মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পে স্থানীয়রা চাকরিচ্যুত, টাকা দিলে চাকরি মিলে বহিরাগতদের!

মহেশখালী (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

মাতারবাড়ী দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর হিসেবে পরিচিত, যেখানে হচ্ছে সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। তার মাঝে ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প অন্যতম। এখানে স্থানীয়-বহিরাগত মিলে প্রায় আট হাজার শ্রমিক কাজ করেন। কিন্তু নানা কারণে স্থানীয় ২৬৫ জন শ্রমিক ছাঁটাই করার মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনায় আসে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে চাকরির জন্য দফায় দফায় বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে দেখা যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ফলে কয়েকবার বাহির থেকে আসা শ্রমিকদের ফেরত পাঠানোসহ স্থানীয়ভাবে মানববন্ধন হলে ও মিলে নাই কোন সমাধান। থামছে না বহিরাগত শ্রমিক নিয়োগ। কেন, অজানা রয়ে যায় সে রহস্য! বরং বিভিন্ন হয়রানির শিকার হয় মানববন্ধনকারীরা। তবে চাকরিচ্যুত স্থানীয়দের মধ্যে থেকে ২০০ জনের চাকরি হয়েছে বলে জানা যায়। প্রকল্পে অধিগ্রহণকৃত জায়গায় লবণমাঠ, ফসলিজমি, চিংড়ি প্রজেক্ট ঘিরে কাজ করত প্রায় স্থানীয়রা। কিন্তু এমন জায়গায় কাজ করা মানুষের কপালে জুড়ে নি চাকরি, বাড়ছে কর্মহারা মানুষের সংখ্যা।

২১ মার্চ (রবিবার) ঢাকা, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ থেকে ২০ জন বহিরাগত শ্রমিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করতে আসলে স্থানীয়রা তাদের আটক করে রাখেন।

তাদের দেওয়া তথ্যমতে, Posco E&C কোম্পানীর সুপারভাইজার রাজ্জাক ও Sino Hydro কোম্পানীর সেফটি অফিসার মোঃ হাবিব তাদের নিয়ে আসেন।
চাকরির জন্য তাদের অনেকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছেন বলে জানান।

স্থানীয়রা জানান, তাদের জায়গা চলে যাওয়ায় তারা কর্মহারা। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে তাদের জীবনযাপন খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেকে ফাইল জমা দিলে ও তাদের চাকরি হয় নাই বরং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বহিরাগতদের চাকরি হচ্ছে। তারা চাকরির দাবি জানান। টাঙ্গাইল থেকে আসা হজর আলী নামে একজন জানান, তিনি চাকরির জন্য বিশ হাজার (২০,০০০) টাকা দিয়েছেন৷

অন্যদিকে ময়মনসিংহ থেকে আসা সবুজ জানান, তার সাথে হাবিবের কথা হয়েছে, চাকরি হলে তাকে ২০,০০০ টাকা দিতে হবে। বহিরাগত প্রায় শ্রমিকের একই বক্তব্য চাকরি হলে দিতে হবে মোটা অংকের টাকা।

মাতারবাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চেয়েছেন তাই আমরা দেশের উন্নয়নের স্বার্থে জায়গা দিয়েছি। প্রকল্পে যদি স্থানীয়দের চাকরি দেওয়া হয় তাহলে আমরা আজীবন চির কৃতজ্ঞ থাকিব।

এই বিষয়ে ‘স্থানীয় শ্রমিক ছাঁটাই আন্দোলন পরিষদে’র সমন্বয়ক আসিফ ইকবাল জানান, বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে স্থানীয়দের চাকরি হচ্ছে না, রবং স্থানীয় যাদের চাকরি হয়েছিল তাদের অনেকের ছাঁটাই করা হয়েছে। এইদিকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বহিরাগতদের আনা হচ্ছে, যা থামছে না। সিন্ডিকেট প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের নাম বলতেছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্থানীয়দের চাকরি দিতে বললে ও কেউ প্রধানমন্ত্রীর কথা রাখছে না। বরং তারা ওনার কথাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে।

মাতারবাড়ী মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, আমি বারবার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা আমলে নেই নাই।
আমরা স্থানীয়রা চাকরি পাচ্ছি না, বাহির থেকে বহিরাগতের এনে চাকরি দেওয়া হচ্ছে। দেশের স্বার্থে আমরা জায়গা দিয়েছি কিন্তু আমাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে না। স্থানীয়দের চাকরির অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য তিনি দাবি জানান।

 

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.