রাজশাহীতে দেড় হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা

রাজশাহীতে এবার দেড় হাজার কোটি টাকার আমের বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গতবছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯০১ কোটি টাকা। কিন্তু বিক্রি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

৪ মে থেকে শুরু হয়েছে আম নামানো। তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। কিন্তু এবার আগেভাগে তারিখ ঘোষণা করে দেওয়ায় কোন আমচাষি আম নামাতে চাচ্ছেন না। বেশিরভাগ গাছেরই আম পরিপক্ব হয়নি।

বৃহস্পতিবার (৪ মে) ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার শুরু হলেও আগের দিন বুধবারই বাঘা উপজেলার এক বাগানের ৩০০ কেজি গুটিআম নামানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই আম ইতালি পাঠানো হয়েছে।

রাজশাহীতে দেড় হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা

গুটি জাতের এই আমের নাম ‘চোরুষা’। বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের আমচাষি শফিকুল ইসলামের বাগান থেকে স্থানীয় ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান বৃহস্পতিবার কার্গো বিমানে করে এই আম ইতালি পাঠায়। বাঘা থেকেই এবার ৩০০ কোটি টাকার আম রফতানি করা হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, এর আগে এক মৌসুমে আমের ব্যবসা ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে থেকেছে। গত বছর এক হাজার কোটি টাকার মতো আমের বাণিজ্য হয়। এটি এবার দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে এমনই প্রত্যাশা কৃষি বিভাগের। আর আমের জিআই স্বীকৃতির আম বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজশাহী জেলায় গত মৌসুমে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। এটি চলতি মৌসুমে বেড়ে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টরে উন্নীত হয়েছে। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে দুই লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাজশাহীতে দেড় হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার নয়টি উপজেলা ও মহানগরীর দু’টি থানা এলাকায় আমের চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় জেলার বাঘা উপজেলায়। এবার বাঘায় আট হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এই উপজেলা থেকেই ১ লাখ ১৩ হাজার ১৬০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে।

এছাড়া জেলার চারঘাটে ৪ হাজার ৯০৩ হেক্টর জমিতে ৬৪ হাজার ৭১১ মেট্রিক টন, পুঠিয়ায় ১ হাজার ৫৪৭ হেক্টর জমিতে ২০ হাজার ৪১০ মেট্রিক টন, গোদাগাড়ীতে এক হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে ১৬ হাজার ১১০ মেট্রিক টন, পবায় ৯২০ হেক্টর জমিতে ১২ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন, দুর্গাপুরে ৮৫০ হেক্টর জমিতে ১১ হাজার ২১০ মেট্রিক টন, বাগমারায় ৫৭০ হেক্টর জমিতে ৭ হাজার ৫২৫ মেট্রিক টন, মোহনপুরে ৪১১ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ৪৩০ মেট্রিক টন, তানোরে ৪২৫ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন, মহানগরের মতিহারে ৯০ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ১৮৪ মেট্রিক টন এবং বোয়ালিয়া থানা এলাকায় ৭৩ হেক্টর জমিতে ৯৬০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এবার জেলার জাত ভিত্তিক তালিকাও তৈরি করেছে কৃষি বিভাগ। সেই তালিকায় দেখা গেছে, লক্ষণভোগ আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ধরা হয়েছে ১৩ মেট্রিক টন আম। উৎপাদন ধরা হয়েছে ৮৪ হাজার ৯৫৩ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ধরা হয়েছে ৩৮২ কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজার ৫০ টাকা। একই ভাবে গোপালভোগের ধরা হয়েছে ৮৮৩ হেক্টর জমি। উৎপাদন ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৪৮৯ মেট্রিক টন। বাজার মূল্য ৫৫ কোটি ১৪ লাখ ৭১ হাজার ৫২০ টাকা। খিরসাপাতের আবাদ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমি। উৎপাদন ৩৬ হাজার ১৮৯ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ১৮৮ কোটি ১৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪০০ টাকা। ল্যাংড়ার আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন ২১ হাজার ৪৫৫ মেট্রিক টন। বাজার মূল্য ১১৮ কোটি ৬০ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। ফজলীর ২ হাজার ৪৩৩ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। উৎপাদন ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন।

রাজশাহীতে দেড় হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা

বাজার মূল্য ৩০৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৭ হাজার ২৫০ টাকা। আশ্বিনা আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮১৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হবে ২৭ হাজার ২৭৩ মেট্রিক টন। বাজার মূল্য ২৩১ কোটি ৮২ লাখ ২৬ হাজার ২৫০ টাকা। আ¤্রপালির আবাদ হয়েছে ১ হাজার ২৭১ হাজার জমিতে। উৎপাদন হবে ১৫ হাজার ৮১৪ মেট্রিক টন। বাজার মূল্য ধরা হয়েছে ১১০ কোটি ৬৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। গুটি আমের আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৯১৭ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন ২১ হাজার ৮৯৮ মেট্রিক টন। বাজার মূল্য ধরা হয়েছে ১০৯ কোটি ৪৮ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা।

এছাড়াও বারি ১১, বারি ৪, রাণীপছন্দ, কাটিমণ, ব্যানানা ম্যাংগো, গৌড়মতি, মিয়াজানি ও সূর্যডিম এ জাতের আম ৩০৩ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। উৎপাদন ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩৪৪ মেট্রিক টন। বাজার মূল্য ধরা হয়েছে ২৬১ কোটি ২৯ হাজার ৩৫০ টাকা।

তবে আম নামানোর তারিখ ঘোষণা করা হলেও এখন বাজারে আসতে শুরু করেনি আম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিপূর্ণ ভাবে আম না পাকলে আম নামানো সম্ভব না। এজন্য বাজারে আম পাওয়া যাচ্ছে না।

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, কৃষি বিভাগ, ফল গবেষক এবং চাষিদের নিয়ে আলোচনা করেই আম পাড়ার দিন ঠিক করা হয়েছে। ৪ মে থেকে আম পাড়া শুরু হলেও কেবল পরিপক্ব আমই নামানো যাবে। যে চাষির আম পাকেনি, তিনি নামাবেন না। যখন পাকবে তখন নামাবেন।

রাজশাহীতে দেড় হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা

জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, উন্নতজাতের অন্য আমগুলোর মধ্যে লক্ষণভোগ বা লখনা ও রাণীপছন্দ ২০ মে এবং হিমসাগর বা খিরসাপাত ২৫ মে থেকে পাড়া যাবে। এছাড়া ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি ও ১০ জুন আম্রপালি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ পাড়া যাবে। আর ১০ জুলাই থেকে গৌড়মতি আম এবং ২০ আগস্ট ইলামতি আম আসবে বাজারে।

এছাড়া বারোমাসি হিসেবে পরিচিত কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছরই সংগ্রহ করা যাবে। তবে নির্ধারিত সময়ের আগে আম বাজারে পেলে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। তবে কারও বাগানে নির্ধারিত সময়ের আগেই আম পাকলে তা প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে এবার আমের খুবই ভালো ফলন আছে। গত বছর আমের মণপ্রতি তিন হাজার ২০০ থেকে চার হাজার টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। এবারো চাষিরা ভালো দাম পাবেন এমনটাই আশা করছি। আর মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য রোধে গণমাধ্যম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সবকিছু অব্যাহত থাকলে কৃষকরাও ন্যায্য দাম পাবেন।

 

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.