পটিয়া প্রতিনিধি
পটিয়ায় জমজমাট লুডু খেলার নামে জুয়ার আসর। এক সময়ের কাগজের তৈরি লুডু পেপারের পরির্বতে এখন মোবাইলে মোবাইলে চলছে জুয়ার আসর। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অবাধে চলছে এই লুডু খেলার নামে ডিজিটাল জুয়া। আর এই ডিজিটাল জুয়া খেলা বন্ধে কোন উদ্যোগ নেই প্রশাসনের। জুয়ারীরা বাজি ধরে মুখে মুখে, অথবা সংকেতে। চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় মোবাইলে লুডু খেলা এখন জুয়ায় পরিণত হয়েছে। খুব সহজেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে এই ডিজিটাল জুয়া।
এতে উঠতি বয়সের ছেলেরাই কর্মহীন অলস সময় কাটানোর মধ্য দিয়ে অধিক হারে এই জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন। ছাত্র, তরুণ, যুবক এমনকি কিশোর বয়সিরাও মোবাইল ফোনে লুডু অ্যাপের এই জুয়া খেলায় মত্ত। পাশাপাশি মোবাইলে ফ্রি ফায়ার গেমস কেন্দ্রিক জুয়া খেলার প্রবণতাও লক্ষ্য করা গেছে বেশ কিছু এলাকায়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ছাত্র ও যুবকরাই বেশি মেতে উঠেছে এই ডিজিটাল লুডু জুয়ায়। উপজেলার প্রায় সব পাড়া-মহল্লা, চায়ের দোকান, পথে-ঘাটে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলেও চলছে লুডুর জমজমাট জুয়ার আসর। অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেটে লুডু সফটওয়্যার ডাউনলোড করে রাত-দিন যেখানে সেখানে ৪-৮ জন জুয়ারি একটি মোবাইলে লুডু খেলছে। উপজেলা সদরের বিভিন্ন ফুটপাতে,সিএনজি স্টেশন, বাস স্টেশন, বিভিন্ন ভবনের বারান্দায়, দোকানের ভিতর দিনরাত চলছে এই লুডু বাজি। এছাড়া পৌর এলাকার বিভিন্ন চায়ের দোকান ও রেস্টুরেন্টে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত এই খেলায় মত্ত থাকে বেশিরভাগ কিশোর, যুবক, স্কুল ছাত্র, এমনকি বয়স্করাও। এসব জুয়াড়ির মধ্যে উল্লেখযোগ্য রিকশা, ভ্যান, অটো, ট্রলি, সিএনজি, ক্ষেতখামারে কাজ করা শ্রমিক, দোকান কর্মচারী, বেকার যুবক এবং স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
একাধিক সূত্র জানা যায়, প্রতিদিন শুধু পৌরসভার ভিতরেই লাখ লাখ টাকার মোবাইল লুডুতে জুয়া খেলা হয়। সম্প্রতি সময়ে অ্যান্ড্রয়েড মুঠোফোন দিয়ে লুডু খেলা (জুয়া) ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চারজনের সাথে আরও দু-চারজন পরামর্শকসহ লুডু দিয়ে চলছে জুয়া খেলা।
জানা যায়, স্মার্টফোনে ‘লুডু কিংথ নামে একটি অ্যাপ ইনস্টল করে সর্বোচ্চ আটজন মিলে এ খেলা খেলতে পারেন। অনলাইন ও অফলাইনে এই খেলা চলছে। তবে অফলাইনে একসঙ্গে চারজনের খেলার প্রবণতা বেশি। চারজন মিলে খেললে একটি গেম শেষ হতে সময় লাগে প্রায় ৩০ মিনিট। প্রতি গেমে বাজি ধরা হয় ৫০০-১০০০ টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ আরও বেশি হয়।
পটিয়া পৌর সদরের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, তার নিজের পরিবারের দুইজন এই লুডু বাজিতে আসক্ত হয়েছে। এ কারণে পরিবারে প্রতিদিন ঝগড়াঝাঁটি লেগেই আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লুডু বাজিতে আসক্ত এক যুবক বলেন, একদিন আমার এক বন্ধুর সাথে শখ করে ৫ শত টাকার বাজি ধরেছিলাম। কিন্তু সেই টাকার লোভ পেয়ে বসেছে আমাকে। এরপর থেকেই এই খেলাটি নেশায় পরিনত হয়েছে।
এদিকে, মোবাইল ফোনে এই জুয়া খেলা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বহু পরিবার। এতে আসক্ত হয়ে জুয়ার টাকা জোগাড় করতে বিপদগামী হয়ে পড়ছে তরুণ ও কিশোররা। মোবাইলের এই লুডু জুয়াকে কেন্দ্র করে পটিয়া বাস স্টেশন, রেল স্টেশন, পোস্ট অফিস মোড়, পোস্ট অফিস মোড় ও উপজেলা অফিস সংলগ্ন প্রাইভেট কার-মাইক্রো-হাইয়েস স্টেশন, তালতলা চৌকি, থানার মোড়, ডাক বাংলো মোড়, ওয়াপদা রোড, স্টেশন রোড, ক্লাব রোড, বৈলতলি সড়ক, কলেজ রোড এবং ইউনিয়ন পর্যায়েসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। তারা জুয়ার টাকা জোগাড় করতে নানা অপকর্মেও জড়িয়ে পড়ছে।
পটিয়ার সচেতন মহল মনে করছেন, এই ডিজিটাল জুয়া বন্ধে এখন পর্যন্ত কোনো প্রশাসনিক তৎপরতা না থাকায় এর প্রবণতা যেমন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি কিশোর-তরুণ ও ছাত্রদের নানা অপকর্মে জড়ানোর ঝুঁকিতে ফেলছে। তবে মোবাইল জুয়াড়িদের শনাক্ত করা কঠিন বলে জানিয়েছেন পুলিশ। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের নজরদারির প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
শিক্ষাবিদ প্রফেসর আবু জাফর চেীধুরী বলেন, টাকা দিয়ে লুডু খেলার কারনে উপজেলার আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে। বিশেষ করে লুডু খেলায় আসক্ত লোকেরা খেলার টাকা যোগাড় করতে গিয়ে চুরিসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এসব অপরাধ বন্ধ করতে পুলিশের পাশাপাশি সমাজের সবাইকে এগেিয়ে আসতে হবে।
পটিয়া থানার ওসি প্রিটন সরকার বলেন, এ ধরনের জুয়া খেলায় হাতেনাতে কাউকে ধরতে পারলে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে এটি বন্ধে পারিবারিকভাবে সচেতনতা বাড়াতে হবে। না হয় পুলিশের পক্ষে একা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। ইতিমধ্যে আমরা প্রতিটি ইউনিয়নে বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে মাদক, জুয়াসহ নানা সামাজিক অপরাধ মুলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে নিয়ে প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছি।
আ ন ম সেলিম, পটিয়া, চট্টগ্রাম