আল্লামা ইমাম হায়াত
মহররম প্রাণপ্রিয় আহলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাহাদাতের ঈমানী শোক ও মহান শাহাদাতে কারবালার লক্ষ্য বাস্তবায়নে ঈমানী শপথের মাস, আনন্দ উদযাপনের নয়। ইসলাম সূর্য, চন্দ্র বা মাস বর্ষ ভিত্তিক নয়; সত্য ভিত্তিক তথা তাওহীদ রেসালাতের ভিত্তিতে ঈমান, শরীয়ত ও খেলাফতে ইনসানিয়াত ভিত্তিক বর্ষ পরিক্রমা প্রাকৃতিক বিষয়, ঈমানী বিষয় নয়। পহেলা মহররম চন্দ্র বর্ষেও আবর্তন, এভাবে সৌর বর্ষ ও ঋতুবর্ষ রয়েছে যার সবগুলোই প্রাকৃতিক ভাবে মানব জীবনের কল্যাণের জন্য দয়াময় আল্লাহতাআলার ব্যবস্থা।
বর্ষ পরিক্রমা সরাসরি ধর্মীয় বিষয় নয় কিন্তু জীবনের অংশ হিসেবে ধর্মের কার্য ধারায় যুক্ত, যেমন আমরা চন্দ্র মাসের হিসেবে ঈদে আজম-জাতীয় শহীদ দিবস-ঈদে মেরাজ শরীফ-রমজান-হজ্ব-কদর-বরাত ইত্যাদি পালন করি; তেমনি সূর্য পরিক্রমায় নামাজ সেহরী ইফতার ইত্যাদি পালন হয়, অর্থাৎ কোনোটাই ধর্ম ও জীবন থেকে আলাদা নয় আবার একক কোন ধর্মেও নিজস্ব বিষয় নয়, আবার এসব উদযাপনের কোনো ঈমানী তাৎপর্য নেই বরং সমস্যা আছে।
কোন বিষয় ও ঘটনা ছাড়া কোন দিবস বা মাসের আলাদা কোন বৈশিষ্ট্য নেই। কোন দিবস বা মাসের আবহ ও তাৎপর্য নির্ধারিত হয় সে দিবস বা মাসের বিশেষ কোন বিষয় বা ঘটনার ভিত্তিতে। দয়াময় আল্লাহতাআলার হাবীবসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভাগমনের মাধ্যমে আল্লাহতাআলাকে পাওয়া এবং ঈমানদ্বীন ও মুক্তির পথ লাভের কারণে মাহে রবিউল আওয়াল শোকরিয়া-আনন্দ-উৎসব ও লক্ষ্য উদ্দেশ্যে উদযাপনের মাস হলেও বিশেষ ভাবে মহররম শোক ও শপথের মাস আনন্দ উদযাপনের নয়।
প্রকৃতি বা কোনো বর্ষ পরিক্রমার সাথে সত্য ও মানবতার মুক্তির সরাসরি সম্পর্ক নেই, সম্পর্ক আছে ঘটনাবলীর সাথে-ইতিহাসের সাথে-সত্য ও মিথ্যার ধারা পরিক্রমা উপলব্ধি করে নিজেদের অবস্থান ও কর্তব্য নির্ধারণের সাথে। দ্বীন-মিল্লাত-মানবতার বিরাজমান মহাসংকট ও মর্মান্তিক দুরবস্থায় সর্বোপরি প্রাণপ্রিয় কেবলাভূমির পরাধীনতার মধ্যে নববর্ষ উদ্যাপনের বিকৃতি মানসিকতা আপত্তিকর দুঃখজনক। চন্দ্র নববর্ষ ইসলামের বিকৃতি কারী বাতিল মওদুদি বাদিরা নিজেদেরকে ইসলামিক কালচারাল হিসেবে প্রদর্শণী করার জন্য এবং অন্য ধর্মের সাথে সংঘাত ও বৈশাখের সাথে দ্বন্দ্ব হিসেবে এবং নিছক একটি বর্ষ ভিত্তিক করে দ্বীন ও মিল্লাতের ক্ষতি করার জন্য প্রদর্শনী করে, অথচ ঈমানের মৌলিক বিষয় ঈদে আজম উদযাপনে কার্পণ্য করে (নাউজুবিল্লাহ)। ঈমানধ্বংসাত্মক মওদুদিবাদের অনুসরণে ও অন্যান্য বস্তুবাদি মূর্খতার অবান্তর গড্ডালিকা প্রবাহের অংশ না হয়ে ঈমানী দৃষ্টি ও ঈমানী বিবেক উপলব্ধি নিয়ে চলা উচিত আমাদের সুন্নী ভাইবোনদের সবার।
