়েছি এতটুকু জানি তবে কিভাবে হয়েছি এবং কোন প্রক্রিয়ায় হয়েছি আসলে আমি জানিনা।

তবে সরকার বিরোধী কার্যকলাপে কখনোই ছিলাম না,আসলে আমি স্পষ্ট করে বলি আমি কারো সুপারিশের জন্য কারো কাছে যায়নি, তবে আমি কেমনে সভাপতি হলাম তা জানে শুধু স্কুল প্রধান শিক্ষক।

 

তবে আমার অর্জিত সম্পদগুলি অনিয়মের মাধ্যমে নয়, সব ঠিক ঠাক ভাবেই অর্জিত করা হয়েছে। আর আমার সভাপতি হওয়ার বিষয়ে নুন্যতম কারো সাথে যোগাযোগ করিনি আমি, যা করেছে সব প্রধান শিক্ষকই করেছে। আর নিয়মতান্ত্রিক ভাবে হলাম সভাপতি নাকি অনিয়মতান্ত্রিক ভাবেই হলাম তাও জানে প্রধান শিক্ষক।

এদিকে সাতকানিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আজিম শরীফ গণমাধ্যমকে বলেন, নিয়ম বহির্ভূত সভাপতি নির্বাচিত হলে অবশ্যই তদন্ত করে তা উর্ধত্বন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। আমার উপজেলায় অনিয়ম করে কেউ কখনো পার পায়নি এবং পাবেওনা ইনশাআল্লাহ।

এদিকে শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্কুল পরিচালনা কমিটি ঘোষনার পর হতে তার নিজ ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ করে রেখেছেন। তার এই কর্মকাণ্ডে স্থানীয়রা চতুরতা ও দুরসন্ধিমূলক মনে করছেন।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.