‘ডিজিটাল কানেক্টিভিটি’ শিখতে বিদেশ যাবেন ৪০ কর্মকর্তা

‘ডিজিটাল কানেক্টিভিটি স্থাপন’ শিখতে এবার বিদেশ যাবেন ৪০ কর্মকর্তা। এ ছাড়া দেশেই প্রশিক্ষণ পাবে ৩ হাজার ৩৩৫ জন কর্মকর্তা। দেশি-বিদেশি মিলে এ প্রকল্পে প্রশিক্ষণে যাবে ৩৬ কোটি ১২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া পরামর্শক হিসাবে ডিজিটাল ভিলেজ ফার্ম নিয়োগে খরচ হবে ২৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে অন্য আরও ২৮ জনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ কোটি ১১ লাখ টাকা।

‘ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এসব খাতে ব্যয়ের প্রস্তাব করা হবে বলে জানা গেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮৮৩ কোটি ৭৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২ হাজার ৫০৫ কোটি ১৬ লাখ ২২ হাজার টাকা এবং চীনের ঋণ সহায়তা থেকে ৩ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে।

প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটি এরইমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ করে করোা মহামারির সময় দেশের অর্থনীতি এবং কাজকর্ম পরিচালনায় ব্যাপক অবদান রয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশের। এ প্রকল্পটির জন্য প্রয়েজনীয় পরামর্শক এবং প্রশিক্ষণের দরকার আছে। আলোচনা-পর্যালোচনা করেই এই ব্যয় স্থির করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পটিতে বড় অংকের ঋণ দিচ্ছে চীন।’

তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অনুবিভাগ) সানজিদা সোবহনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন কাজ শেষ করবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) অধিদফতর।

প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে— বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৫৭টি সেন্টার ফর ফোর্থ (চতুর্থ শিল্প বিপ্লব), সেন্ট্রাল ক্লাউড প্লাটফর্ম এবং ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি সেন্টার অব এক্সিলেন্স স্থাপন। জেলা ও উপজেলা কমপ্লেক্স এ আইটি অবকাঠামোসহ ৫৫৫টি ডি-সেট (ডিজিটাল সার্ভিস অ্যান্ড ইমপ্লয়মেন্ট ট্রেনিং সেন্টার), মাঠ পর্যায়ের ক্লাউড ফাইল সার্ভিস এবং ডিজিটাল স্টোরেজের জন্য কেন্দ্রীয় সার্ভার অবকাঠামো স্থাপন।

এ ছাড়া আইসিটি ল্যাব, স্মার্ট ভার্চুয়াল ক্লাসরুম এবং ডিসটেন্স লার্নিং প্ল্যাটফর্মসহ প্রয়োজনীয় আইসিটি অবকাঠামো সুবিধাসংবলিত একটি ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন। সিআরভিএস (সিভিল রেজিস্ট্রেশন এন্ড ভাইটাল সটাটাটিকস) বাস্তবায়নের জন্য সিআরভিএস সেন্ট্রাল আইএসডিপি (ইনটারগ্রাটেড সার্ভিস ডেলিভারি প্ল্যাটফমৃ) সার্ভার স্থাপন, মাঠ পর্যায়ে সাড়ে ৫ হাজার এনরোরমেন্ট অবকাঠামো স্থাপন এবং ১৭ হাজার ৩১৪টি সার্ভিস ডেলিভারি ডিভাইস বিতরণ।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে— আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বর্তমানে সরকার আইসিটিকে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসাবে চিহ্নিত করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য জ্ঞানভিত্তিক ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন, নাগরিকের জন্য অর্থবহ ডিজিটাল সংযোগ কাঠামো স্থাপন, জনগনের দোরগোড়ায় নাগরিক সেবা পৌঁছে দেওয়া এবং বেসরকারি খাতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টির জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশের প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত কানেক্টিভিটি পৌঁছে দেওয়াসহ একটি আইসিটি প্ল্যাটফর্ম স্থাপননের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতর ইস্টাবিলিলিং ডিজিটাল কানেক্টটিভিটি (ইডিসি) শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সরকারের নির্বাচনি অঙ্গীকার, ভিশন-২০২১, অস্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১ থেকে ২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য সারাদেশে ডিজিটাল কানেকটিভিটি আবশ্যক। বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ে বিদ্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক, সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো দ্রুত, নিরাপদ এবং কার্যকর ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা জরুরি। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মকৌশলে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ১০০ ভাগ ব্রডব্যান্ড সুবিধা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ রয়েছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চগতিসম্পন্ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত হবে, প্রান্তিক পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীসহ সবার তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কিত জ্ঞান ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষায়িত জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং সর্বোপরি সিআরভিএস সংশ্লিষ্ট সেবাসহ প্রশাসনিক কার্যক্রমে ই-গভর্ন্যান্স প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে।