মহররম প্রথমতঃ ঈমানী শোকের মাস, মহান কারবালার শাহাদাতের অন্তহীন ব্যথা ও শাহাদাতের লক্ষ্য বাস্তবায়নে জীবনপণ ঈমানী শপথের মাস। এদিকে প্রাণপ্রিয় পবিত্র কেবলাভূমি বাতিলের জবর দখলে রুদ্ধ, দুনিয়ায় বিভিন্ন স্থানে মর্মান্তিক গণহত্যা, অসহায় নিপীড়িত মা বোন শিশুদের আর্তনাদ, সমগ্র মিল্লাত বাতিল ফেরকা ও বস্তুবাদি মতবাদ এবং ধর্মের নামে অধর্ম্র উগ্রবাদওহিংস অপরাজনীতি ও তাদের স্বৈর দস্যুতন্ত্রের গ্রাসে বিপন্ন, দ্বীন-মিল্লাত-মানবতা তথা সুন্নীয়তের বিরুদ্ধে সর্ব বাতিলের সর্বাত্মক যুদ্ধ চলছে এবং সে যুদ্ধে ঈমানিয়াত ও ইনসানিয়াতের ধারা পরাজিত, মিল্লাত ও মানবতা রক্তের সাগরে ডুবন্ত, এদিকে ইসলাম বা সুন্নীয়তের নামে বাতিল জালিম অপশক্তির সর্বনাশা দালালি অসৎ স্বার্থে বিশ্বাসঘাতকতা, এ অবস্থায় চন্দ্র নববর্ষেও শুভেচ্ছা বা উদযাপনের কোনো অবস্থা বা অবকাশ নেই।
ঈমানদার মাত্রই মহররমে কারবালায় ঈমানের মহাকেন্দ্র সত্যেও প্রাণ প্রদীপ প্রাণপ্রিয় খলিফাতুর রাসুল ইমামে আকবার সাইয়্যেদিনা হজরত ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু আনহু ও মহামহিম পবিত্র আহলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামদের কে কাফের এজিদ বাহিনীর মর্মান্তিক হত্যাকান্ডে অতুলনীয় ব্যাথা ভরাক্রান্ত। শাহাদাতে কারবালার ঈমানী হৃদয়ের অন্তহীন ব্যথা যন্ত্রনা ঈমানী অনুভূতি যাদের নেই তারাই কেবল মহররমের সূচনায় আনন্দ উৎসব পালন করতে পারে।
কোনো ঈমানদার ঈমানী শোক ও ঈমানী শপথের মহররমকে এজিদবাদি কাফেরদের মত উৎসব হিসেবে পালন করতে পারেনা। শাহাদাতে কারবালার শোক সমগ্র মুসলিম মিল্লাত ও সমগ্র মানবতার শোক, এটা ইসলামের বিকৃতিকারী বাতিল শিয়াদেরও বিষয় নয়। বাতিল শিয়াবাদ শাহাদাতে কারবালার শোকের বিকৃত প্রদর্শনীর আড়ালে সত্য ও মানবতার প্রতিষ্ঠা এবং মিথ্যা ও জুলুম উৎখাতের লক্ষ্যে মহাত্যাগের এ শাহাদাতের আসল শিক্ষা ও লক্ষ্যেও বিপরীতে ইসলামের ধ্বংসে লিপ্ত রয়েছে।
