নগর পাহারায় চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের নির্ঘুম রাত

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

নগর পাহারায় চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের নির্ঘুম রাত
কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে টর্চলাইট। চোখে-মুখে তাদের উচ্ছ্বাস। সন্দেহ হলে বাঁশি বাজিয়ে দৌড়ে গিয়ে থামাচ্ছেন গাড়ি। রাতের আঁধারে টর্চলাইট দিয়ে তল্লাশির পাশাপাশি গাড়িতে থাকা লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। ভাগ্য খারাপ হলে মাদক নিয়ে কেউ কেউ আটকও হচ্ছেন শিক্ষার্থীদের হাতে।

 

সোমবার (১২ আগস্ট) দিবাগত রাতে ঘড়ির কাঁটায় রাত তখন ১২টা বেজে ৩৪ মিনিট। তখনো নগরের চকবাজার থানার গোলজার মোড়ে বিভিন্ন গাড়ি তল্লাশি করছিলেন শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি টিমে বিভক্ত হয়ে তারা এ কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। সড়কের অর্ধেক অংশে ব্যারিকেড দিয়ে সন্দেহজনক গাড়ি দেখলেই থামাচ্ছেন তারা। এরপর টর্চলাইট দিয়ে দেখছেন সবই। কাউকে আবার গাড়িতে থেকে নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করছেন তারা। গাড়ির গোপন অংশ অথবা বক্স থাকলে খুলে দেখেন শিক্ষার্থীরা। দেখে বোঝার উপায় নেই তারা সাধারণ কোনো শিক্ষার্থী। একেবারে পুলিশি সিস্টেমে তারা এই কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

 

অন্তত আধঘণ্টা এই মোড়ে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের তৎপরতা দেখে এই প্রতিবেদক। প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী ৩ থেকে ৪ টিমে বিভক্ত হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ সময়ে প্রথমে তাদেরকে একটি কাভার্ডভ্যান দাঁড় করাতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের দুজন ওই গাড়ির পেছনে অংশ খুলে ওপরে ওঠে। সেখানে টর্চলাইট নিয়ে তল্লাশি করে কোনো কিছু না পেয়ে গাড়িটি ছেড়ে দেয়। এরপর একটি সরকারি স্টিকারযুক্ত গাড়িকে থামাতে দেখা যায় তাদের। ভেতরে তেমন কাউকে না দেখে চালককে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে ছেড়ে দেন তারা। এভাবে সড়কে চলাচলকারী প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাইক্রোবাস শিক্ষার্থীরা তল্লাশি করেন।

 

 

এই কার্যক্রমে যুক্ত এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। তিনি জানান, এভাবে সারারাত তারা তল্লাশি কার্যক্রম চালাবেন। শহরের বেশ কয়েকটি মোড়ে এ কার্যক্রম চলছে। গত রোববারও এভাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তারা। ওইদিন কয়েকটি মদের বোতল উদ্ধার করেছিলেন তারা। পরে সেনাবাহিনীকে ওইগুলো জমা দেওয়া হয়েছিল। তাদের এই কার্যক্রম তদারকি করছে সেনাবাহিনী।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের এই তল্লাশি কার্যক্রম একেবারে বৃথা যাচ্ছে ব্যাপারটা এরকমও না। গত ৯ আগস্ট সন্ধ্যায় আকবর শাহ থানার সিটি গেট এলাকা থেকে গাঁজাভর্তি একটি লাগেজ উদ্ধার করেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে একজনকে আটক করেন তারা। পরে নৌবাহিনীর সহায়তায় আটক ব্যক্তিকে থানায় হস্তান্তর করেন শিক্ষার্থীরা।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রজনতার প্রতিরোধের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এদিন রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র দিয়ে বোন শেখ রেহেনাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে উড়াল দেন তিনি। এরপর থেকে বিভিন্ন পুলিশ এবং বিভিন্ন থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। একারণে পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে দেশের প্রায় সব থানা। সংস্কারের দাবি তুলে পুলিশ কর্মকর্তারা কর্মবিরতিও পালন করে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর থানায় থানায় যোগ দিতে শুরু করে পুলিশ। তবে এখনো আগের মতো স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড শুরু করতে পারেনি বাহিনীটি। পুলিশের অনুপস্থিতিতে শিক্ষার্থীরাই এতদিন সড়কে যানবাহন সামলানোর কাজের পাশাপাশি তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.