ঘুসের “অডিও” ফাঁস হওয়ায় পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মঈনুলের আরেক নাটক
সাতকানিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়
সৈয়দ আককাস উদদীন
নিজের অধীনস্থ পরিবার পরিকল্পনা সহকারীদের কাছ থেকে ঘুস নেওয়ার কথা জানাজানি হওয়ায় এবার আরেক কাণ্ড ঘটিয়ে বসেছেন সাতকানিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এম এ এইচ মঈনুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার এক পরিবার পরিকল্পনা সহকারীকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে ঘুস নেননি বলে জোরপূর্বক অঙ্গীকারপত্র নেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে ব্যর্থ হয়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার ভয় দেখিয়ে সাদা কাগজে সাক্ষর নেন।
হাছিনা ইয়াছমিন আক্তার নামে ওই পরিবার পরিকল্পনা সহকারী অভিযোগ করেন, গত ২৩ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ২০ দিনের চিকিৎসা ছুটি নেন তিনি। এই ২০ দিনের ছুটির জন্য ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। নিরুপায় হয়ে তিনি তাৎক্ষণিক নগদে ১০ হাজার টাকা, পরে তার দেওয়া বিকাশ নম্বরে আরও ৫ হাজার টাকা মোট ১৫ হাজার টাকা নেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে প.প. কর্মকর্তা মঈনুলের তাকে জরুরি ভিত্তিতে তলব করেন। বৃহস্পতিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার কার্যালয়ে গেলে ধমকের সুরে তিনি বলেন, ‘ আমি যে তোমার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়েছি— এই কথা অন্য জনকে বলেছ কেন? এসময় তিনি শোকজ করে চাকরি খাওয়ার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক কোন টাকা নেননি মর্মে অঙ্গীকার নামা নিতে সাদা কাগজে সাক্ষর আদায় করেন। পুরানগড়ের আনিসুর রহমান ইমন মঈনুলকে টাকা দেওয়ার জন্য তাকে জোর করেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে সাতকানিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এম এ এইচ মঈনুল ইসলাম ও তার সহযোগী আনিসুর রহমান ইমনের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অধিদপ্তরের পরিচালকের দ্বারস্থ হয়েছেন তারা।
মঈনুল ছুটি মন্জুরের বিষয়ে সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের পরিদর্শিকা হাছিনা ইয়াছমিন এক ভিডিও বার্তায় আরো বলেন-আমি ছুটির বিনিময়ে মঈনুল স্যারের ব্যবহৃত নিজের গ্রামীন বিকাশ নাম্বারে একবার ১০,০০০এবং আরেকবার ৫হাজার দিয়েছি তবে স্যারের ডিমান্ড ছিল ২০,০০০।
আর আমি যখন ৫হাজার বাকি রাখছি ওই টাকার জন্য পুরানগড়ের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক আনিসুর রহমান ইমন আমাকে চাপ প্রয়োগ করে বলেন- মঈনুল স্যারকে খুশি রাখার জন্য যে কোন কাজ করতে হবে।
নইলে এখানে চাকরী করা সম্ভবনা, এদিকে ভুক্তভোগী পরিদর্শিকা আরো বলেন, আমার থেকে যে স্যারে টাকা নিয়েছে তা ফাঁস হওয়ায় আজকে মঈনুল স্যার আমাকে ডেকে চাপ প্রয়োগ করে সাদা কাগজে সাক্ষর নেয়।
এদিকে ঢেমশা ইউনিয়নের পরিবার কল্যান সহকারী বয়স্ক দিলুয়ারা বেগমও সাতকানিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মঈনুল ইসলামের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করে বলেন-মঈনুল সাহেবকে যখন আমি টাকা দিইনি পরে একবার আমার ব্যবহৃত রেজিষ্টার জব্দ করে নিয়ে যান, পরে আমার থেকে ৫হাজার টাকা নিয়ে রেজিষ্টার ফেরত দেন।
এবং আমাকে প্রতিমাসে ৫০০০হাজার টাকা দাবী করে বসেন, তিনি আরো বলেন আমি মঈনুলের এসব অপকর্মের উপর আমার খুব ক্ষোভ, আমি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানাবো মঈনুলের কারণে আমাদের ডিপার্টমেন্টর সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে।
