চট্টগ্রাম সংবাদ ডেস্ক:
ওপার বাংলার কণ্ঠশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী একটি গানে বলেছিলেন- ‘ডাকাতদের ডাকাতি করতে না দিলে তারাও এক সময় বনধ্ (হরতাল) করবে।’ আজ যেন তারই প্রতিফলন ঘটছে চট্টগ্রামে। নগরীর প্রবেশমুখ রাস্তার মাথা এলাকা দিয়ে শহরে চলাচল নিষিদ্ধ সিএনজি-ট্যাক্সি আইন অমান্য করায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার মাধ্যমে মামলা করার প্রতিবাদে সড়কের শৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনী ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করা হয়েছে রাস্তায় গাড়ি থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়কারী হিসেবে পরিচিত এক সময়কার জামায়াতের অনুসারী মো. হারুনুর রশিদের সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে। গত মঙ্গলবার চান্দগাঁও থানার বাহির সিগন্যাল এলাকায় ওই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয় । মানববন্ধনে দাবি করা হয় মানবিক কারণে গ্যাস নেয়ার জন্য শহরে আসার সুযোগ দেয়ার জন্য।
প্রকৃত একাধিক সিএনজিচালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, মানবিক কারণ নয়; পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিলে চাঁদাবাজি করতে পারে না বলেই এই আয়োজন। জানা যায়, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী রুটে প্রায় ৪ হাজার গ্রাম সিএনজি চলাচল করে। গ্রাম এলাকার যে কোনো সিএনজি রাস্তার মাথা এলাকায় এলে মাসিক ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় টোকেন কিনতে হয় আর প্রতি ট্রিপে সংগঠন ও পুলিশের নামে তোলা হয় ১০ টাকা করে। এভাবে মাসে প্রায় কোটি টাকার উপরে চাঁদা তোলা হচ্ছে। পুলিশ এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে ওই টাকা তুললেও পুলিশ বলছে তারা এই চাঁদাবাজির ভাগ খায় না। গুটিকয়েক কথিত নেতা হয়তো ভাগ পেতে পারে। ভাগ খায় না বলেই পুলিশ অপরাধের বিষয়ে কোনো ছাড় না দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। আইন ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে, প্রয়োজনে অবৈধ গাড়ি আটক করা হচ্ছে। এতে তাদের চাঁদাবাজিতে ধস নামায় তারা এবার পুলিশের বিরুদ্ধেই রাস্তায় নেমেছে।
এ ব্যপারে চান্দগাঁও থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত টিআই আশীষ কুমার পাল বলেন, রাস্তায় যাতে কোনো অবৈধ গাড়ি চলাচল না করে সেজন্য কমিশনার স্যারের কঠোর নির্দেশনা আছে। আমরা সে অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি। এতে যদি কারো অবৈধ ব্যবসায় ব্যাঘাত ঘটে সেজন্য আমার কোনো ফিলিংস নেই। গ্যাস নেয়ার জন্য গ্রামেও সিএনজি পাম্প আছে। তবু ভিড় এড়াতে তাদের বলা আছে রাত ১০টার পর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত গ্যাস নিতে পারবে। সেসময় আমরা তাদের ছাড় দিয়ে থাকি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম অটোরিকসা-অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ মাসিক টোকেনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, গ্যাস নেয়ার জন্য যেসব গাড়ি আসে তাদের ডিস্টার্ব না করার জন্য আমরা আবদার করেছি। চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি বলেন, শ্রমিকদের কল্যাণ ফান্ডের জন্য তারা নিয়মিত চাঁদা দিয়ে থাকেন। এটাকে চাঁবাজি বলা যাবে না। তবে এর বাইরে যদি কেউ চাঁদা আদায় করে তা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।
এ ব্যাপারে জানতে চাঁদা আদায়কারী মো. ভুুট্রোকে ফোনে কল ও বার্তা দিলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
চট্টগ্রাম অটোরিকসা-অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদের সভাপতিত্বে ও কাপ্তাই রাস্তার মাথা শাখার সেক্রেটারি আবুল হােসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক মোহাম্মদ ওমর ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা হাসান মোল্লা , বোয়ালখালী শাখার সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, বোয়ালখালী-চান্দগাঁও সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ভুট্টো হাওলাদার, সদস্য সচিব মামুন, বাস টার্মিনাল শাখার সভাপতি ইউসুফ, নোয়াপাড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক আমজাদ, যুগ্ম-সম্পাদক সাহেদ রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জাফর প্রমুখ।