মহররম মাস আসলে মহান শাহাদাতে কারবালার ঈমানী শোক আর লক্ষ্য বাস্তবায়নে পবিত্র কলেমার বিপ্লবী শপথের ধারায় যেমন মুমিনদেরও পরিচয় প্রকাশ পায়, তেমনি অবাঞ্চিত শুভেচ্ছা ও নির্মম উৎসবের মাধ্যমে মোনাফেকদেরও পরিচয় প্রকাশ পায়। ঈমানী শোক ও শপথ এবং বিপরীতে শাহাদাতে কারবালার শিক্ষা আড়াল করেও আনন্দ উদযাপনের মাধ্যমে মাহে মহররমে মুমিন আর মোনাফেকের পরিচয় প্রকাশ পায়।
চন্দ্র বর্ষ সৌর বর্ষ ঋতু বর্ষ সবই প্রাকৃতিক সবই সমগ্র মানবতার কল্যাণে দয়াময় আল্লাহতাআলা ও তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দান। দিন রাত মাস বছর চন্দ্র সূর্য এগুলো কোন এক ধর্ম বা কোনো এক জাতি বা গোষ্ঠীর নয় সর্বজনীন, প্রাকৃতিক এসব বিষয়কে বিশেষ ধর্মীয়করণ বা বিধর্মীয়করণ একেবারেই অবান্তর মূর্খতা সংকীর্ণতা এবং ধর্ম বিরোধী ও মানবতা বিরোধী ক্ষতিকর সাম্প্রদায়িক ব্যাধি।
ইসলাম চন্দ্র বা সৌরমাস বর্ষ ভিত্তিক নয় সত্যভিত্তিক তথা তাওহীদ রেসালাতের ভিত্তিতে এবং ঈমানিয়াত ও ইনসানিয়াত ভিত্তিক। ঐতিহাসিক হিজরত মোবারকের বছর থেকে চন্দ্র বর্ষের বর্তমান সন বা বর্ষ হিজরী সন হিসেবে গণণা হলেও হিজরত মোবারক মহররম মাসে হয়নি এবং আলাদা ভাবে হিজরী বর্ষ পালনের শরিয়ত গত কোন ভিত্তি নেই বরং এসব বর্ষ হিসেবে উৎসব উদযাপন শাহাদাতে কারবালার শিক্ষা তথা দ্বীন ও হিজরত মোবারকের আসল শিক্ষা আড়াল করার চক্রান্তে পর্যবসিত হয়। হিজরত মোবারকের পূর্বেও মহররম সফর রবিউল আউয়াল ১২ মাস ছিলো। শানে রেসালাত ও ঈমান হিজরত ভিত্তিক বা হিজরী সন ভিত্তিক নয় বরং শাহাদাতে কারবালাই তাওহীদ রেসালাতের আলো ও দ্বীন খেলাফতের ধারক।
মহান শাহাদাতে কারবালার আমানত পবিত্র কলেমার তাওহীদ রেসালাত ভিত্তিক জীবন চেতনায় বস্তুবাদি চেতনার আঁধারমুক্ত আত্মা ও একক গোষ্ঠীবাদি স্বৈরদস্যুতন্ত্র মুলুকিয়তের রূদ্ধতা জুলুমমুক্ত জীবন- সমাজ-দেশ ও দুনিয়ার লক্ষ্যে- শাহাদাতে কারবালার দাওয়াত- সর্বজনীন মানবতার রাষ্ট্র ও মানবিক সাম্যেও ভিত্তিতে মুক্ত মানবতার অখন্ড বিশ্বব্যবস্থা খেলাফতে ইনসানিয়াত গড়ে তোলার প্রাণপণ ঈমানী শপথে মুসলিম মিল্লাতের মহান জাতীয় শহীদ দিবস ও মানবতার মুক্তির শাহাদাতের শিক্ষায় পালন করতে হবে মাহে মহররম।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, বিশ্ব সুন্নী আন্দোলন
প্রবর্তক ও চেয়ারম্যান, বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব।