মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় কারাগারে গেল ছাত্রলীগ নেতা

আরো ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার, সাময়িক বহিষ্কার করেছে পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ

পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:

চট্রগ্রামের পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল চোরচক্রের মূলহোতা আরিফুল ইসলামকে (২৩) এক দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রবিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কর্নফুলী থানার ওসি দুলাল মাহমুদ।

গত বৃহস্পতিবার রাতে পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের গৈড়লা এলাকা থেকে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে আটক করেছেন কর্ণফুলি থানা পুলিশ।

তার দেয়া তথ্যমতে পটিয়ার জঙ্গল খাইন ইউনিয়নের দিঘির পাড় এলাকা থেকে চুরি হওয়া একটি ডিসকাভার ১২৫ সিসি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছিল পুলিশ। বৃহস্পতিবার কর্ণফুলি থানায় মোটরসাইকেল চুরির মামলাটি দায়ের হওয়ার পুলিশ।

ছাত্রলীগ নেতা ও মোটরসাইকেল চোর চক্রের মুল হোতা আরিফুল ইসলামকে শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড চাই পুলিশ। আদালত ১ দিনের রিমান্ড মন্জুর করে। শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) তাকে রিমান্ডে আনে কর্ণফুলি থানা পুলিশ। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে শনিবার রাতে তার দেয়া তথ্য মতে পটিয়ার আমজুর হাট এলাকার একটি পরিত্যক্ত জায়গা থেকে এফার্সি আরটিআর ১৬০ সিসির আরো একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে কর্নফুলি থানা পুলিশ। রিমান্ড শেষে রবিবার দুপুরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এক দিনের রিমান্ডে আরিফুল ইসলাম বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন পুলিশকে। এ সিন্ডিকেটের সদস্যদের ধরতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তবে তদন্তের সার্থে রিমান্ডের তথ্য গুলো জানাতে সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা কর্নফুলী থানার উপ-পরিদর্শক রেজাউল করিম।

মোটরসাইকেল চোর চক্রের মুল হোতা আরিফুল ইসলাম পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের গৈড়লা এলাকার মুত জহির আহমদের ছেলে। সে পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং, মারামারি, জাযগা জমি দখল, মদ গাঁজা, ইয়াবা সেবনসহ বিকিকিনির নানা অপরাধ মুলক কাজ সংগঠিত করে এলাকায় রাজত্ব কায়েম করতেন।
কয়েক বছর ধরে রপ্ত করেছে চুরির কৌশল। মোটরসাইকেল চুরিতে তার দক্ষতায় বিস্মিত পুলিশও। লাগে মাত্র কয়েক সেকেন্ড। প্রতিটি চুরি বাবদ পায় ১০-১৫ হাজার টাকা দেন চক্রটির সদস্যদের হাতে। চুরি করা মোটরসাইকেলে রং আর নম্বর পাল্টে সেটি বিক্রি করে চক্রের অন্য সদস্যরা। তবে এবার শেষরক্ষা হয়নি চোর চক্রের মুল হোতা পটিয়ার আরিফুল ইসলামের। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ধরা পড়ে পুলিশের হাতে।

এদিকে, রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত শাকিল ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলামকে
সংগঠনের নীতি-আদর্শ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিস্কার করে স্থায়ী বহিষ্কার করার জন্য জেলা ছাত্রলীগ বরাবর সুপারিশ করেছেন ।

 

আরিফুল ইসলাম মোটরসাইকেল চোর চক্রের মুল হোতা। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় দিনভর বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল কিংবা হাসপাতালের পার্কিং ঘুরে পছন্দের মোটরসাইকেল খুঁজে বের করাই তার কাজ। বয়স কম, দেখতেও সহজ সরল প্রকৃতির মতো তাই তাকে সন্দেহ করতো না কেউ। এ দুই সুবিধা কাজে লাগিয়ে পার্কিংয়ে থাকা সবচেয়ে দামি মোটরসাইকেলটি নিয়ে মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই হাওয়া হয়ে যেতো কিশোর চোর আরিফুল ইসলাম। প্রতিদিনই কোনো না কোনো পার্কিং থেকে মোটরসাইকেল চুরি করেছে সে। তার সহযোগীরাও সময় সুযোগ বুঝে বাইকগুলো চুরি করতো। খুব কম সময়ের মধ্যে রং ও নম্বর পরিবর্তনেও তারা বেশ দক্ষ। চক্রটির অন্যান্য সদস্যরা চুরি করা মোটরসাইকেল এনে তুলে দেয় চক্রের মূল হোতা আরিফুল ইসলামের হাতে। পটিয়ায় তার পরিচিত গ্যারেজে কয়েক মিনিটে রং, চেসিস, নম্বর প্লেট পাল্টে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হতো। এলাকার উঠতি বয়সের কিশোরদের দিয়ে মোটরসাইকেল চুরির জন্য দক্ষ করে তোলার কাজটিও করেন তিনি।

অপরদিকে, পটিয়া ও কর্ণফুলী থানা পুলিশের যৌথ টিম কয়েকদিন আগে মোটরসাইকেল চোর চক্রের মুল হোতা আরিফুল ইসলামকে ধরতে তার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় তাকে পাওয়া না গেলেও বেশ কয়েকটি হেলমেট উদ্ধার করে পুলিশ।

পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত শাকিল বলেন, ছাত্রলীগ একটি শৃঙ্খল ছাত্র সংগঠন। ছাত্রলীগের পদ পদবীতে থেকে যদি কেউ দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করে সেই দায়ভার ছাত্রলীগ নিবে না। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র মোতাবেক দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপের দায়ে আমরা তাকে বহিষ্কার করেছি।

এব্যাপারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম বোরহান উদ্দিন বলেন, পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আরিফুল ইসলাম নামের এক সহ-সভাপতি দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত থাকার অপরাধে তাকে বহিষ্কার করতে উপজেলা ছাত্রলীগের নীতিনির্ধারকদের বলে দেয়া হয়েছে। সে মোতাবেক রবিবার দুপুরে এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রলীগে কোন অপরাধীদের ঠাঁই হবে না।

কর্ণফুলি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ বলেন, শুক্রবার বিকেলে তাকে আদালতে পাঠিয়ে ৫ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ১ দিনের রিমান্ড মন্জুর করে। শনিবার তাকে রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। শনিবার রাতে তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে পটিয়ার আমজুর হাট এলাকার একটি পরিত্যক্ত জায়গা থেকে আরো একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

 

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.