নিজস্ব প্রতিবেদক
বান্দরবান চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের সরকারি গাড়ি থেকে টোল নেওয়াকে কেন্দ্র করে শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজায় সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনায় মামলা হয়েছে। গত ১ এপ্রিল সংঘটিত ওই ঘটনায় আদালতের নাজির ও ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ কায়সার বাদি হয়ে কর্ণফুলী থানায় যে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তা মামলায় রূপান্তরিত হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে বাদি ওয়াকিবহাল থাকলেও মামলার বিষয়ে তিনি জানেন না বলে প্রতিবেদককে জানান।
গতকাল শুক্রবার প্রতিবেদকের সাথে কথা হলে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুলাল মাহমুদ এসব কথা জানান। এর আগে, গত ৫ এপ্রিল দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় ‘জজ, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ গণার সময় নাই’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
থানার দায়ের করা অভিযোগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত ১ এপ্রিল বান্দরবান থেকে নগরীর পাহাড়তলী হাজী ক্যাম্প এলাকায় কিছু স্টেশনারি জিনিসপত্র কেনার জন্য নগরীতে আসছিলেন নাজির শহীল্লাহ কায়সার, জারিকারক আবুল আলম ও ড্রাইভার সাজু মিয়া। তাদের গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো চ ৫৩-১১৩২। কর্ণফুলী টোলপ্লাজায় গাড়ি থামলে তারা গাড়িটি সরকারি বলে উল্লেখ করে নিজেদের পরিচয় দেন টোল আদায়ের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীকে। এসময় কর্মচারীর ডাকে বিবাদি আবদুল মান্নান টোল প্লাজায় আসেন। একইভাবে তাকেও পরিচয় দিয়ে গাড়িটি বান্দরবান চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বলে জানানো হয়। এসময় তিনি উত্তেজিত সুরে বলে উঠেন ‘জজ, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ গণার সময় নাই। এ অবস্থায় অপর বিবাদী অশোক কুমারের কাছে যাওয়ার পরও বিষয়টি সুরাহা হয়নি। বরং টোল পরিশোধ করার পরও অতিরিক্ত টোল দাবি করা হয় বলে কর্ণফুলী থানায় দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী টোল প্লাজার অপারেশনাল ডিরেক্টর অপূর্ব সাহা দৈনিক পূর্বদেশকে বলেন, গাড়িটি সরকারি নাকি বেসরকারি তা আমরা প্রথমে চিহ্নিত করতে পারিনি। তাই আমরা বলেছিলাম সড়ক বিভাগের সাথে কথা বলে আমাদেরকে জানাতে। কিন্তু তারা বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। আমরা চিনতে না পারার কারণে উনারাও টোল প্রদান করেছেন। কিন্তু অতিরিক্ত টোল আদায় করা হয়েছে বলে আমাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ‘এ গাড়ি থেকে আর টোল আদায় করা হবে না’ মর্মে আমার সহকর্মী অশোক কুমার ভট্টাচার্য্য মুচলেকা দিয়ে এসেছিল। এরপর দিন পুনরায় মামলা দায়ের হল।
সরেজমিনে টোল প্লাজায় কর্মরতদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত এপ্রিল সকাল ৯ টা ৪৭ মিনিটে টোল প্লাজার ১নং লেনে (কক্সবাজার হইতে চট্টগ্রাম অভিমুখে) একটি সাদা মাইক্রোবাস (গাড়ির সামনে একটি কাগজে আদালতের লোগো সম্বলিত) এসে টোলপ্লাজা অতিক্রম করতে চায়। তখন দায়িত্বরত টোল আদায়কারী মো. গোলাম হোসেন ওই গাড়ির ড্রাইভারের পরিচয় জানতে চায়। গাড়ির ড্রাইভার মো. আবুল আলম জানান যে, গাড়িটি বান্দরবান চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সরকারি গাড়ি। তখন টোল আদায়কারী মো. গোলাম হোসেনের পাশে থাকা সহকারী এডমিন মো. আব্দুল মান্নানকে ডাকেন। সহকারী এডমিন মো. আব্দুল মান্নান তখন গাড়ির ড্রাইভারকে টোল দিয়ে যেতে বলেন এবং এ বিষয়ে টোল অফিসে কথা বলতে বলেন। তখন ড্রাইভারের সাথে থাকা ব্যক্তি টোল অফিসে দায়িত্বরত টোল কো-অর্ডিনেটর অশোক কুমার ভট্টাচার্যকে ফোন দিয়ে নিজেকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ কায়সার বলে পরিচয় দেন। তখন টোল কো-অর্ডিনেটর অশোক কুমার ভট্টাচার্য উনাকে অফিসে আসতে বলেন। তিনি অফিসে এসে টোল বিনা মাশুলে যাওয়ার বিষয়ে কথা বললে টোল কো-অর্ডিনেটর অশোক কুমার ভট্টাচার্য শহীদুল্লাহ কায়সারকে টোল আদায়কারী কর্তৃপক্ষ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমার সাথে কথা বলার জন্য বলেন।
কিন্তু তারা নির্বাহী প্রকৌশলীকে ফোন না দিয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচয় নিয়ে এবং ১০০ টাকা টোল পরিশোধ করে চলে যান।
বান্দরবান চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অফিসের নাজির শহীদুল্লাহ কায়সার দৈনিক পূর্বদেশকে জানান, আমি নাজিরের পাশাপাশি অতিরিক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে আসছি। থানায় আমি অভিযোগ দিয়েছিলাম ঠিক, তবে মামলা হয়েছে কি না সেটি আমি জানি না।
অভিযোগে অতিরিক্ত টাকা দাবির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি স্যারের সাথে কথা বলে আপনাকে জানাতে পারবো।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. আলমগীর বলেন, আমাকে ওসি স্যার তদন্তের দায়িত্ব দিলেও আমি এখনো পুরোপুরি বিষয়টি অবগত নই। তদন্ত মাত্র শুরু করেছি, আপনি ওসি স্যারের সাথে কথা বলুন।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ দৈনিক পূর্বদেশকে বলেন, আসলে এটা একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিষয়টি নিয়ে তাদেরকে সরি বলেছেন। বিশেষ করে যমুনা সেতুতে রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের গাড়ি ছাড়া অন্যান্য কোন গাড়ির টোল মওকুফ করার সুযোগ নেই, সে আইনটা কর্ণফুলী সেতুর উনারাও মনে করেছেন। উনারা বিষয়টি ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন, সুতরাং এখানে ঝামেলার কিছু নেই।