চ্যানেল 24 ডেস্ক
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার দায়ে ফাঁসির মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমির কারাগারের কনডেম সেল থেকে পলায়নের ঘটনায় গভীর রাতে উত্তাল বুয়েট ক্যাম্পাস। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টায় শিক্ষার্থীরা বুয়েটের শহিদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
পলাশী মোড়, ভিসি চত্বর হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মিছিলটি এক সমাবেশে মিলিত হয়। পরে দিবাগত রাত ১২টার দিকে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলন করেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা- ‘ফাঁসির দড়ি ঝুলাই দে, সব খুনিদের গর্দানে’; ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনিদের ফাঁসি চাই’; আবরার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’; আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’; ‘জুলাই/২৪ এর অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’; ‘ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা’; ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’; ‘জুলাই এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
রাজু ভাস্কর্যে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির শেষাংশে বিচারপতি জানান, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক থাকায় তার পক্ষে কোনো আইনজীবী লড়ছেন না। এই দৃষ্টান্ত শহীদ আবরার ফাহাদের সঙ্গে প্রতারণা এবং বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কিছু সন্ত্রাসী। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের ২০ জন সন্ত্রাসীকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মুনতাসির আল জেমি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী। আবরার ফাহাদ হত্যায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত।
বিক্ষোভকারী বুয়েটের শিক্ষার্থীদের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আপিলের শুনানির শেষ দিন বিজ্ঞ বিচারপতির কাছে মুনতাসির আল জেমির পলায়নের সংবাদ আমাদের হতভম্ব করে। ফাঁসির আসামিদের স্থান নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে আবৃত কনডেম সেলে। সেখান থেকে এত শীর্ষ সন্ত্রাসীর পলায়ন ন্যক্কারজনক এবং আমাদের জন্য লজ্জার। এই পলায়ন শহীদ আবরার ফাহাদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি।’
সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বক্তব্যে বলা হয়, ‘কারা কর্তৃপক্ষ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নিজেদের দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, দ্রুত খুনি মুনতাসির আল জেমিকে খুঁজে বের করে আটক করতে হবে। পাশাপাশি তার পলায়নকার্যে সহযোগিতাকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, ‘আজকে হাইকোর্টে শুনানি চলছিল। সেখানে আমরা জানতে পেরেছি, আমার ভাইয়ের খুনি জেমি পালিয়ে গেছে। আমার ভাইয়ের খুনির পলায়নের জন্য রাষ্ট্র দায়ী। বর্তমান সরকারও এই দায় এড়াতে পারবে না। সরকারের ঊর্ধ্বতনরা এটা জানতে পেরেছিল কিন্তু তারা সেটা লুকিয়ে রেখেছিল। আজকে হাইকোর্ট জানিয়েছে, সে নাকি ৫ আগস্টের পরে পালিয়েছে। আমরা এর স্পষ্ট কোনো জবাব পাইনি। এটা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক বিষয়।’
আবরার ফাইয়াজ আরও বলেন, ‘কোনো টালবাহানা মেনে নেওয়া হবে না। আমরা সরকার ও কারা বিভাগ থেকে স্পষ্ট জবাব চাই। তাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হোক এবং পলায়নের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাই।’