চট্টগ্রামের মিনুর ঘটনা ‘সিরিয়াসলি’ তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক:

চট্টগ্রামের একটি হত্যামামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পরিবর্তে সাজা ভোগ করে কারামুক্ত নিরপরাধ মিনুর মৃত্যুর ঘটনা ‘সিরিয়াসলি’ তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানার পুলিশের এসআই খোরশেদ আলম ও কোতোয়ালী থানার পুলিশের এসআই জুবায়ের মৃধাকে এ নির্দেশ দেন আদালত।

হাইকোর্ট বলেছেন, আর কোনো মিনু যেন এভাবে প্রক্সিতে না পড়ে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে দেশের কারাগারগুলোতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করা দরকার।

বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) মিনুর মৃত্যু ঘটনায় করা মামলা এবং তাকে প্রক্সি দিয়ে জেল খাটানোর মামলার নথিসহ দুই তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) উপস্থিত হওয়ার পর এ বিষয়ে শুনানিতে হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন।

গত ১৬ জুন বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান মিনু আক্তার। ২৮ জুন ভোর পৌনে ৪টার দিকে বায়েজিদ-ভাটিয়ারী লিংক রোডের মহানগর সানমার গ্রিনপার্কের বিপরীতে ‘সড়ক দুর্ঘটনায়’ ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

আদালত দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কেন সে (মিনু) রাত তিনটায় বাসা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গেল? তাকে প্রক্সি দিয়ে জেল খাটানোর ঘটনায় আটকদের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না অথবা শুধুই আটকরা প্রক্সির ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে জড়িত কি না, নাকি অন্য কেউ আছে, এসব বিষয় সিরিয়াসলি তদন্ত করবেন। প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইনস্ট্রাকশন নেবেন।

পরে তাদের (দুই পুলিশ কর্মকর্তা) ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে এ বিষয়ে জারি করা রুলের শুনানির জন্য আগামী ২২ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত।

রুলে দেশের সব জেলখানায় কয়েদিদের পরিচয় শনাক্তে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও আইরিশ স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক ডাটা পদ্ধতি চালু করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

বুধবারের শুনানিতে রুলের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, এখনও রুলের জবাব নেই। আপনি দৃষ্টি দেবেন?

জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বলেন, মাই লর্ড, অবশ্যই দেবো।

আদালত বলেন, এটা কি দেশের জন্য ভালো হবে?
সারওয়ার হোসেন বলেন, হবে মাই লর্ড। সবাই তো দেশের মঙ্গল চাই।
আদালত বলেন, চান তো?
সারওয়ার হোসেন বলেন, আনডাউটেডলি মাই লর্ড।
আদালত বলেন, আর কত মিনু বেগম সৃষ্টি হচ্ছে, হবে।
সারওয়ার হোসেন বলেন, আছে মাইলর্ড। সেগুলো তো অপ্রকাশিত।
আদালত বলেন, এটার জন্য আমরা রুল দিয়েছি। এটা পিটিশনারের কোনো ইন্টারেস্ট না।
সারওয়ার হোসেন বলেন, ইন্টারেস্ট হলো সিটিজেনের।
আদালত বলেন, হ্যাঁ, সিটিজেনস। আর কোনো মিনু যেন এভাবে প্রক্সিতে না পড়ে।

পরে আদালত রুল শুনানির জন্য ২২ সেপ্টেম্বর দিন রাখেন। ওইদিন এ ঘটনায় তলব করা চট্টগ্রামের আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকতে হবে। এছাড়া দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

চট্টগ্রামে এক হত্যা মামলায় আদালত ২০১৭ সালে ঘোষণা করা এক রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেন কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে। তিনি ওই সময় পলাতক ছিলেন। পরে আইনজীবী নাছির উদ্দীনের মাধ্যমে ২০১৮ সালের জুন মাসে কুলসুম আত্মসমর্পণ করতে চান। আত্মসমর্পণের দিনই মিনুকে কুলসুম হিসেবে সাজিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। তখন থেকেই কারাগারে মিনু। ওইদিনই মূল আসামির বদলে আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর কুলসুমের নামেই মিনুকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এরপর উচ্চ আদালতে আবেদন করলে গত ৭ জুন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীর পরিবর্তে জেল খাটা মিনুকে মুক্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ ঘটনায় চট্টগ্রামের নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর এমএ নাসের, আইনজীবী নুরুল আনোয়ার, আইনজীবী বিবেকানন্দ চৌধুরী, আইনজীবী পুষ্পেন্দ বিকাশ কানুনগো ও আইনজীবী সহকারী সৌরভ হোসেনকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছিল। সে অনুসারে ২৮ জুন তারা হাজির হন। ওই পাঁচজনের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা লিখিত ব্যাখ্যা জমা দেন। এ দিন আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির একটি রুল জারির আবেদন জানালে আদালত তা মঞ্জুর করে রুল দেন।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.