আনোয়ারা-কর্ণফুলীতে ইফতার বাজারে নেই কোনো জৌলুস

নিজস্ব প্রতিবেদক

কঠোর সরকারি বিধিনিষেধে রেস্তেরাঁয় বসে খাবার সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তবে পার্সেল বিক্রির অনুমতি আছে খাবার দোকান গুলোর। করোনা মহামারির বাস্তাবতার থাবা পড়েছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসা দোকানীদের। পবিত্র রমজানের প্রথমদিন থেকে সরকারি নিয়মের বেড়াজালে পড়েন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। উন্মুক্ত স্থানে ইফতারি বিক্রির নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নিয়ম মেনেই দুপুরের পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলেছেন রেস্তোরাঁগুলো। যদিও ছিল না আগের সেই জৌলুস। ইফতারি বিক্রি বেড়েছে পার্সেলে।

করোনায় কঠোর লকডাউনে বদলে যাওয়া জীবনযাত্রার প্রভাব পড়েছে ইফতারি বাজারেও। করোনার আগে চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলীতে রমজান মাসে দুপুরের পর থেকে বাহারি সব ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসতেন ব্যবসায়ীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ ইফতারসামগ্রী কেনার জন্য ভিড় করতেন। করোনাকালে ইফতার বাজারে এবারও নেই কোনো জৌলুস। দোকানে দোকানে সীমিত আয়োজনে চলে বেচা-বিক্রি। তবে প্রথম রোজায় ইফতার সামগ্রী কিনতে এসে অনেকেই ফিরে গেছেন খালি হাতে। অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইফতারি বিকিকিনি করলেও বেশিরভাগ দোকানে ছিলনা স্বাস্থ্যবিধি। বেশিরভাগই একরকম হুড়োহুড়ি করে কিনেছেন ইফতার। ব্যবসায়ীদের দাবি, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করছেন তারা। সরকারি নির্দেশনা মেনে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো প্রতিদিন বিকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ইফতার সামগ্রী বিক্রি করছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) বিকালে আনোয়ারা উপজেলার চাতরী চৌমুহনী বাজার গাউছে রহমান টি স্টল, কাফকো সেন্টারের কস্তুরি হোটেল অ্যান্ড বিরানি হাউস, চাইনিজ রেস্তোরা দেয়াং রেস্ট্যুরেন্ট, বটতলী, আনোয়ারা সদর ও কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যেরটেক, ক্রসিং, কলেজ বাজার, ফকিনীরহাট, ফাজিলখাঁর হাট, মিয়ার হাটসহ বিভিন্ন এলাকার ইফতারির সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা।

অন্যদিকে বন্দর কমিউনিটি সেন্টার দেয়াং রেস্ট্যুরেন্ট ইফতারির প্যাকেজ রেখেছেন রোজাদারদের জন্য। সারাদিন রোজা রাখার পর বিকেলে ইফতারির জন্য এলাকার লোকজন ভিড় জমাচ্ছেন ইফতারির বাজারে। মহল্লার চায়ের দোকান থেকে বড় বড় হোটেল রেস্ট্যুরেন্ট সর্বত্রই বিভিন্ন পদের ইফতার সামগ্রী। তবে এবার দাম একটু চড়া। ভিন্ন স্বাদের ইফতারির পসরা সাজিয়েছে হোটেল-রেস্ট্যুরেন্ট ও দোকানিরা। বিকেলের পর থেকে পথের ধারেও বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ইফতারির পদ। রোজা উপলক্ষে তাদের নিয়মিত মেন্যু পরিবর্তন করেছেন খাদ্য ব্যবসায়ীরা। মজাদার ইফতারির খোঁজে দোকান গুলোতে ইফতারের আগে পার্সেল নিতে ছুঁটেন ক্রেতারা।

চাইনিজ রেস্ট্যুরেন্ট দেয়াং ইফতার কিনতে আসা মারজানা আকতার শিপা নামের এক রোজাদার বলেন, রমজান মাসজুড়ে রোজাদারদের মুখর থাকা দোকান গুলো এখন ফাঁকা। সড়কের বিভিন্ন জনংশনে সাজিয়ে বসতেন ইফতার সামগ্রী নিয়ে ব্যবসায়ী। হরেক পদের যেসব ইফতার সামগ্রীর দেখা মিলত, এবার করোনা আর লকডাউনে তা অরেকটা কমে গেছে। রোজকদারদের ইফতারি আয়োজনে তো বেগুনী পেঁয়াজু থাকতে হবে। তাই ইফতারী নেওয়ার জন্য দেয়াং এসেছি তারা ব্যতিক্রম ধরনের ইফতারি আয়োজন করে। সে জন্য এখানে আসা। আনোয়ারার ইফতারি সুস্বাদু, গুণে ও মানেও ভালো।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন,‘ভেজালমুক্ত ইফতারি তৈরির জন্য হোটেল রেস্তোরা ও দোকানের মালিকদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাজার, দোকান, হোটেল রেস্তোরা ভেজাল বিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে।’

জানা গেছে, পুরো রমজান মাসে ইফতারীসহ কাফকো সেন্টারের চাইনিজ রেস্ট্যুরেন্ট দেয়াং নিয়ে এসেছে থান চাইনিজ ও বাংলার আধুনিক খাবারের বাহারী আয়োজন।

চাইনিজ রেস্ট্যুরেন্ট দেয়াং মোহাম্মদ বিল্পব বলেন, এক সময়ে রমজামের প্রথম দিনের দুপুর থেকেই ইফতার সামগ্রী বিক্রি করতে হিমসিমে পড়ে যেতাম। আগে ভাগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ইফতারির জন্য বুকিং দিয়ে রাখতেন। এখন আর সে দিন নেই, এ করোনায় সব পাল্টে দিচ্ছে। তারপরও সীমিত পরিসরে আয়োজন হচ্ছে ইফতার সামগ্রী। কাস্টমার পছন্দের খাদ্য পার্সেলে নিয়ে যেতে পারছেন।

চাইনিজ রেস্ট্যুরেন্ট দেয়াং পার্টনার চেয়ারম্যান এম.এ কাইয়ূম শাহ্ বলেন, করোনার আগের সময়ে ইফতারী সামগ্রী কিনতে মানুষ ভীড় করত; এখন তা নেই। করোনায় এ দুই রমজান ধরে ইফতারী আয়োজনে অনেক ভিন্নতা চলে এসেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সীমিত পরিসরে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তারা। ক্রেতারা নিয়ে যাচ্ছেন পার্সেলে।

তিনি আরো বলেন, দেশ থেকে করোনার প্রকোপ কমে যাবে। নিশ্চয় আগামী বছর আবার পুরোনো রূপে ফিরে যাবে। আবার মানুষের ঢল নামবে। মানুষ ফিরে পাবে তার স্বাভাবিক জীবন।

 

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.