সাতকানিয়া প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় এক ব্যবসায়িক পার্টনার থেকে লাগিয়ত নিয়ে ও নগদ অর্থ বিনিয়োগ নিয়ে অংশীদার বানিয়ে পরে তাকেই উচ্ছেদ করার অভিযোগ ওঠেছে একই ইটভাটার অপরাপর অংশীদারদের বিরুদ্ধে।
১৭ই জানুয়ারী ২০২৫ শুক্রবার মূল মালিকের পক্ষের আমমোক্তারনামা গ্রহীতা ও ক্রেতা কেঁওচিয়ার রাজীব নন্দী এই তথ্য জানান।
সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহার শিশুতল এলাকার এমআরবি ( মজিদিয়া রশিদিয়া ব্রিক ফিল্ড) এর মালিকানা নিয়ে এই ঘটনা ঘটে, ঘটনায় রাজীব নন্দী বাদী হয়ে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি ফৌজদারি মিস মামলা নং ৫২/২৫ দায়ের করেন।
মামলার বাদী রাজীব নন্দী (৩৮)সাতকানিয়ার কেঁওচিয়ার নন্দীর বাড়ি এলাকার স্বপন নন্দীর ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, এমআরবি ইটভাটার জায়গার মূল মালিক একই উপজেলার নুরুল আমিন, নুরুল আমিন তার পূর্ব পরিচিত ভাটার পার্শ্ববর্তী ছদাহার এলাকার মৃত হেফাজত আহমদের ছেলে হাবিবুল্লাহ, ও দক্ষিণ ঢেমশার শহিদুল ইসলাম,মো:কামালসহ মোট তিনজনের সাথে আলাপ আলোচনা করে ৬আনা অংশীদারত্বে ভিত্তিতে সেভেম বিএম এর মালিক থেকে ৪০লক্ষ টাকার আর ফরিদ নামক এক ব্যক্তি থেকে ৮০লক্ষ টাকার শেয়ার কিনে মোট ১কোটি ২০লক্ষ টাকা বিনিয়োগে উল্লেখিত ৩জনের সাথে এমআরবি নামীয় ইট ভাটাটি পরিচালনা করে আসছেন।
এবং ইটভাটায় নুরুল আমিনের নিজস্ব সম্পত্তিগুলিও তার নিজ নামে নামজারী করা আছে, যার বিএস নামজারী খতিয়ান নং ছদাহা মৌজার ৫৫৩৫।
সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই চলছিল, তবে মাঝপথে মূল মালিক নুরুল আমিনের বিশেষ কাজে অর্থের প্রয়োজন হলে নুরুল আমিন তার ইটভাটার পার্শবর্তী কেঁওচিয়ার ব্যবসায়ী রাজীব নন্দী ও পৌরসভার ভোয়ালিয়া পাড়ার ইকবাল বাহার চৌধুরীকে ৬আনা থেকে ৪আনা স্বত্ব বিক্রি করে ফেলেন গত ৩১/৫/২০২৩ সালের একটি শেয়ার হস্তান্তরের চুক্তিমত বিক্রি করে ফেলেন,পরে বাকি ২আনাও আরেকটি চুক্তির ভিত্তিতে রাজীব নন্দী ও ইকবাল বাহার চৌধুরীকে বুঝিয়ে দিয়ে ইটভাটার ব্যবসা পরিচালনা থেকে চিরতরে বিদায় নেন মূল মালিক নুরুল আমিন।
এদিকে নুরুল আমিনের পরিবর্তে রাজীব নন্দীরা ব্যবসা দেখাশোনা করে আসছিলো নিয়মিত।
তবে গত ২২/১২/২০২৪ তারিখের সকাল বেলা রাজীব নন্দী তার আরেক ব্যবসায়ী পার্টনার ইকবাল বাহার চৌধুরীকে নিয়ে পূর্বের ন্যায় ইটভাটায় গেলে-শহিদুল ইসলাম ও হাবিবুল্লাহরা রাজীব নন্দীদের কোন মালিকানা নেই এবং তাদেরকে চেনেনা বলে বিভিন্ন গালিগালাজ করে মারধর করতে উদ্যোত হয়,এবং রাজীব নন্দীদের আর কোনদিন ইরভাটায় না যাওয়ার জন্য বারণ করেন।
