বাঁশখালীতে মাংস রান্না জেরে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা!

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামে মাংস রান্না স্বাদ না হওয়ায় আইরিন আক্তার (২১) নামের এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার রাতে বাঁশখালী থানা পুলিশ ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের অটোরিকশাচালক হারুনুর রশিদের সঙ্গে সাধনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সাধনপুর গ্রামের আবু ছালেকের মেয়ে আইরিনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য আইরিনকে চাপ দিতেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ নিয়ে একাধিকবার সালিসও হয়েছে। গত কোরবানির ঈদের দিন স্বামী হারুনুর রশিদ স্থানীয় মাংস এনে আইরিনকে রান্না করতে দেন। আইরিন ওই মাংস রান্না করেন।মাংসের তরকারি খেয়ে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন স্বাদ পাননি বলে অভিযোগ করেন। ওই তরকারি প্রতিবেশীদেরও ডেকে দেখানো হয়। এ ঘটনায় হারুনুর রশিদ আইরিনকে কয়েক দফা পিটিয়ে জখম করেন। একপর্যায়ে গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় আইরিনকে আবারও মারধর করলে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

ঘটনার পর থেকে স্বামী ও ভাসুর পলাতক রয়েছেন। হত্যার পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আইরিন আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে। পরিবারের লোকজন গোপনে আইরিনকে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় হাসপাতালে লাশ ফেলে কৌশলে সবাই পালিয়ে যায়। আনোয়ারা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন বলেন, ‘গৃহবধূ আইরিনকে তার স্বজনরা মৃত অবস্থায় হাসপাতালে এনেছিল।’

নিহত গৃহবধূর শাশুড়ি নুর বানু বলেন, ‘মাংসের রান্না স্বাদ না হওয়ায় আইরিনকে আমার ছেলে পিটিয়েছে ঠিক, কিন্তু হত্যা করেনি। আমার ছেলে বলেছে, ওড়না পেঁচিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে। তবে কীভাবে আইরিন মারা গেছে, কোথায় ওড়না পেঁচানো হয়েছে আমি দেখিনি।’

সাধনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সাধনপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘আইরিনের যৌতুকলোভী স্বামী হারুনুর রশিদের অত্যাচারে দফায় দফায় সালিস বসে। সালিসে হারুনুর রশিদের দোষ প্রমাণিত হত। মূলত যৌতুক না পেয়েই মাংস রান্নার অজুহাতে আইরিনকে হত্যা করেছে।’

আইরিনের বাবা আবু ছালেহ এবং মা শামশুন্নাহার বলেন, ‘আমার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তার স্বামী। হত্যার পর তারা আমার মেয়ের লাশ গায়েব করার চেষ্টা করেছিল। আমার মেয়ের হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ বাঁশখালীর রামদাশ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মিনহাজ মাহমুদ বলেন, ‘আইরিনের মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।’

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.