কালারমারছড়ার গহীন পাহাড়ে যৌথবাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার

 

 

মিজবাহ উদ্দীন আরজু, (মহেশখালী)

দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর কালারমারছড়ার গহীন পাহাড়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আস্তানায় র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-১৫ এর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছে। অত্যাধুনিক ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে টানা ছয় ঘণ্টাব্যাপী এই অভিযান চালানো হয়। এতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয় এবং সন্ত্রাসীদের নির্মিত অস্থায়ী ঘাঁটি ভেঙে দেওয়া হয়।

 

 

মহেশখালীতে দীর্ঘদিন ধরে অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে কুখ্যাত। বিশেষ করে কালারমারছড়ার দুর্গম পাহাড়ে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী নিজেদের ঘাঁটি তৈরি করেছে। সেখানে তারা অস্থায়ী অস্ত্র কারখানা গড়ে তুলে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি ও সংরক্ষণ করে। এসব ঘাঁটি থেকে তারা নিয়মিতভাবে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা, চাঁদাবাজি, মাছের ঘের দখল, ডাকাতি ও খুনখারাবি চালিয়ে আসছিল।

 

 

উপজেলার রাজনীতি ও স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিল। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় চেয়ারম্যান তারেকের নামও সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে উঠে এসেছে। এলাকাবাসীর দাবি, তারেক চেয়ারম্যানের প্রভাবেই এই সন্ত্রাসীরা নির্ভয়ে পাহাড়ে আস্তানা গড়ে তোলে। কয়েকদিন আগে তার সহোদর ব্যবসায়ী তোফায়েল আহমদ মাতাব্বরকে নিজস্ব মাছের ঘের থেকে অপহরণ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, যা স্থানীয়দের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়।

 

 

র‍্যাব-১৫ এর মেজর নাজমুল সাংবাদিকদের জানান, অভিযানের আগে গোয়েন্দা নজরদারি ও ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ের ভেতরে সন্ত্রাসীদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। ভোর থেকেই যৌথবাহিনী অভিযান শুরু করে। অভিযানের খবর টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলেও তাদের ফেলে যাওয়া বিপুল অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাব সূত্র জানায়, এসময় ১০টি দেশীয় তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র, শর্টগানের ৬টি কার্তুজ, রাইফেলের ২১ রাউন্ড তাজা গুলি এবং ৩ রাউন্ড রাইফেলের অ্যামুনিশন উদ্ধার করা হয়। এছাড়া পাহাড়ে নির্মিত একাধিক টংঘর ও অস্থায়ী আস্তানা পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।

 

 

অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে স্থানীয়রা বলেন, “আমরা বহুদিন ধরে সন্ত্রাসীদের ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। তারা পাহাড় থেকে নেমে আমাদের মাছের ঘের দখল করে, টাকা-পয়সা চাঁদা নেয় এবং প্রতিবাদ করলে খুন করে ফেলে।” স্থানীয়দের দাবি, যতদিন পর্যন্ত পাহাড় থেকে এই সন্ত্রাসীদের সম্পূর্ণ উৎখাত করা না হবে, ততদিন এলাকায় শান্তি ফিরবে না। তাই তারা এধরনের অভিযান নিয়মিত চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

 

 

অভিযান শেষে ব্রিফিংয়ে র‍্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান বলেন, “মহেশখালীতে সরকারের দুটি মেগা প্রকল্প—কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও এসপিএম প্রকল্প—চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পের নিরাপত্তা এবং সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষার স্বার্থে সন্ত্রাসীদের শেকড় উপড়ে ফেলা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে আছে। স্থানীয়দের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা আমরা পেয়েছি এবং ভবিষ্যতেও চাই।”
তিনি আরও জানান, “সন্ত্রাসীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। এধরনের সাড়াশি অভিযান চলমান থাকবে এবং পাহাড়কে সন্ত্রাসমুক্ত করা হবে।”

 

 

দীর্ঘদিন ধরে অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হওয়া মহেশখালীর গহীন পাহাড়ে র‍্যাবের নেতৃত্বে এই অভিযান সাধারণ মানুষের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তবে এলাকাবাসীর প্রত্যাশা—এটি যেন এককালীন অভিযান না হয়ে নিয়মিত উদ্যোগে রূপ নেয়, যাতে চিরতরে সন্ত্রাসীদের আস্তানা ভেঙে দিয়ে দ্বীপে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।

 

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.