এদিকে মামলার বাদী রাজীব নন্দী বলেন,আমি এমআরবি ইটভাটার মূল মালিক নুরুল আমিন থেকে আমরা ২জনে ১০৩৫নং আমমোক্তার নামা দলিলমূলে ক্রয় করি মূলত ৪আনা তখন তার অংশ বাকি থাকে আরো ২আনা, পরে আমরা আরেকটি চুক্তিমোতাবেক ৫১২৩নং দলিলমূলে ওই অবশিষ্ট অংশটুকুও নিয়ে নিই।
খুব সুন্দর ভাবে ব্যবসা চালিয়ে আসলেও গত ডিসেম্বর হাবিব উল্লারা আমাদেরকে আমাদের প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে দিচ্ছেনা,তারা স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালী এবং ভূমিদস্যুতায় তারা এক্সপার্ট, আমরা জীবনাশংকায় আছি তাই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি।
তিনি আরো বলেন,হাবিব আর শহিদুল্লাহরা আমাদের মূল মালিকের জায়গা ব্যাংকে শো করিয়ে আমাদের মূল মালিক নুরুল আমিনের জায়গা ব্যাংকে বন্ধক দিয়েও টাকা নিয়েছে ইটভাটার বিনিয়োগ করার কথা বলে, অথচ! ওই টাকাও এখন একক ভাবে নুরুল আমিনের কাঁধে ওঠে গেছে হাবিব উল্লাহ ও শহিদরা এতবড় প্রতারক।
আমি আমার জায়গা ছাড়া শেয়ার হিসেবে ১কোটি ২০লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি সবার সাথে, অথচ আমাকে তারা গত ৬বছরের হিসাব দেয়নি আমি আমার জায়গা এবং বিনিয়োগ ছাড়াও ল্যান্ড ভাড়া হিসেবে ৬০লাখ টাকা পাব হাবিব সাহেব গং থেকে।
তারা আমাকে কেরানী হাট ব্রিকফিল্ড সমিতির মাধ্যমে ৩২লক্ষ টাকা দিয়ে কিছু ষ্ট্যাম্প নিয়েছে খালি ষ্ট্যাম্প, আমি ভাড়া বাবদ আরো টাকা পাবো, এবং আমার মূলধন জমা আছে ১কোটি ২০লাখ।
তারা আমাকে বিভিন্ন জনের হুমকিধামকি দিয়ে আগেও বেশকয়েকবার খালি চেক আর ষ্ট্যাম্প নিছিলো, পরে আমি বিভিন্নজনের হাতেপায়ে ধরে সেগুলি ফেরত নিছি।
এদিকে মজিদিয়া ব্রিকফিল্ডের ম্যানেজার মো: শহিদ বলেন,নুরুল আমিন কেরানীহাট ব্রিকফিল্ড সমিতির মাধ্যমে কাগজপত্র করে আমাদেরকে ব্রিকফিল্ড বিক্রি করে দিছে।
আপনি সমিতির সাথে আলাপ করতে পারেন,আর আমাদের আরেকজন মালিক হাবিব উল্লাহ সাহেব এখন অফিসে নেই, আপনি মুঠোফোন ওনার সাথে কথা বলেন।
২০২৩সালে কেঁওচিয়ার রাজীব নন্দীদের বিক্রি করেছে আমিনুর রহমান, তাহলে আবার ২০২৪সালের শেষে কেন বিক্রি করবে? এগুলিতো ভাড়ার টাকা নিয়েছেন আমিনুর রহমান এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন- তাহলে আমিনুর রহমান প্রতারণা করছে আর কি, বিক্রি না করলে আমরা কেন টাকা দিছি?
