বাঁশখালী চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের বাঁশখালী পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের শিব মন্দিরের উত্তর পার্শ্বে জলদাশ পাড়ার শতবর্ষী কর্মকার প্রকাশ (কামাজ্যা পুকুর) ভরাট করা হচ্ছে। সেখানে কি নির্মাণ করা হবে তা জানা যাই নি। পুকুরটি ভরাটের ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। বেআইনি ভাবে পুকুর ভরাটের অভিযোগ উঠল এলাকার মমতা সমবায় সমিতি সহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এলাকার বাসিন্দারাই প্রতিবাদ করলে বাঁশখালী পৌরসভার পক্ষ থেকে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। সরেজমিনে পরিদর্শন কালে স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানায়, বাঁশখালী পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের শিব মন্দিরের উত্তর পার্শ্বে জলদাশ পাড়ার শতবর্ষী কামাজ্যা পুকুরটি ট্রাকে করে মাটি দিয়ে ভরাটের চেষ্টা করেন স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট । স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উত্তর জলদী মৌজার সি.এস ৬৫৩১, মৃত কিষ্ণুর কিংকর আচার্য্য ,দিগাম্বর ও নীলাম্বর আচার্য্য সিএস মালিকানাধীন মূলে তারা সহোদর ভ্রাতা ছিলেন।
আর.এস ৫৪৩৪ ও বি.এস ৮৩৯৯ দাগের ও বিএস ২০৯৯ খতিয়ানের মালিকানাধীন ৯৮ শতক জায়গায় জুড়ে এই বিশাল পুকুরটি ক্রমান্নয়ে নীলাম্বরের স্ত্রী ছিলেন হরকুমারী। তাহার কোন পুত্র সন্তান ছিল না। অপরাপর আর.এস খতিয়ান ২৩৬৭ হরকুমারীর নামে রেকড চুড়ান্ত প্রচার আছে। কৃষ্ণ কিংকর আচার্য্য মৃত্যু বরন করিলে তার দুই পুত্র বনমালী ও সারদা চরন আচার্য্য ওয়ারিশ হয়। দীগাম্বর আচার্য্য মরনে ২ পুত্র বিষ্ণু ও অপর্ণা চরন আচার্য্য হয়। হরকুমারী মৃত্যুবরণ কালে তাহার ৪ ভ্রাতুপুত্র যথাক্রমে রমনালী আচার্য্য , মারদাচরন,বিষ্ণচরণ ও অর্পনাচরণ মালিক হন । তাদের মধ্যে বিষ্ণচরণের ২ পুত্র বিভুতি আচার্য্য ও মনোরঞ্জন আচার্য্য । মনোরঞ্জন তার প্রাপ্য অংশে ২ দলিলে পুকুর টি থেকে ২৮ শত বা ১৪ গন্ডা জায়গা বিক্রি করে দেন স্থানীয় বাসী রামজলদাশের ছেলে রামপ্রসাদ জলদাশ কে। তিনিই স্থানীয় মমতা সমবায় সমিতি ও একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে এই পুকুর টি ভরাট করছেন বলে স্থানীয়রা জানান। তবে অপর এক অংশের ৪৯ শতক বা ২৪ গন্ডা ২ কড়ার মালিকানা দাবী করে কালীপদের পুত্র কিরণ আচার্য্য বাদী হয়ে ৩৪৬/১২ বাঁশখালী আদালতে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটি চলাকালীন সময়ে উক্ত পুকুরটি স্থানীয় কয়েকজন সিন্ডিকেট মিলে জোর পূর্বক এই বিশাল পুকুরটি ভরাট করার ষড়যন্ত্র করছেন বলে জানান কিরন আচার্য্য।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, যুগ যুগ ধরে পুকুরটি এলাকার মানুষ নানা কাজে ব্যবহার করে আসছে। পুকুরের ১০০ গজের মধ্যে থাকা উত্তরে জলদাশ পাড়া দক্ষিনে শিব মন্দির এবং আশে পাশের লোকজন এখান থেকে পানির চাহিদা পূরণ করতেন। দেশের প্রচলিত আইনে জলাশয় ভরাট দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও পৌরসভা বা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই পুকুরটি ভরাট শুরু করেন এই সিন্ডিকেট । এলাকাবাসী পুকুরটি রক্ষার দাবি জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি করা এক আদেশে বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, জনগণের আশ্রয়স্থল রক্ষা ও অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা করতে কোনো অবস্থায় খাল-বিল, পুকুর-নালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট করা যাবে না এবং এর গতিপথ পরিবর্তন করা যাবে না। তবে কোনো ব্যক্তি যদি পুকুর ভরাট করতে চায়, সে ক্ষেত্রে পৌরসভা, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের পুকুর ভরাটের অনুমতি লাগবে । বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৬ (ঙ) অনুযায়ী, জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করার বিধান রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাধার বা পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে পরিবেশগত ক্ষতি ও বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে। জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর-জলাশয়, নদী-খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি।
বাঁশখালী পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দিলীপ চক্রবর্তী জানান,কোন প্রকার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও পৌরসভার অনুমতি না নিয়ে আমার ওয়ার্ডের শিব মন্দিরের উত্তর পার্শ্বে জলদাশ পাড়ার শতবর্ষী কামাজ্যা পুকুরটি ট্রাকে করে মাটি দিয়ে ভরাটের চেষ্টা করেন স্থানীয় একটি সমিতি ও গুটি কয়েকজন ব্যক্তি । শতবর্ষী এই পুকুরটি ভরাটের খবর পেয়ে পৌরসভার মাধ্যমে পুকুরটি ভরাট কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। পুকুর ভরাট করা সম্পূর্ণ বেআইনি। নিজের পুকুর হলেও কোনো ব্যক্তি তা ভরাট করতে পারবে না। উক্ত পুকুরটি নিয়ে তাদের পারিবারিক মামলা মোকদ্দমা আছে বলে ও শুনেছি। এ ভরাট বন্ধ করা উচিত এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি তিনি অনুরোধ জানান।
বাঁশখালী পৌরসভার ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর রোজিয়া সোলতানা রোজি জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও পৌরসভার অনুমতি না নিয়ে এভাবে পুকুর ভরাট বেআইনী। বর্তমানে পৌরসভার পক্ষ থেকে পুকুরটি ভরাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ পুকুর ভরাটের অনুমতি কাউকে দেয় নি।
বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র স্থানীয় প্রশাসন এবং পৌরসভার অনুমতি ছাড়া পুকুর বা জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ। পুকুর বা জলাশয় ভরাট করা বা যেকোনো জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। বিনা অনুমতিতে পুকুর ভরাটের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে পৌরসভার পক্ষ থেকে পুকুরটি ভরাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ পুকুর ভরাটের জন্য কাউকে অনুমতি দেয়নি। দেশের প্রচলিত আইনে জলাশয় পুকুর ভরাট বেআইনী।
উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, পুকুর ভরাট করা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। তবে পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া কেউ যদি পুকুর ভরাট করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।