নৈতিকতার চর্চায় চট্টগ্রামে দুদকের ৮২২টি ‘সততা স্টোর’

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রয়োজনীয় সকল পণ্য দোকানে সাজানো থাকে থরে থরে। কিন্তু থাকেনা কোনো বিক্রেতা। সকল পণ্যের দাম বাজারমূল্যের সমান। বিক্রেতাহীন দোকানে পণ্যমূল্য পরিশোধের জন্য আছে ক্যাশবাক্স। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে মূল্য পরিশোধ করেন ওই ব্যাক্সে। এটি নাটক-সিনেমা বা কল্পনা নয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উদ্যোগে বাস্তবেই রয়েছে চট্টগ্রামে ‘সততা স্টোর’ নামে এমন দোকান।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে সততার ব্যবহারিক চর্চার বিকাশ ঘটাতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১৬ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সততা স্টোর গঠনের উদ্যোগ নেয়। ২০১৭ সালে ‘সততা স্টোর’ গঠন সংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদন দেয় দুদক।
এরপর শুধু ২০১৯ সালেই সারাদেশে ২ হাজার ১৭৭টি সততা স্টোর স্থাপন করা হয়েছে। সারাদেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে দুদক বসিয়েছে ৪ হাজার ১৪৯টি সততা স্টোর। যার মধ্যে চট্টগ্রামে রয়েছে ৮২২টি দোকান।
সততা স্টোর গঠন ও পরিচালনা বিষয়ে তৈরি নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিক্রেতাবিহীন ওই দোকান স্কুল ক্যাম্পাসের উপযুক্ত কোনো কক্ষে স্থাপন করা হবে। দোকানের পুঁজির ব্যবস্থা করবে পরিচালনা পর্ষদ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে দোকানের জন্য প্রাথমিক পুঁজি সংগ্রহ করে বিনিয়োগ করবে।
ওই দোকান থেকে জিনিসপত্র কেনার বিষয়েও নীতিমালা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, দোকানে ঢোকার সময় রেজিস্ট্রার খাতায় শিক্ষার্থীর নাম, শ্রেণি ও রোল নম্বর লিখতে হবে। পরে পণ্যের মূল্যতালিকা দেখে কেনা পণ্যের দাম দোকানে রাখা ক্যালকুলেটরে হিসাব করে পরিশোধ করতে হবে। ক্রেতাকে একটি কাগজে পণ্যের নাম ও টাকার পরিমাণ লিখে টেবিলে রাখা খামে ভরে নির্ধারিত ক্যাশবাক্সে ফেলতে হবে।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত এসব সততা স্টোরে শিক্ষা উপকরণের পাশাপাশি বিস্কুট, চিপস, চকোলেট ইত্যাদি পাওয়া যায়। চাহিদামতো পণ্য না পাওয়া গেলে সেখানে রাখা আরেকটি রেজিস্ট্রারে লিখে অগ্রিম ফরমাশ দেওয়া যাবে।
পর্যবেক্ষণ ও তদারকি
নীতিমালা অনুযায়ী স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সমন্বয়ে তিন সদস্যের বিশেষ মনিটরিং কমিটি সততা স্টোরের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও তদারক করবে। ওই কমিটি মাসে অন্তত একবার বৈঠক করে হিসাব যাচাই ও ক্রয়যোগ্য সামগ্রীর তালিকা করে প্রয়োজনীয় অর্থ স্টোর পরিচালনা কমিটির কাছে দেবে।
কমিটিকে এক দিন পর পর স্টোর পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কমিটি পণ্যের চাহিদা নির্ধারণ, নিয়মিত পণ্য ক্রয়ের ব্যবস্থা, পণ্যের গায়ে মূল্য লেবেল লাগানোর কাজ করবে। আর পণ্যের মূল্যতালিকা স্টোরের দৃশ্যমান স্থানে টাঙানো থাকবে।
দুদকের দায়িত্বশীলরা বলেছেন, সততা অভ্যাস ও চর্চার বিষয়। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সততার চর্চা তৈরির লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.