শেষ বারের মত কালুরঘাট সেতু পার হলেন মোছলেম উদ্দীন

মইন উদ্দীন খান বাদলের পর মোছলেম উদ্দীন আহমদও নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের মধ্যে কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নতুন সেতু হয়ে বোয়ালখালীর কধুরখীলের গ্রামের বাড়ি থেকে নগরের লালখান বাজারের বাসায় আসার কথা ছিল তার। প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে স্বপ্নের সেতুটি উদ্বোধনের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। এসবের কিছু না হলেও তিনি ঠিকই শেষবারের মত কালুরঘাট সেতু পার হয়ে নগরের বাসায় এসেছেন। তবে সেটা জীবত নয়; মৃত। জাতীয় ও দলীয় পতাকায় মোড়ানো বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দীনের নিথর মরদেহ বিশাল গাড়ি বহর নিয়ে পার হয়েছে কালুরঘাট সেতু।

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে শেষ বারের মতো এ বর্ষীয়ান নেতার মরদেহবাহী গাড়ির বহর যখন সেতু পার হচ্ছিল তখন রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে চলা পথিও ক্ষণিকের জন্য থমকে গিয়েছিলেন। প্রায় সকলেরেই মুখে একটিই কথা— এমপি বাদলের পর কালুরঘাট সেতু না দেখার আক্ষেপ নিয়ে বিদায় নিতে হলো মোছলেম উদ্দীনকেও। অন্যান্য সময়ের মতোই এ নেতার জন্য আগে থেকেই সেতুর দুপাশে বন্ধ ছিলো যানবাহন চলাচল।

জানাজা শেষে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়, তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কার্যালয় ১২২ আন্দরকিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অফিসে। রাতে তাঁর কফিন রাখা হবে লালখান বাজারের বাসাতে।

মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় নগরের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে তাঁর সর্বশেষ নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর হযরত গরীবুল্লাহ শাহ মাজারস্থ কবর স্থানে মায়ের পাশে দাফন করা হবে।

এরআগে বিকেল বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে বোয়ালখালীর গোমদণ্ডী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মোছলেম উদ্দীনের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বোয়ালখালীর হাজার হাজার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। এসময় তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

এছাড়া সকাল ১১টায় আওয়ামী লীগের ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বেলা ২টায় বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে বোয়ালখালীর কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তাঁর মরদেহ আনা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে আসা হয় গোমদণ্ডী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে৷

কালুরঘাট সেতু দেখে না যাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে বাদল কবরে গেলেও তার আসনে উপ নির্বাচনে মনোনয়ন পান প্রবীণ রাজনীতিক বোয়াখালীর বাসিন্দা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দীন আহমদ। তিনি ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে উপ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়ে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনের আগে তিনিও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে নির্বাচনী ইশতেহার প্রদানের সময় ঘোষণা দিয়েছিলেন নির্বাচিত হলে এক বছরের মধ্যেই কালুরঘাট সেতুর নির্মাণ কাজ করা শুরু করবেন।

এমনকি গত বছরের ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে পলোগ্রাউন্ড মাঠে সেতু স্বপ্ন নয় বাস্তব উল্লেখ করে ২০২৩ সালে নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের কথাও জানিয়েছিলেন। এমনকি সেতুটির নাম বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের নামে নামকরণের দাবিও জানান তখন। বাদলের পর কালুরঘাট সেতু নির্মাণে এমপি হিসেবে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছিলেন মোছলেম উদ্দিন আহমদ। কখনো প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে, কখনোবা রেল কিংবা সেতু মন্ত্রীর দপ্তরে। শেষমেশ স্বপ্নের কালুরঘাট সেতুর বাস্তবায়ন দেখে যেতে না পারলেও দেখেছেন সংস্কার কাজের তড়িঘড়ি।

কিন্তু বাদলের পর মোছলেম উদ্দীনও দেখে যেতে পারেন নি কালুরঘাট সেতুর নির্মাণ কাজ। রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী, ৪ কন্যা, একমাত্র ভাই, আত্মীয়স্বজন ও বহু রাজনৈতিক শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.