মহাসড়ক এড়িয়ে পাহাড়ি পথে মাদক পাচার

অনলাইন ডেস্ক:

মিয়ানমার থেকে পাহাড়ি সীমান্ত ও নাফ নদ পার হয়ে প্রতিদিনই দেশে প্রবেশ করছে ইয়াবা ট্যাবলেটসহ নানান ধরনের মাদক। আর এসব ইয়াবা প্রতিদিনই বিভিন্ন কৌশলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার খবর পুরনো।

ইয়াবা পাচারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতী ফরেস্ট রেঞ্জার কার্যালয়ের সামনে এবং একই সড়কের সাতকানিয়া উপজেলার আঁধার মা’র দরগা নামের এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে নিয়মিত ইয়াবা জব্দ ও কারবারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আর এটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আর এতে করে ইয়াবা কারবারীদের মধ্যে তৈরি হয় আতংক।

এদিকে সেই আতংক কাটিয়ে নিরাপদে ইয়াবার কারবার অব্যাহত রাখার জন্য বেছে নিয়েছে নতুন রুট। ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হওয়া একাধিক কারবারী ও প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য মিলেছে।

তাছাড়া গত ২ অক্টোবর বান্দরবান পার্বত্য জেলার আলীকদম এলাকা থেকে চার লাখ ৯৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ মোহাম্মদ মনির (২৩) ও সাইফুল ইসলাম (২০) নামের দুজনকে র‌্যাব-৭ আটক করে। এ ঘটনার পর মাদক কারবারীরা গ্রেপ্তার এড়াতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছেড়ে পাহাড়ি সড়ক ব্যবহারের বিষয়টি বেছে নেয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নতুন রোড দিয়ে ইয়াবা পাচারের তথ্য প্রশাসন বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারে। তা সত্বেও পাচাররোধ ও কারবারীদের আইনের আওতায় আনা বেশ কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা।

সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু বলেন, ‘আমার সার্কেলের লোহাগাড়া থানা পুলিশ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতী ফরেস্ট রেঞ্জারের কার্যালয়ের সামনে ও সাতকানিয়া থানা পুলিশ জনার কেওচিয়া আঁধার মা’র দরগার সামনে চেকপোস্ট বসিয়ে ইয়াবা জব্দ ও কারবারীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এমনকি ওই দুই স্থান থেকে ভয়াবহ ক্রিস্টাল মেথ বা আইস নামের ভয়ানক মাদকের বিশাল চালানও জব্দ করতে সক্ষম হই। এছাড়া ইয়াবাকাণ্ডে জড়িত অনেককেই আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু আরও বলেন, ‘সম্প্রতি মাদক ব্যবসায়ীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মুখোমুখি না হয়ে নিরাপদে মাদক ব্যবসা চালিয়ে নেওয়ার জন্য ভিন্ন রোড ব্যবহার শুরু করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। মাদক কারবারীরা চেকপোস্ট এড়িয়ে সাতকানিয়া-লোহাগাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে মাদক পাচার করছে। আমরাও পুলিশি কার্যক্রমে পরিবর্তন আনছি। এখন আমরা আর নিদিষ্ট একটি জায়গাতে চেকপোস্ট করতেছি না। স্থান পরিবর্তন করে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পৃথক স্থানে চেকপোস্ট বসাচ্ছি। এছাড়াও সড়কে কাজ করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য ইউনিট যেমন, হাইওয়ে থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশ মিলিয়ে সমন্বয় করে আমরা সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে ইয়াবা কারবারীদের রোধ কবার চেষ্টা করছি।’

মাদক সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ইয়াবা কারবারীরা বর্তমানে চকরিয়া থেকে লামা-আলীকদম সড়ক হয়ে লামা উপজেলার কেয়াজুপাড়া সুয়ালক সড়ক ব্যবহার করে কেরানীহাট-বান্দরবান সড়ক দিয়ে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার স্থানীয় ইয়াবা বিক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে। পাশপাশি বুড়ির দোকান-মৌলভীর দোকান সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে চট্টগ্রাম শহরসহ সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। দোহাজারী তদন্তকেন্দ্রের দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরাও অভিযান চালিয়ে ইয়াবা জব্দ করছে কিন্তু তা পাচারের তুলনায় অতি নগণ্য বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্ট মহল।

টঙ্কাবর্তি ইউনিয়নের ব্রিকফিল্ড এলাকার এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই সড়ক দিয়ে এখন প্রতিদিন অনেক দামিদামি ব্রান্ডের গাড়ি চলাচল করছে হরহামেশা। উঠতি যুবকরা দামি মোটরবাইক নিয়ে সারা দিনই চলাচল করে থাকে। ব্রিকফিল্ড এলাকায় একটি সড়ক দিয়ে কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের সুয়ালক মাঝেরপাড়া ও ব্রিকফিল্ডের পশ্চিমে পাহাড়ি সড়কটি দিয়ে এলে একই সড়কের হলুদিয়া এলাকায় পৌঁছানো যায়।

লামা-সুয়ালক সড়ক সরেজমিনে দেখা যায়, নবনির্মিত সড়কটি খুবই সুন্দর। পাহাড় টিলার মধ্যখান দিয়ে বয়ে চলা সড়কটিতে কোনো গর্ত নেই; নেই কোনো খানাখন্দক। ফলে যানবাহন চালনায় বেশ আরামদায়ক এ সড়কটি এখন মাদক কারবারীদের বেশ প্রিয়। প্রাইভেট গাড়ি যেমন কার, জিপ ছাড়াও মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করতে সড়কটি বেশ আরামদায়ক ও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দেওয়া সহজ। আর এ কারণেই মূলত মাদক কারবারীরা পাচারকাজে এ সড়কটিকে বেছে নিয়েছে বলে জানা যায়।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.