পয়েন্ট তালিকা সমান হওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে ফাইনাল খেলা স্থগিত

চরম হতাশা বিরাজ করছে ফুটবল প্রেমিদের মাঝে

পটিয়া  প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা প্রশাসন গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলাটি স্থগিত করেছে পটিয়া উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা। রবিবার রাতে পটিয়া উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার প্যাডে টুর্নামেন্ট কমিটির আহবায়ক ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এম এ কাসেম এবং সদস্য সচিব ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্বপন চন্দ্র দে যৌথ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ফাইনাল খেলাটি পটিয়া আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল টুর্নামেন্টের সিডিউল অনুযায়ী। জানা যায়, একই গ্রুপের আবাহনী ক্রীড়া চক্র ও ব্রার্দাস ইউনিয়ন পয়েন্ট তালিকা সমানে সমান হওয়ায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ফাইনাল খেলার দিন তারিখ নির্ধারিত থাকার পরও কেন ফাইনাল খেলাটি স্থগিত করেছে উপজেলা প্রশাসন এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। এদিকে, নির্ধারিত তারিখে ফাইনাল খেলাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে না শুনে পটিয়ার ফুটবল প্রেমিরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, পটিয়া উপজেলায় ফুটবলের বন্ধ্যাত্ব চলছে। একসময় পটিয়া থেকে ফুটবলার তৈরি হতো। তারা উপজেলা, জেলার গন্ডি পেড়িয়ে জাতীয় দলেও খেলার সৌভাগ্য অর্জন করেছিল। কিন্তু দুই দশক ধরে আর কোন ফুটবলার উঠে আসছেনা পটিয়া থেকে। এরপর ও ঝিমিয়ে পড়া ফুটবলকে জাগিয়ে তুলতে উপজেলা প্রশাসন গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। গত ২৭ জানুয়ারী থেকে শুরু হয় পটিয়া উপজেলা প্রশাসন গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টটি। এ টুর্নামেন্টে আবাহনী ক্রীড়া চক্র, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, পটিয়া ফুটবল একাডেমি ও আবদুস সোবহান ফুটবল দল সহ মোট ৬টি দল অংশ গ্রহণ করে দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে। এ গ্রুপে তিনটি দল আর বি গ্রুপে তিনটি দলে ভাগ হয়ে সবকটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু একই গ্রুপের দুটি দল আবাহনী আর ব্রাদার্স ইউনিয়নের পয়েন্ট তালিকা সমানে সমান হওয়ায় বিপাকে পড়েছে টুর্নামেন্ট পরিচালনা কমিটি। গত ৩ ফেব্রুয়ারি আবাহনী ক্রীড়া চক্রের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জসিম উদ্দিন ফাইনাল খেলার তারিখ পরিবর্তন করতে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মোহাম্মদ আতিকুল মামুন বরাবরে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে লিখেছেন, টুর্নামেন্টে আবাহনী ক্রীড়া চক্র দুটি খেলায় জয়লাভ করেছেন। অপরদিকে ব্রার্দাস ইউনিয়ন একটি খেলায় পরাজিত হয়েছে। আবাহনী ক্রীড়া চক্র পটিয়া ফাইনালে উন্নতি হয়েছে এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাথে ফাইনাল খেলায় প্রতিদ্বন্ধিতা করবে। উক্ত ফাইনাল খেলাটি ৭ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে আরো এক সপ্তাহ পিছিয়ে নিয়ে পরবর্তী তারিখ নির্ধারন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এদিকে উপজেলা প্রশাসন গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের বাইলজের ৮ নং ধারায় সংযুক্ত হবে উল্লেখ করা এক চিঠিতে দেখা গেছে, লীগ পদ্ধতির খেলায় এক বা ততোধিক দলের পয়েন্ট যদি সমান হয় তবে গোল এভারেজে খেলার ম্যাচে (ট্রাইবেকার ব্যতীত) গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ করা হবে যদি গোল এভারেজও সমান হয়। তবে টস এর মাধ্যমে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ করা হবে। টুর্নামেন্ট সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পটিয়া উপজেলা প্রশাসন গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছিল। দীর্ঘ দিন পর অনুষ্ঠিত হওয়া এ ফুটবল টুর্নামেন্টটির ফাইনালে দুইটি দল প্রতিদ্বন্ধীতা করার কথা ছিল। আবাহনী ক্রীড়া চক্রের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জসিম উদ্দিন জানান , আমাদের গ্রুপে তিনটি দল অংশ নেন। আমরা নির্ধারিত দুটি ম্যাচে জয়লাভ করেছি। ব্রার্দাস ইউনিয়ন ২ টি ম্যাচের মধ্যে ১টিতে জয় আরেকটিতে পরাজিত হন। গ্রুপের অপর দল পটিয়া একাডেমি ২ ম্যাচেই পরাজিত হন। ফলে আমাদের ৪ পয়েন্ট আর ব্রার্দাস ইউনিয়নের ৪ পয়েন্ট সমানে সমান হয়। হেড টু হেড এ এডভানটেজ হিসেবে দুই দলের মধ্যে বাফুফের নিয়ম অনুযায়ী আমরা ব্রার্দাস ইউনিয়নের বিপক্ষে জয়লাভ করেছি এমনটাই দাবি করেন তিনি। অন্যদিকে ব্রার্দাস ইউনিয়নের সভাপতি নাজমুন নাহার দাবী করছেন, আবাহনী বনাম ব্রাদার্সের মধ্যকার খেলাই ট্রাইবেকার ব্যতিত ১-১ গোল। আবাহনী বনাম পটিয়া একাডেমি ট্রাইবেকার ব্যতিত ০-০ গোল। আবাহনী বনাম ব্রাদার্স ইউনিয়ন ট্রাইবেকার ব্যতিত ১-১ গোল। সুতরাং ব্রাদার্সের ২ গোল এবং আবাহনীর ১ গোল। বাইলজ অনুযায়ী ব্রাদার্স ইউনিয়ন পটিয়া ১ গোল ব্যবধানে গ্রুপ চ্যম্পিয়ন। সুতরাং মোহামেডানের সাথে ফাইনাল খেলার একমাত্র ব্রাদার্স ইউনিয়নই যোগ্য। অপরদিকে, টুর্নামেন্টে ২ টি গ্রুপের মধ্যকার অনুষ্ঠিত খেলার পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বি গ্রুপের পরপর দুটি খেলায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব একটা ম্যাচে সরাসরি জিতে এবং আরেকটি ম্যাচে ট্রাইব্রেকারে জিতে ৫ পয়েন্ট নিয়ে আগেই ফাইনালের মঞ্চে উঠে গেছেন। এ গ্রুপের ম্যাচে আবাহনী ক্রীড়া চক্র ব্রার্দাসের সাথে ২-১ গোলে জিতে ২ পয়েন্ট অর্জন করেছিলেন। তারা অপর ম্যাচে পটিয়া একাডেমির সাথে ট্রাইব্রেকারে ৭-৬ গোলে জয় পেয়ে আরো দুই পয়েন্ট অর্জন করে মোট ৪ পয়েন্ট পান। একই গ্রুপে বাদ্রাস ইউনিয়ন আবাহনী থেকে ট্রাইবেকারে হেরে ১ পয়েন্ট ও পটিয়া একাডেমিকে ১ গোলে হারিয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে তাদের মোট ৪ পয়েন্ট নিয়ে ফাইনালে যাওয়ার গৌরব অর্জন করে। কিন্তু বাধ সেধেছে এ জায়গায় আবাহনী ক্রীড়া চক্র আর ব্রার্দাস ইউনিয়নের মধ্যে পয়েন্ট তালিকা সমানে সমান হওয়া নিয়ে। কে যাচ্ছে ফাইনালে? এ অবস্থায় আবাহনী ক্রীড়া চক্র কৌশলে একটি চিঠি লিখে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি বরাবরে ফাইনাল খেলাটি আরো এক সপ্তাহ পিছিয়ে নিতে অনুরোধ করেন। আর তাদের এ চিঠি পাওয়ার দুই দিনের মাথায় রবিবার রাতে এক জরুরি বৈঠকে বসেন উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা ও টুর্নামেন্ট কমিটির সদস্যরা। এরপর রাত দশটার পর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার প্যাডে “অনিবার্য কারণবশত” ইস্যু দেখিয়ে ফাইনাল খেলা স্থগিতের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক পোস্টে।

এ ব্যাপারে টুর্নামেন্টের সদস্য সচিব ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্বপন চন্দ্র দে জানান , এ বিষয়ে আমরা রবিবার রাতে এক জরুরি বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি মঙ্গলবার ৭ ফেব্রুয়ারী তারিখের নির্ধারিত ফাইনাল খেলাটি পরবর্তী দিন তারিখ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে যখন সিদ্ধান্ত নিবে তখনই ফাইনাল খেলাটি অনুষ্ঠিত হবে।
মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.