খাদ্য সহায়তা না পাওয়ায় ডিসির ওপর পরিবহন শ্রমিকদের ক্ষোভ

 

চট্টগ্রাম ব্যুরো

বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাবে দীর্ঘ লকডাউনে চট্টগ্রামের পরিবহন শ্রমিকদের একাধিক সংগঠন  খাদ্য সহায়তার জন্য দফায় দফায় জেলা প্রশাসকের বাছে ধরনা দিয়েও খাদ্য সহায়তা না পাওয়ায় তাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। পক্ষান্তরে যারা পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করে দেশের মারাত্মক ক্ষতির সাথে জড়িত, তাদের অর্থ সহায়তা করায় অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা। পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরাতে জেলা প্রশাসনের সকল কার্যক্রম ভেস্তে দিয়ে এখনো যারা পাহাড় কাটায় সহায়তা করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছেন, তারা অন্যায়কারী হিসেবেই গণ্য হয়। এমন লোকেকে অর্থ সহায়তা করা অনৈতিক বলে মনে করছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন।

এসএম নাাজের হোসাইন বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ো বসবাস করছে তারা শুধু নিজেরাই বিপদে আছে তা নয়, তারা ধ্বংস করছে পরিবেশ। দেশ ও জাতির শত্রুদের সাথে হাত মিলিয়ে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে অনবরত। এর আগে জেলা প্রশাসন তাদের উচ্ছেদ করতে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে, তাই এভাবে তাদের অর্থ সহায়তা করা মানবিক বলে আমি মোটেও বিশ্বাস করি না। এটাকে আমি অন্যায় কাজে সহযোগিতা করার সামিল বলে মনে করি। তবে হ্যাঁ, ওরা যদি পাহাড় থেকে সড়ে যেত তাহলে তাদের আরো বেশি সহায়তা করলেও বাহবা দেয়া যেত।

এ ব্য‍াপারে বৃহত্তর চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব উজ্জল বিশ্বাস বলেন, কোভিড-১৯ সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারী প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গণপরিবহনে কর্মরত শ্রমিকরা। তালিকার মাত্র ৫ শতাংশ শ্রমিক প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ২ হাজার ৫০০ টাকার আর্থিক সহায়তা পেয়েছে কিন্তু জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আমাদের কোনো শ্রমিককে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়নি। এখন পুনরায় ১৪ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। কর্মহীন অনাহারী শ্রমিকদের কোনো খাদ্য সহায়তা না দিয়ে পাহাড়ে বসবাসকারী অবৈধ দখলদারদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে কর্তৃপক্ষ বেআইনি কর্মকাণ্ডে উৎসাহ দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে একদিকে পাহাড় ধসে সহযোগিতা এবং অবৈধ দখলদারদের পৃষ্ঠপোষকতার সামিল বলে আমি মনে করি।

জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা না পাওয়ার ক্ষোভ জানিয়ে চট্টগ্রাম অটোরিকসা অটোটেম্পো শ্রমিক লীগের (রেজি. নং- চট্ট. ১৪৬৯) সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খোকন বলেন, গত লকডাউনে আমাদের গাড়ি না চলায় হাজার হাজার শ্রমিক মারাত্মক খাদ্যকষ্টে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণায় অসহায় বেকার কর্মহীন অটোরিকমা ও অটোটেম্পো শ্রমিকদের জন্য ত্রাণসামগ্রী প্রদানের ব্যাপারে  জেলা প্রশাসকের সাথে আমি নিজে  দেখা করে এক হাজার অসহায় শ্রমিকের খাদ্য সহায়তা চাইলে তিনি ২০০ জনের একটি তালিকা জমা দিতে বলেন। পরে আমি ২০০ জনের একটি তালিকা জমা দিয়ে অনেক চেষ্টা করেও খাদ্য সহায়তা পাইনি। পরে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আ জ ম নাছির উদ্দিনের সহায়তায় কিছু শ্রমিককে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি মো. বেলাল হোসেন বলেন, আমি এক হাজার অসহায় শ্রমিকের একটি তালিকা নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে গেলে তিনি ১০০ জনকে খাদ্য সহায়তা দেবেন বলেছিলেন। কিন্তু এগুলো নিয়ে আরো ঝামেলা বাড়বে তাই আমি লাগবে না বলে দিয়েছিলাম।

এ ব্য‍াপারে কথা বলার জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের মোবাবাইলে কল ও বার্তা দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ৩ জুলাই (শনিবার) বেলা ১১টায় এম এ আজিজ স্টেডিয়ামসংলগ্ন জিমনেসিয়াম হলে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরীর বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত ২৭৮ পরিবারের মাঝে প্রত্যেককে নগদ এক হাজার টাকা করে ২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা তুলে দেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।

এ সময় অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম জাকারিয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মো. মাসুদ কামাল, এনডিসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানা, স্টাফ অফিসার টু ডিসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা সজীব কুমার চক্রবর্তী, জেলা নাজির মো. জামাল উদ্দিন প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.