প্রকল্পটি চলতি বছরের ১৬ মার্চ একনেক সভায় উপস্থাপনের জন্য নির্ধারিত হয়। সভায় চীন সরকার এ প্রকল্পে অর্থায়নের জটিলতার বিষয়টি বিবেচনা করে প্রকল্পটি বৈদেশিক অর্থায়নের পরিবর্তে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন এবং সে অনুযায়ী প্রকল্পের অর্থায়নসহ সব কম্পোনেন্ট বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পুনর্বিন্যাস করে প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) একনেক সভায় পুনরায় উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে চীন সরকারের অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়ায় আগে উপস্থাপিত প্রকল্পটি পুনরায় একনেকে উপস্থাপনের জন্য আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ হতে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।

এ প্রকল্পের আওতায় আইসিটি যথাযথ ও নিরাপদ ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ নিম্নস্তরের সব সরকারি অফিসের মধ্যে কানেক্টিভিটি দেওয়া, ই-লার্নিংয়ের সুযোগ সৃষ্টি এবং সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে— এক লাখ ৯ হাজার ২৪৪টি ব্রডব্যান্ড ও ইউজার কানেক্টিভিটি স্থাপন, ১০ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, ৫৭টি বিশেষায়িত ল্যাব, সেন্ট্রাল ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম এবং ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি সেন্টার অব এক্সিলেন্স স্থাপন, জেলা ও উপজেলা কমপ্লেক্স এ আইটি অবকাঠামোসহ ৫৫৫টি ডি-সেট, মাঠ পর্যায়ের ক্লাউড ফাইল সার্ভিস এবং ডিজিটাল স্টোরেজের জন্য কেন্দ্রীয় সার্ভার অবকাঠামো স্থাপন।

আইসিটি ল্যাব, স্মার্ট ভার্চুয়াল ক্লাসরুম এবং ডিসট্যান্স লানিং প্ল্যাটফর্মসহ প্রয়োজনীয় আইসিটি অবকাঠামো সুবিধা সংবলিত একটি ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন, সিআরভিএস বাস্তবায়নের জন্য সিআরভিএস সেন্ট্রাল আইএসডিপি সার্ভার স্থাপন, মাঠপর্যায়ে ৫ হাজার ৫০০টি এনরোলমেন্ট অবকাঠামো স্থাপন এবং ১৭ হাজার ৩১৪টি সার্ভিস ডেলিভারি ডিভাইস বিতরণ, অনাবাসিক ভবন ৪৯২টি। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলায় পূর্বাচলে ২১ তলা বিশিষ্ট ডিপার্টমেন্ট অব আইসিটি টাওয়ার নির্মাণ একটি। উপজেলা শেয়ারড আইসিটি অপারেশন সেন্টারের জন্য উপজেলা বিল্ডিংয়ের একতলা ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ৪৯১টি। ১০টি ডিজিটাল ভিলেজ স্টেশন স্থাপন, ১০টি ডিজিটাল ভিলেজ স্টেশন আওতায় ফিল্ড সার্ভে, ২০ হাজার কৃষককে স্মার্ট সেনসর ডিভাইস দেওয়া, ছয়টি মোটরযান ক্রয়, ২৮ ক্যাটাগরির পরামর্শক সেবা, কম্পিউটার এক্সেসরিজ এবং সফটওয়্যার সংগ্রহ, ৪০ জন বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, বিদেশি প্রশিক্ষক বাংলাদেশে আসবে ৩ হাজার ৩৩৫ জন, স্থানীয় প্রশিক্ষণ ১৬ হাজার ৮২১ জন এবং ৪৯ জন বিভিন্ন পর্যায়ের জনবল নিয়োগ।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.