চট্টগ্রামে নারীর শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপসর্গ!

চট্টগ্রামে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপসর্গ নিয়ে এক নারী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়া ষাটোর্ধ্ব ওই নারী গত চারদিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার উপসর্গগুলো দেখে চিকিৎসকরা তাকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগী হিসেবে ধারণা করলে এটি আদৌ ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কিনা তারা এখনও নিশ্চিত নন।

তারা বলছেন, এখনও এই সন্দেহটি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়। ওই নারী ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত কিনা সেটি নিশ্চিত হতে আরও ৩ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের ফোকাল পার্সন ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এক নারী ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে তিনি এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের রোগী হিসেবে চিহ্নিত নন। আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠিয়েছি। ৩ দিন পর এর ফলাফল জানা যাবে।’

তবে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ওই নারী কী কী উপসর্গে ভুগছেন সে বিষয়ে কিছু জানাতে চাননি ডা. সাজ্জাদ।

তিনি বলেন, ‘আমরা এক্ষুনি উনার উপসর্গগুলো ডিসক্লোজ করতে চাই না। আগে টেস্টের ফলাফল আসুক। তখন ডিপার্টমেন্ট অব মেডিসিন থেকে এই বিষয়ে কথা বলবে।’

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস একটি ছত্রাক-জনিত রোগ। মিউকোরমাইকোসিস খুবই বিরল একটা সংক্রমণ। মিউকোর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এই সংক্রমণ হয়। সাধারণত এই ছত্রাক পাওয়া যায় মাটি, গাছপালা, সার এবং পচন ধরা ফল ও শাকসবজিতে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই ছত্রাক মাটি এবং বাতাসে এমনিতেই বিদ্যমান থাকে। এমনকি নাক ও সুস্থ মানুষের শ্লেষ্মার মধ্যেও এটা স্বাভাবিক সময়ে থাকতে পারে। এই ছত্রাক সাইনাস, মস্তিষ্ক এবং ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ফুসফুস যেহেতু দুর্বল থাকে, সেজন্য তাদের ক্ষেত্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত রোগীর চিকিৎসা করছেন ঢাকার বারডেম হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। তার মতে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস যেহেতু সংক্রামক নয়, সেজন্য এটা নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই।

বিরল ছত্রাকজনিত রোগ ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে বাংলাদেশে প্রথম কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হয় গত ২৫ মে। রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, মৃত ওই ব্যক্তি মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ছিলেন। এর আগে রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে গত ৮ মে ৪৫ বছর বয়সী এক রোগীর এবং পরে গত ২৩ মে ৬০ বছর বয়সী আরেক রোগীর দেহে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হয়।

এর পরই গত মে মাসের শেষ দিকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সতকর্তা জারি করেছিল, ভারতে ছড়িয়ে পড়া ব্ল্যাক ফাঙ্গাস যাতে বাংলাদেশে না ছড়াতে পারে। এ নিয়ে একটি গাইডলাইনও তৈরি করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছিল তখন। সারা দেশের সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদেরও এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।

করোনা সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ডা. মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উৎপত্তিস্থল নিয়ে নানা কথা আছে। তবে এটা এখন প্রায় নিশ্চিত যে মাটি এবং গাছপালা থেকে ছড়ায়। তবে কেউ কেউ বলছেন করোনা চিকিৎসায় যে স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয় সেখান থেকে ছড়ায়। তাহলে ভারতে কিভাবে এলো? সংকটের কারণে ভারতে যে ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল অক্সিজেন ব্যবহার করা হয়েছে সেখান থেকে এটা ছড়াতে পারে।’

তিনি বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সুস্থ সবল মানুষের ক্ষতি করতে পারে না। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ক্ষতি করে।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.