পটিয়ায় শ্রমিক লীগের কমিটিতে হত্যা মামলার আসামিরাও

পটিয়া প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সদ্য ঘোষিত কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন হত্যা ও অস্ত্র মামলার আসামীরাও। চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও তুমুল সমালোচিত একাধিক হত্যা ও অস্ত্র মামলার আসামি রমজান আলী পেয়েছেন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদ ও আবদুল মান্নান মান্না পেয়েছেন সহ দপ্তর সম্পাদক পদ। এটা সংগঠনের জন্য কলঙ্ক ও লজ্জার। এমন হলে ভবিষ্যত ভালো মানের কর্মীরা সংগঠন করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) উপজেলা শ্রমিক লীগের ৪৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির পরিচিতি সভা স্থানীয় সংসদ সদস্যের মুন্সেফ বাজারস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জামান, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র অধ্যাপক মো হারুনুর রশীদ। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে রমজান আলী তার স্ত্রী উর্মি আকতারকে হত্যা করে। সেই মামলার এজাহার ভুক্ত ১ নং আসামী রমজান। ২০২০ সালের ৫ আগষ্ট কর্ণফুলি থানায় রমজান ও আবদুল মান্নান মান্নার নামে ১টি অস্ত্র আইনে মামলা করেন র্যাব-৭। ঐ মামলায় তাদের কাছ থেকে ১ টি পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলিসহ ১টি ম্যাগজিন ও আরো ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে র্যাব-৭ এর একটি অভিযানিক টিম। রমজানের নামে পটিয়া সহ বিভিন্ন থানায় ৫ টি মামলা রয়েছে। অপরদিকে, একই কমিটির সহ দপ্তর সম্পাদক আবদুল মান্নান মান্নার নামেও একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে পটিয়া থানায় চলতি বছরের ২ জুন অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেন র্যাব-৭। মামলার বিবরনে জানা যায়, ১ জুন উপজেলার কোলাগাঁও এলাকার আবদুল মজিদ ভান্ডারির বাড়ির সামনে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে মান্নান পালিয়ে গেলেও তার সগযোগী ইকবাল হোসেন নামের একজনকে আটক করে র্যাব। এসময় তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাটির নিচ থেকে একটি দেশীয় তৈরী টু টু পিস্তল ও ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে র্যাব। এ ঘটনায় আবদুল মান্নান মান্নাসহ আরো ৩ জনকে আসামি করে পটিয়া থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেন র্যাব। ২০১১ সালে কোলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি সামশুল ইসলামের বাড়িতে ডাকাতি সংক্রান্ত মামলার আসামী ছিলেন এই মান্না। তাছাড়া সে কোলাগাঁও এর আলোচিত চাঞ্চল্যকর বাহাদুর হত্যা মামলারও ১ নং আসামি। বাহাদুর কোলাগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সভাপতি ছিলেন। মান্নার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৪ টি মামলা আছে। এ ব্যাপারে উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সদ্য ঘোষিত পূণার্ঙ্গ কমিটির সভাপতি সামশুল ইসলাম বলেন, রমজান ও মান্নাকে জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদের কোটা থেকে রাখা হয়েছে। এই দুই জনসহ তিনি ৪ জনের নাম কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তাদের দায়ভার আমরা নিতে পারব না। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ বলেন, উপজেলা কমিটিতে আমার কোন কোটা ছিল না। জেলা কমিটির সভাপতি নুরুল হাকিমের বাড়ি পটিয়া হওয়ায় আমি তাহার উপর ছেড়ে দিয়েছি। তিনি দেখে শুনে স্বাক্ষর করার পর আমি স্বাক্ষর করেছি। তাছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক যেভাবে প্রস্তাব করেছেন সেভাবে জেলা কমিটি স্বাক্ষর করে পূণার্ঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রমজান আলী ও সহ দপ্তর সম্পাদক আবদুল মান্নান মান্নার নামে মামলা থাকার বিষয়টি তিনি জানতেন বলে স্বীকার করেন । এধরনের মামলার আসামীরা কমিটিতে থাকা না থাকার ব্যাপারে দলের গঠনতন্ত্রের কোথাও উল্লেখ নেই বলে দাবী করেন তিনি। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি নুরুল হাকিম বলেন, মামলার আসামী অভিযুক্ত দুই জনকে কমিটিতে রাখার জন্য সুপারিশ করেছেন জেলার সাধারণ সম্পাদক ইসলাম আহমেদ। তার সুপারিশকৃত ব্যাক্তিদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে তিনি স্বাক্ষর করার পর আমি স্বাক্ষর করেছি। সেসময় উপজেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমার সাথে ছিলেন। রমজান ও মান্নার নামে একাধিক মামলা থাকার বিষয়টি সাধারণ সম্পাদক ইসলাম আহমেদের নজরে আনলে তিনি কর্নপাত করেননি। তবে তিনি এই ধরনের কোন মামলার আসামী সংগঠনে থাকতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন । এর দায় দায়িত্ব সম্পূর্ণ ইসলাম আহমেদের উপর। তিনি কোন ভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন না। এব্যাপারে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন বলে তিনি জানান। একাধিক মামলার আসামি ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রমজান আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা সবকটি মামলা মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন। সবকটি মামলায় আমি জামিনে আছি। এলাকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আমার প্রতিপক্ষরা এসব মামলায় আমাকে জড়িয়েছেন। অপর অভিযুক্ত উপজেলা শ্রমিক লীগের সহ দপ্তর সম্পাদক আবদুল মান্নান মান্নার বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে ফোন করা হলে সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.