এমন প্রশ্নও ছুড়েঁ দেন শহিদুল ইসলাম।
অপরদিকে নুরুল আমিন আরো জানান,আমি ৩২লক্ষ টাকা নিছি স্বীকার করতেছি তবে সেগুলি বাবদ আমি আমার ব্যবসার অংশ বিক্রি করেছি ২০২৩সালের শুরুতে রাজীব নন্দী গংকে, আর কাউকে বিক্রি করিনাই।
আমি নিজেই সমিতিতে পাওনা টাকার জন্য লিখিত বিচার দিয়েছি,দেখেন দরখাস্ত, তো আমি বেচব কেন?
এসব তো ডাহা মিথ্যা কথা,আমাকে হাবিব উল্লাহ গং ৬বছর যাবত হিসাব দেয়নি,কোন রেজুলেশনও করেনি।
সেভেন বিএম এর মালিক সামশুল ইসলামও সাক্ষী আছেন।
এদিকে সাতকানিয়া কেরানীহাট ব্রিকফিল্ড মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল আলম বিচারের বিষয়ে বলেন- নুরুল আমিন মালিকানাটা ৩২লক্ষ টাকার বিনিময়ে কামাল আর হাবিব উল্লাহদের বিক্রি করে ফেলছে সেটা সত্য,এবং কোন ধরনের ভাড়ার বিষয়ে সমাধান হয়নি,সমাধান হয়েছে নুরুল আমিন অসুস্থ থাকায় বেশ কয়েকবার আমাকে সমাধান করার জন্য বলেন, কারণ তার টাকার খুব প্রয়োজন ছিলো।
মানবিক কারণে সমাধান করে দিয়েছি, বৈঠকে সমিতির একাধিক লোকজন ছিলো,আর হাবিব উল্লাহরা উকিল থেকে শেয়ার বিক্রির চুক্তিনামাও লিখে আনছিলো,সমিতির সবার সামনেই ৩২লক্ষ টাকা গুনে নিয়ে শেয়ার বিক্রি করেন নুরুল আমিন ।
মূলত নুরুল আমিন অসুস্থ তাই বহুদিন বিরক্ত করার পর আর না পারতেই সেটা তার দিকে তাকিয়ে মানবিক কারণে আমরা সমাধান করে দিয়েছি।আর না হয় এই বিচার আমরা করতে চাইছিলাম না।
তিনি আরো বলেন,এখানে এটা স্পষ্ট যে ভাড়ার কোন লেনদেন হয়নি,ভাড়ার কোন টাকা পয়সা দেয়া হয়নি,দেয়া হয়েছি সরাসরি মালিকানা বিক্রির বিষয়ে।
রাজীব নন্দীদের আগে বিক্রি করার বিষয়ে ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো:ফরিদুল আলম কিছুই জানেননা বলে জানান,তিনি বলেন আমরাই তো মানবিক কারণে তার শেয়ার হাবিব সাহেবদের বিক্রি করায় দিছি নুরুল আমিনের কথামত।
আমি শুনছি ব্যাংকে নুরুল আমিনের জায়গা মর্টগেজ দিয়ে কিছু টাকা নিয়েছে,সেই জায়গাও ব্যাংকের লোন মুক্ত করার জন্য নুরুল আমিনের পক্ষে আমি বেশ কয়েকবার কামালদের প্রেসার ও দিয়েছি।
এবং পার্শ্ববর্তী ইটভাটা সেভেন বিএম এর স্বত্বাধিকারী শামসুল ইসলামকে কল করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এদিকে সরেজমিনে ইটভাটায় গেলে আরেক পার্টনার হাবিব উল্লাহকে অফিসে পাওয়া যায়নি,তবে তার মুঠোফোন কল করলে তিনি সরাসরি এসে কথা বলবেন বলে অন্য কোন কথা ব্যক্ত করেননি।