চট্টগ্রামে পালিয়ে গেলো কারাবন্দী

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যান্তরে অমানবিক নির্যাতন, হতাকান্ড, আসামি উধাও, মাদক, ইযাবা ব্যবসা, রহস্যজনক মৃত্যু, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে কারাগারে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে । শনিবার ফারহাদ হোসেন রুবেল নামের এক হত্যা মামলার আসামি রহস্যজনক উধাও হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিষয়টি বাইরে জানাজানি হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। জেল কর্তৃপক্ষ নিজে দায়মুক্তি হতে থানায় জিডিও করেছে। সূত্রে জানায়,  ফরহাদ হোসেন রুবেল শনিবার সকাল থেকে তার কোন খোঁজ না পেয়ে বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে কারা কর্তৃপক্ষ। সকালে নিয়মিত বন্দি গণনাকালে ওই বন্দির অনুপস্থিতির বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেলেও বার বার যোগাযোগ করেও কারা কর্মকর্তাদের মিডিয়া থেকে গা ঢাকা দিয়েছে।এরই মধ্যে বিকালে কারাগারে ‘পাগলা ঘণ্টা’ বাজানো হয়েছে।এছাড়া কারাগারে পুলিশ প্রবেশ করতে দেখা গেছে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রিয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান সাধারণ ডায়রিও করেছেন। কোতোয়ালী থানার ওসি নিজাম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট থানার হত্যা মামলার আসামী ফারহাদ হোসেন রুবেল নামে একজন বন্দি কারা অভ্যন্তরে নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ একটি জিড়ি করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কারা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৫ নম্বর কর্ণফুলী ভবনের ‘পানিশমেন্ট’ ওয়ার্ডে থাকতেন হত্যা মামলার আসামী ফরহাদ হোসেন রুবেল। সকালে নিয়মিত গণণাকালে তার অনুপস্থিতি নজরে আসে কারাকর্তৃপক্ষের। এর পর থেকে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। সকাল থেকে এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান ও জেলার মো. রফিকুল ইসলাম এবং তিন ডেপুটি জেলারে সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। কোন কর্মকর্তা ফোন ধরছে না। এদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে হাজতি রূপম কান্তি নাথ (৪৫) নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চমেক হাসপাতালের চিকিসাধিন রয়েছে নির্যাতনের শিকার। কারাগারে রূপমের অন্ডকোষে আগুনের ছ্যাঁকা,পুরো অন্ডকোষ, পুরুষাঙ্গসহ বিভিন্ন স্থান আগুনে ঝলসে গিয়ে মাংসপিন্ড খসে পড়ার মতো নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালের ২৫ এপ্রিল কোতোয়ালী থানায় রতন ভট্টাচার্য নামের এক ব্যবসায়ীর দায়ের করা জালিয়াতি ও আত্মসাতের মামলায় রূপম ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে কারাবন্ধি। আত্মসাতের মামলায় তিনি চুক্তিমতো টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ওইদিন আদালত তাঁর জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় কারাগার থেকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করেন কারা কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায়  গত ১ মার্চ চট্টগ্রাম আদালতে ভুক্তভোগীর স্ত্রী ঝর্ণা রানী বাদী হয়ে  সাতকানিয়া উপজেলার মৌলবীর দোকান এলাকার রতন ভট্টাচার্য, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার, জেলার ও জেলখানায় কর্তব্যরত সহকারী সার্জনসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। অভিযোগ রয়েছে বর্তমান জেলার রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে কারাবন্ধিদের স্ত্রীদের সাথে যোগাযোগ করে কারাগারে সুবিধা দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন ধরণের কুপ্রস্তাব দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া ২০১৯ সালে কারাগারে অমিত মুহুরীকে হত্যাকান্ডের রিপন নাথ এক বন্দীকে অভিযুক্ত করে তৎকালিন জেল সুপার মামলা করলেও মামলাটি হিমাগারে বর্তমান। জেলার রফিকুল ইসলাম বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন। বিভিন্ন সময় বন্ধিরা এবং বন্দিদের স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন বলে জানান।