প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করার মতো কোনো শক্তি বাংলাদেশে এখনো তৈরি হয়নি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়নি। আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে এদেশের মাটি ও মানুষের কাছ থেকে। কাজেই আওয়ামী লীগের শিকড় অনেক দূর পর্যন্ত। আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়াসহ অনেকেই চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে। কিন্তু পারেননি, পারবেও না। আওয়ামী লীগে টিকে আছে, থাকবে।’
বুধবার (১১ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে এসব কথা বলেন তিনি। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এ সংক্রান্ত সম্পূরক প্রশ্নটি উত্থাপন করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম। এক-এগারোর পরিস্থিতি তুলে ধরে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য জানতে চান তিনি। জবাবে, বর্তমানে তেমন কোনো পরিস্থিতি নেই বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যেভাবে এদেশের মানুষের উপর অত্যাচার করেছিল। ঠিক সেভাবে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অত্যাচার-নির্যাতন চলেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, বৃটিশ হাই কমিশনারের উপর হামলাসহ দেশব্যাপী নাশকতা চালিয়েছে। এরপর এক কোটি ২০ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরির মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলেন তারা। জনগণ তা প্রতিহত করেছিল। বিএনপির চরম দুঃশাসনের কারণে এক-এগারো এসেছিল
তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড ব্যাংকও পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল। সেখানে কি কোনো দুর্নীতি হয়েছিল? দুর্নীতি হয় নাই। তারা প্রমাণ করতে পারেন নাই। এটা শুধু আমার কথা না। কানাডার ফেডারেল কোর্টে করা মামলার রায়ে বলা হয়েছে- সকল অভিযোগে মিথ্যা, কোনো অভিযোগই সত্য না। সবগুলোই ভুয়া। তাহলে তারা কিভাবে বলবে দুর্নীতি হচ্ছে? যদি দুর্নীতি হতো তাহলে অল্প সময়ে এত বড় বড় প্রজেক্টের কাজ কোনোদিন শেষ হতো? এর আগে কখনো হয়েছে?’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রশ্নকর্তা সংসদ সদস্য বাংলাদেশের নাগরিক। তার একটি সেকেন্ড হোম রয়েছে। সেই সেকেন্ড হোমে অর্থাৎ ইংল্যান্ডে বিদ্যুতের দাম দেড়শ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে মুদ্রাস্ফীতি ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। সেখানে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। প্রত্যেকটি পরিবারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা হয় এবং প্রতিটি বিল পরীক্ষা করা হয়। যে নির্দেশনা তার চাইতে এক ফোঁটা বেশি হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, ফাইন করা হয়। বাংলাদেশে এখনো সে অবস্থার সৃষ্টি হয়নি।’
তামাক চাষ বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে মানুষ যখন চাষ করে তখন অর্থকরী ফসলের দিকে দৃষ্টি দেয়। এ কথা ঠিক আমাদের অনেক জমি অনাবাদি পড়ে আছে। আমার এলাকার কথাই বলি, সেখানে অনেক অনাবাদি জমি আছে। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এসব জমি চাষের উপযোগী করার। ১০ হাজার একর জমি আবাদ করতে পারব, সে ব্যবস্থা নিয়েছি। যেটা চাষ হচ্ছে তা বন্ধ করার থেকে অনাবাদি জমিতে আবাদের চেষ্টা করতে হবে।’
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটোর প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে মূল্যস্ফীতির প্রভাব হ্রাস পাওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এ কারণে রাশিয়ার উপর বিভিন্ন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে জ্বালানি তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের আন্তর্জাতিক বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশেও জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির চাপ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে এবং গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রাকে স্বাভাবিক ও সচল রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছি। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ গত বছরের ৫ আগস্ট গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রলের মূল্য সমন্বয় করা হয়।’
সংসদ নেতা আরও বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পায় এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়, যা এখনো অব্যাহত আছে। গত ডিসেম্বরেও আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের গড় মূল্য ১০৬ মার্কিন ডলার (ব্যারেল), যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১ হাজার ২৭৫ টাকা। সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেলের চাহিদা বছরে প্রায় ৬৮ দশমিক ৮৭ লাখ মেট্রিক টন, যার ৭০ ভাগই (প্রায় ৪৮.৩২ লাখ মেট্রিক টন) ডিজেল। বর্তমানে ডিজেল বিক্রয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোশনের (বিপিসি) দৈনিক প্রায় ৩ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। যা সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।’
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস পেলে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে লোকসান পূরণ করে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া বিরাজমান বৈশ্বিক সংকট সত্ত্বেও জনসাধারণের জীবনমান স্বাভাবিক রাখা ও দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।