পটিয়ায় চলছে জমজমাট জুয়ার আসর

পটিয়া প্রতিনিধিঃ

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্পটে দিন রাত সমান তালে চলছে জমজমাট জুয়ার আসর। রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় থাকা একাধিক সিন্ডিকেট উপজেলার বেশ কয়েকটি স্পটে অবৈধ এ জুয়ার আসর চালাচ্ছেন নির্বিঘ্নে। শক্তিশালী এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিদিন হাত বদল হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ জুয়ার আসরের পাশাপাশি আশে পাশের বিভিন্ন স্পটে চলছে মদ, গাজা, ইয়াবা ও মাটির রমরমা কারবার। বিশেষ করে রাতের বেলায় শোভনদন্ডী ভিত্তিক একটি সিন্ডিকেটের বিচরণ চোখে পড়ার মতো। এই সিন্ডিকেট গ্রামের সামাজিক বিরোধ ,স্বামী স্ত্রীর ঝগড়া,মামলা মোকদ্দমা,জেলেদের বিরোধ , জায়গা জমির বিরোধ,ভাই ভাইয়ে বিরোধেও জল ঘোলা করে ফাইদা লুটে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের থানা মহিরা এলাকায় কালা মিয়া নামের এক লোকের ঘরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট জমজমাট জুয়ার আসর বসিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এখানে আশে পাশের উপজেলা থেকে জুয়ারিরা এসে দিনরাত সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছে জুয়ার আসর। এখানেই শেষ নয়, শক্তিশালী এ সিন্ডিকেটের রয়েছে বেশ কিছু দৈনিক বেতনভুক্ত কমর্চারীও। তারা আশপাশের অন্তত ৭-৮ টি পয়েন্টে চেক পোস্টের মতো বসে দায়িত্ব পালন করে। যাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় প্রবেশ করলেই সাথে সাথে তাদেরকে মোবাইল ফোনে জানিয়ে দিতে পারে। আর এতেই জুয়ারিরা সটকে পড়ে। পুলিশ বেশ কয়েক বার অভিযান পরিচালনা করলেও থেমে নেই তাদের কার্যক্রম।
কালারপুল পুলিশ ফাঁড়ির নিকটে থানা মহিরা এলাকায় দীর্ঘ দিন থেকে দিন-রাত রমরমা জুয়া ও মাদকের আসর চলে আসছে। স্হানীয়দের অভিযোগ, উপর মহলকে ম্যানেজ করেই চালাচ্ছে এ অবৈধ কর্মকাণ্ড।
স্থানীয় সূত্রটি আরো জানায়, বিগত কয়েক বছর থেকে কুসুমপুরা ইউনিয়নের থানা মহিরা এলাকার খাল পাড়ের সরকারি বরাদ্দ পাওয়া কালা মিয়ার টিনসিটের বাড়িতে দৈনিক ১ হাজার টাকা ভাড়ার ভিত্তিতে এই জুয়ার আসরটি চলছে। রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহল ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে স্থানীয় আব্বাস, মান্নান, শফি, সাত্তার সহ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট উপজেলার সবচেয়ে বড় এ জুয়ার আসরটি চালাচ্ছে।
এছাড়াও বড়লিয়া ইউনিয়নের মেলঘর, ওকন্যারা, বেলখাইন, আশিয়া ইউনিয়নের রশিদপুর, পূর্ব আশিয়া কেরিঞ্জা খাল পাড়, বাথুয়া, মল্লপাড়া, মির্জাপাড়া, দক্ষিন আশিয়া, বাংলা বাজার, দিঘির পাড়। কাশিয়াইশ ইউনিয়নের নয়াহাট, বাঞ্চারাম পুল, বুধপুরা বাজার, কালিগঞ্জ, বাকখাইন, পিঙ্গলা। কোলাগাঁও ইউনিয়নের নলান্ধা, কালারপুল, দিঘির পাড়, শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকা। হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের হুলাইন, নিমতল দরগাহ, বাদামতল, পাচুরিয়া, মিলিটারি পুল। পৌর সদরের খাদ্য গুদাম এলাকা, তালতলা চৌকি, বাস স্টেশন, গোবিন্দরখীল, রেল স্টেশন, বৈলতলী সড়ক। শোভনদন্ডী ইইনিয়নের হাতিয়ারঘোনা বড়ুয়া পাড়া সংযোগ সড়কে,হিলচিয়া হিন্দু পাড়া। জুয়াড়িরা হিলচিয়া নুরুল আলমের বাগান থেকে প্রায় ৭০/৮০ টি কলা গাছের কলার ছাড়া সহ বিভিন্ন ফলফলাদি ও পুকুর থেকে মাছ নিয়ে যায়। এছাড়া ছনহরা, ভাটিখাইন, কচুয়াই, খরনা, কেলিশহর, ধলঘাট, দক্ষিণ ভূর্ষি সহ উপজেলার সব স্থানে প্রকাশ্যে ও গোপনে চলছে জুয়ার আসর। বড়লিয়া আশিয়া ইউনিয়নের মাঝামাঝি অংশে খালের পাড়ে কয়েকটি স্পটে চলে আসছে জুয়ার আসর।
