গৃহবধূ জেরিন হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন

 পটিয়া প্রতিনিধি

চট্টগ্রামের পটিয়ায় গৃহবধূ জেরিন আকতারকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যার অভিযোগে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্বজন, এলাকাবাসী ও চট্টগ্রামের জনসাধারণ। রবিবার (৭ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে নিহত গৃহবধূ জেরিন আকতারের পিতা আমির আলমদার, মা জেসমিন আকতার, মামলার বাদী নিহত গৃহবধূর মামা রিদওয়ান, ভাই কাইয়ুম উদ্দীন, হাসমত খান আতিফ।সুলভ বড়ুয়া, আন্জুমান তানিয়া, ইকা আক্তার,শুভ্র দাস, মুহাম্মদ মোর্শেদ, জনি দাস, জয়নাল আবেদীন, কামরুল হাসান সুহান, ওপ্পেল, আবুদল হামিদ খসরু, আসরাফ সহ অনেকে বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও মামলায় এজহার ভুক্ত স্বামী, ভাসুর ও ভাগিনা হৃদয়কে অবিলম্বে গ্রেফতার পূর্বক বিচারের দাবিতে মানববন্ধনে শতাধিক মানুষ অংশ নেন। জেরিন আকতারের বাবা আমির আলমদার বলেন, আমার মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে স্বামী সহ তার পরিবারের লোকজন। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার পূর্বক ফাঁসি চাই। আমার মেয়ের হত্যার বিচার দেখে যাতে আর কেউ এ ধরনের কাজ করতে সাহস না পায়। আমি এব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। মামলার বাদী ও নিহত গৃহবধূ জেরিন আকতারের মামা উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা মো. রিদওয়ান বলেন, আমার ভাগিনিকে বরযাত্রী খাওয়ানো নিয়ে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রনার পাশাপাশি রমজানের পূর্বে প্রধান আসামি স্বামী দিদারুল আলমের বড়বোন হাসিনা বেগমের ছেলে হৃদয়ের বিয়ের জন্য আমার ভাগিনীর কাছ থেকে তার স্বামীকে না জানানোর শর্তে তার ব্যবহ্রত ৫ ভরি স্বর্ন চান হৃদয়কে বিয়ে করানোর জন্য। এ ব্যাপারটি জেরিন আকতার তার স্বামী সহ তার শাশুড়ীকে জানান। আমার ভাগিনী তাদের কথা মতো রাজি না হওয়ায় এবং স্বামী শাশুড়ীকে কেন জানিয়েছেন তা নিয়ে দিনের পর দিন তাদের মানসিক চাপ বাড়তে থাকে। পাশাপাশি বরযাত্রী সহ তাদের পরিবার থেকে যৌতুকের চাহিদার তালিকা আরো লম্বা হতে থাকে। অথচ তারা বিয়ের সময় বলেছিল তাদের কিছু লাগবে না। তাদের শুধু মেয়েকে পছন্দ করে গড়ে তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তারা পরিকল্পিত ভাবে আমার ভাগিনীকে হত্যা করে আত্নহত্যা বলে চালিয়ে দিতে অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। জানা যায়, উপজেলার ছনহরা ইউনিয়নের আলমদার পাড়ার মটপাড়া গ্রামের আমির আলমদারের বড় মেয়ে জেরিন আকতারে বিয়ে হয় একই উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের শেখ মোহাম্মদ পাড়ার মৃত সালামত আলী খানের দুবাই প্রবাসী ছেলে দিদারুল আলমের সাথে ২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারীর সময়ে। সেদিন ৩০ এপ্রিল জেরিন আকতারের শশুর বাড়ির ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা সন্ধ্যায় ঘরের জানালা দিয়ে দেখতে পান গৃহবধূ জেরিন আকতারের ঝুলন্ত লাশ। এসময় তারা চিৎকার চেচামেচি করলে আশপাশের লোকজন এসে দ্রুত রশিতে ঝুলানো অবস্থায় গৃহবধূ জেরিন আকতারকে নিচে নামান। এদিকে নিহত গৃহবধূর পরিবার সূত্রে জানা যায়, যেহেতু করোনাকালীন বিধিনিষেধের সময় তাদের বিয়ে হয়েছিল তখন কোন সামাজিক ভাবে অনুষ্ঠান করা হয়নি। তখন কথা ছিল পরবর্তী সময়ের যে কোন দিন বেয়াই ভাতা স্বরুপ বরপক্ষের লোকজনকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো হবে। এ নিয়ে তাদের মেয়েকে বিভিন্ন সময় শশুর বাড়ির লোকজন জ্বালাতন করতেন। ৬ এপ্রিল স্বামী দিদারুল আলম দুবাই থেকে দেশে আসলে সে নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। ১৭ মে স্বামী আবারো বিদেশে ফিরে যাওয়ার কথা। তাই তার আগেই সেই দাওয়াত খাওয়াতে চাপ সৃষ্টি করে গৃহবধূর পরিবারকে। তারা তাদের কথা মতো আগামী ১৪ মে তাদের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ার দিনক্ষণ ঠিক করেন। কিন্তু তার আগেই তাদের মেয়েকে মেরে ফেলার অভিযোগ। পটিয়া থানার ওসি প্রিটন সরকার বলেন, ঘটনার পর থেকেই আসামিরা পলাতক রয়েছে। পুলিশ তাদের গ্রেফতারে সর্তক আছেন। ইতোমধ্যে আসামীরা বিভিন্ন জায়গায় বদল করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। খুব শীগ্রই তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। উল্লেখ্য, গত ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের শেখ মোহাম্মদ পাড়ার শশুর বাড়িতে নিজ ঘর থেকে গলায় রশি পেঁচানো ঝুলন্ত অবস্থায় গৃহবধূ জেরিন আকতারের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর থেকেই নিহত গৃহবধূর প্রবাসী স্বামী দিদারুল আলম সহ পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছে। এঘটনায় নিহত গৃহবধূর মামা উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা মো. রিদওয়ান বাদী হয়ে ১ মে রাতে পটিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় নিহতের স্বামী দিদারুল আলম, ভাসুর আবু তৈয়ব ও ভাগিনা হৃদয়কে আসামী করা হয়। এছাড়াও আরো ৩-৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে মামলাটিতে।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.