এদিকে কর্তা মঈনুল ইসলামের অধীনস্থ কাঞ্চনা ইউনিয়নের আরেক পরিবার কল্যান সহকারী পারমিতা দাশ ও সরাসরি আরেক ভিডিও বার্তায় প্রতিবেদককে জানান- মঈনুল ইসলাম স্যারের এসব অপকর্মের কাহিনী আমি আমার সহকর্মীদের থেকে অহরহ শুনে আসছি সেটা সঠিক তবুও অদৃশ্য কারণে তিনি পার পেয়ে যান আমি এই বিষয়গুলোর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এবং ভবিস্যতে যেন এসবের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
একই ভাবে ভিডিও বার্তাও লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন সাতকানিয়ার নলুয়ার আরেক পরিবার কল্যান সহকারি নাজনীন আক্তার -তিনি বলেন আমার সার্ভিস বুকের জয়েনিং তারিখ ভুল হওয়ার কারণে পরিবার পরিকল্পনা সহকারি একাউন্টেন্ট মর্জিনা আপাকে ৫০০০ টাকা এবং সোনালী ব্যাংকের লোন বাবদ ৩হাজার,চিত্তবিনোদন ভাতার জন্য ২হাজার,টাইম স্কেল এরিয়া বিলের জন্য ৬০০০টাকা প্রদান করি।
এদিকে কাঞ্চনা ইউনিয়নের আরেকজন পরিবার কল্যান সহকারী ঝর্না মল্লিকও প্রতিবেদককে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় বলেন -আমি নৈশপ্রহরী অভি চক্রবর্ত্তীর মাধ্যমে ৩হাজার টাকা মঈনুল সাহেবকে দেন বলেও অভিযোগ করেন।
অপরদিকে বাজালি ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক সাদ্দাম হোসেনও একই রকম অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক বরাবর গত ২৫শে মে ২০২৩ একটি অভিযোগ করেন,পরে অভিযোগটি কর্তৃপক্ষ তদন্তের জন্য গত ২৮শে মে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরারবর প্রেরণ করেন।
এদিকে উপরোক্ত অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত সাতকানিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মঈনুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার বিকালে কল দেয়া হলে তিনি বলেন-আমি এসবের বিষয়ে বক্তব্য দিতে পারবনা আপনি চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালকের সাথে কথা বলেন,পরে আপনি কি টাকা নিয়েছেন? প্রতিনিয়ত নেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নেও তিনি জেলাকে ইঙ্গিত দেন, পাশাপাশি অভিযোগে ওঠে আসা সাতকানিয়া থেকে প্রতিমাসে জেলার উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদকে কি মাঠ থেকে মাশোহারা আদায় করে পাঠানো হয়?এমন প্রশ্নের জবাবেও তিনি জেলার সাথে কথা বলেন বলে লাইন কেটে দেন।
এদিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ইলিয়াস চৌধুরী বলেন-আসলে এই ডিপার্টমেন্টটা আমি দেখিনা তবুও আপনার উত্থাপিত অভিযোগগুলি খুবই স্পর্শকাতর যেহেতু আপনার কাছে টাকা আদায়ের বিকাশ স্ক্রীনশট এবং ডকুমেন্টস ও ভিকটিমের ভিডিও বার্তা আছে সব আমাকে হোয়াটসঅ্যাপ করেন আমি এখনি বলে দিচ্ছি বিষয়টা দেখার জন্য।
অপরদিকে চট্টগ্রাম জেলার পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদকে বেশ কয়েকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক গোলাম মুহাম্মদ আজম চট্টগ্রাম সংবাদকে বলেন-কী বলেন এরকম যদি গুরুতর অভিযোগ ওঠে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে আপনি আপনার হাতে থাকা হাছিনা ইয়াছমিন আর মঈনুল ইসলামের বিকাশের লেনদেনের ডকুমেন্টস এবং লিখিত ডকুমেন্টস ও ভিডিও বার্তা যা আছে আমাকে হোয়াটসঅ্যাপ করেন।
বিষয়টা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি, পরে প্রতিবেদক বিভাগীয় পরিচালক গোলাম মুহাম্মদ আজমের ব্যহৃত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে ছুটি মন্জুরের বিনিময়ে আর্থিক লেনদেনের তথ্য এবং ভুক্তভোগী মাঠকর্মীর ভিডিও বক্তব্যও সংবাদ প্রকাশের জন্য মাঠকর্মী থেকে নেয়া লিখিত অভিযোগসহ মঈনুলের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো আবেদনখানা হোয়াটসঅ্যাপ করা হয়।
পরে সর্বশেষ কর্তা মঈনুল ইসলামের গতিবিধি ও আচরণ সম্পর্কে জানতে কল করা হয় সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন-ওনি (মঈনুল)আমার অধীনের না তার ক্যাডার আর আমার ক্যাডার সম্পূর্ণ ভিন্ন তবুও উপরের নির্দেশে জয়েন্টলি ওয়ার্ক করা লাগে এতটুকু।
তবুও তার বিষয়ে আপনি ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলতে পারেন।