এদিকে, এসব জুয়ার আসরে এলাকার উঠতি যুবক ও আলোচিত জুয়াড়িরা এখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। দুর-দূরান্ত থেকে আসা জুয়াড়িরা এখানে লাখ লাখ টাকার হাত বদল করছে এবং প্রতিদিন এ চক্রের ফাঁদে পড়ে অনেকেই টাকা খুইয়ে হচ্ছেন নিঃস্ব।
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা একটি সংঘবদ্ধ চক্র মিলে সকাল থেকে সারারাত পর্যন্ত চালাচ্ছে নিষিদ্ধ জুয়ার আসর। এ জুয়াকে কেন্দ্র করে স্পটে নেশা গ্রহণ সমান তালে চলায় জুয়া ও মাদকের মোহে পড়ে অনেকে বসছেন পথে। চলমান জুয়া ও মাদকের আসর নিয়ে এ অঞ্চলের অভিভাবক ও তাদের পরিবার উদ্ধিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
সর্বশেষ গত ২০ মে গভীর রাতে জুয়ার আসর থেকে তিন জুয়াড়িকে আটক করেছে পটিয়া থানা পুলিশ। উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের থানা মহিরা এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে থানা মহিরা এলাকার গরু লুটা খালের পাড়ে সংঘবদ্ধ জুয়াড়ি শাহ আলমের পরিত্যক্ত একটি ঘর থেকে জুয়া খেলা অবস্থায় এলাকায় চিহ্নিত এ তিন জুয়াড়িকে আটক করে। এসময় তাদের কাছ থেকে জুয়ার সরাঞ্জাম ও নগদ ৫ হাজার ৮শ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। আটককৃত জুয়াড়িরা হলেন, মোঃ নুরুল আকতার (৪২), সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল ছত্তার (৫৫) ও মোঃ শাহ আলম (৩৬)। তারা সবাই একই এলাকার বাসিন্দা। তাদের বিরুদ্ধে পটিয়া থানায় জুয়া আইনে মামলা দায়ের করে সেদিন দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। পরদিন তারা জামিনে বেরিয়ে আসে।
এর আগে, গত ১৭ মে রাতে পটিয়া পৌরসদরের দফাদার কলোনির রেলওয়ের শফি সওদাগরের রিকশা গ্যারেজে থেকে দুই জন জুয়াড়িকে আটক করা হয়েছিল। এ সময় তাদের কাছ থেকে জুয়ার কার্ড, নগদ টাকা ও তিনটি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হলেন, পটিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নাজমুল হোসেনের পুত্র মোহাম্মদ আরিফ (৩৭), বোয়ালখালী উপজেলার চরখিজিরপুর গ্রামের সাতদরিয়া পাড়ার আলতাজ মিয়ার পুত্র মোহাম্মদ মোরশেদ (৩৩) ও পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়াার্ডের মোহাম্মদ সেলিমের পুত্র মো. সোহেল (২৮)। তারা উভয়ে পরদিন জামিনে বেরিয়ে আসে।
আরো জানা গেছে, জুয়াড়ি চক্রটি স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধি পুলিশ প্রশাসনের সাথে সখ্যতা রেখে চলেছেন বলে অভিযোগ আছে। যার কারণে ওই চক্রটি অনেকটা বেপরোয়া হয়েই এ অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন বিকেল হলেই মোটর সাইকেল, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন বাহনে চলে আসে জুয়াড়িরা। জুয়ার নেশায় মত্ত হয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে এই আসরে। কয়েকটি মহলকে ম্যানেজ করে অসাধু চক্রটি দীর্ঘদিন জুয়ার কারবার চালিয়ে যাওয়ায় এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ী ও উঠতি বয়সের যুবকদের মধ্যে নানা প্রতিকূল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ খোয়াচ্ছে, কেউ সামান্য লাভবান হচ্ছে। নেশায় মত্ত থাকায় খোয়ানো পার্টি আঁচ করতে পারছে না। তবে বেশির ভাগ সদস্য জুয়া খেলতে এসে নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরছে।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.