উখিয়ায় হাইব্রিড ঢেঁড়স চাষ করে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা

 ঢেঁড়স এর বাজারমূল্য কেজি ৮০ টাকা হলেও ৪৫ টাকা পাইকারি মূল্যে বিক্রি করেও লাভবান হচ্ছে কৃষক

উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের উখিয়ায় স্থানীয়দের পাশাপাশি নতুন পুরাতন মিলে প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গার বসবাস। এই বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাপে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের হাটবাজার গুলোতে শাকসবজির ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। এতে স্থানীয় কৃষকরা বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। সরজমিন গিয়ে জানাযায়, পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে বর্ষা মৌসুমের আগে উখিয়া সদর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আলিমুড়া এলাকায় ৩৫ জন কৃষক কৃষাণী মিলে প্রায় ৫ একর জমির উপর হাইব্রিড ঢেঁড়স চাষ করেন। মাত্র ৪৫ দিনের মধ্যে ঢেঁড়স বিক্রি করতেছেন তারা। বাজারে ঢেঁড়স এর খুচরা মূল্য কেজি ৮০ টাকা হলেও বেশিরভাগ কৃষক কেজি ৪৫ টাকা করে পাইকারি মূল্যে প্রতিদিন হাজার হাজার মন হাইব্রিড ঢেঁড়স বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। কৃষকরা বলেন, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শীতকালীন মৌসুমে রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প সংলগ্ন হাটবাজার গুলোতে আমরা শাকসবজি, মিষ্টি আলু, মুলা, টমেটো, মরিচ, বাদাম, ধনিয়া পাতা বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছি। সম্প্রতি পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে আবারও ভাল দামে হাইব্রিড ঢেঁড়স বিক্রি করতে পেরে খুবই আনন্দিত হয়েছি। কৃষক আবুল কালাম বলেন, আমরা প্রতি বছর মৌসুমের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন শাকসবজির চাষ করে থাকি। যেমন, শীতকালীন সময়ে আলু, শিম, মুলা, মরিচ, ধনিয়া পাতা চাষ করে লাভবানও হয়েছি। এইবছর ৩০ শতক জমির উপর হাইব্রিড ঢেঁড়স চাষ করে ৪৫ দিনের মধ্যে প্রথম উত্তলনে ২২ কেজি ঢ়েড়স বিক্রি করতে পেরেছি এটা একসময় ২’শত কেজি পর্যন্ত হবেন বলে জানিয়েছেন। আলিমুড়া এলাকার কৃষক ইসমাইল হাবিব বলেন, আমরা প্রতিবছর বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ করে আসছি এবং লাভবানও হচ্ছি। তবে খালের ভাঙনের ফলে বালু ভরাট হয়ে দিন দিন আমাদের কৃষি জমি গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনরোধ করার জন্য একটি সামাজিক উন্নয়ন মূলক সংগঠন এগিয়ে আসলেও আর কেউ এগিয়ে আসেনি। তরুণ কৃষক আফাস উদ্দিন বলেন, আমার এলাকার স্থানীয় কৃষকরা কয়েক বছর ধরে ঢেঁড়স চাষ করে লাভবান হচ্ছে। ঢেঁড়স চাষে অনুপ্রাণিত হয়ে এই বছর আমিও ১০ শতক জমির উপর হাইব্রিড ঢেঁড়স চাষ করছি এবং ঢেঁড়স এর বাম্পার ফলনও হয়েছে। প্রতি দুইদিন পরপর ঢেঁড়স বিক্রি করে নিজের খরচ নিজেই যোগাড় করতে পেরে পরিবার থেকে আর আমাকে খরচ দিতে হচ্ছে না। কৃষাণী সাজেদা বেগম বলেন, আমরা গরীব মানুষ অনেক কষ্ট করে সবজি চাষকরি। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন থেকে শুনে আসছি সরকারের পক্ষ থেকে উপজেলা কৃষি অফিস মানুষদের বিভিন্ন শাকসবজির বীজ এবং অত্যাধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করেন। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, এখনো পর্যন্ত আমরা সরকারের পক্ষ থেকে সেইরকম কোন সহযোগিতা পায়নি। অন্যান্য এলাকার কৃষকরা মনে করেন, চলতি বছরে আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে। তা হলে বাংলা সনের চৈত্র থেকে শ্রাবণ অর্থাৎ বর্ষা শুরুর দিকে ঢেঁড়স বিক্রি করতে পারবেন এমনটা আশা করছেন তারা। এই ছাড়াও উখিয়ার মরিচ্যা, পাতাবাড়ি, ভালুকিয়া, গয়ালমারা, তেলখুলা, মুছারখুলা, চৌধুরীপাড়া, ডেইলপাড়া, গয়ালমারা, সোনারপাড়া, মনখালি, থাইংখালী, পালংখালী, বালুখালী, কামরিয়ারবিল, ইত্যাদি এলাকার স্থানীয় কৃষকরা হাইব্রিড ঢেঁড়স চাষ করে লাভবান হচ্ছেন জানিয়েছেন তারা। উপজেলা কৃষি অফিসার প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, ঢেঁড়স চাষে যে মাটির কন্ডিশন দরকার সে দিক থেকে উখিয়ার মাটি খুবই ভাল। বীজ সম্পর্কে যদি বলি উখিয়াতে বিভিন্ন কোম্পানি কিংবা এনজিও সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে কৃষকদের মাঝে নিম্নমানের বীজ বিতরণ করে আসছিলো। সে ক্ষেত্রে আমরা প্রতিনিয়ত নজর রাখতেছি অর্থাৎ কোন রকম কম্প্র মাইজ হবে না। তিনি আরো বলেন, মৌসুম অনুযায়ী আবেদনের মাধ্যমে কৃষকের মাঝে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি বরাদ্দ দিয়ে থাকি। এইরকম বরাদ্দ আগামীতেও আসতে পারে। তবে, কেউ যদি যন্ত্রপাতি গুলো নিতে চাই অবশ্যই কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ করে আবেদন করতে পারবেন।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.