আনোয়ারা থানার তদন্ত ওসির উলটে যাওয়ার রহস্য কী?

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুচলেকা নিয়ে যুবককে ছাড়লেন তদন্ত ওসি, আবার মামলা দিয়ে জেলে পাঠালেন ওসি। ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানায়।

চট্টগ্রামের আনোয়ারার বারশত ইউনিয়নের কালিবাড়ি এলাকায় মারকাযুল কোরান মাদ্রাসার মৌলানা ফোরকানের বিরুদ্ধে এক শিশুকে বলাৎকারের অভিযোগ তুলে একটি ভিডিও ভাইরাল করেন সরোয়ার উদ্দিন সবুজ নামে এক যুবক। এই ঘটনায় মাদ্রাসা শিক্ষক ফোরকানের অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) আনোয়ারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওমর সাঈদ এ ঘটনায় মাদ্রাসা শিক্ষক, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও ভাইরালকারী যুবক সবুজকে ডেকে আনেন মাদ্রাসা শিক্ষকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে৷ এরপর তৃপক্ষীয় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এটি সমাধান করেন। সবুজকে মিথ্যা বলাৎকারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না করা শর্তে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ সময় সবুজ ও মাদ্রাসা শিক্ষক ফোরকানের একটি ভিডিও ধারণও করা হয়। ওই ভিডিওতে সবুজকে মাওলানা ফোরকানের কাছ থেকে ক্ষমা চাইতে দেখা যায়। এবং মাওলানা ফোরকানও সবুজকে ক্ষমা করে ওই ভিডিওতে বক্তব্য রাখেন।

কিন্তু পরদিনই গণেশ উলটে যায়। কোনো এক কারণে পুলিশ ২৫ আগস্ট (বুধবার) সবুজকে থানায় ডেকে নিয়ে যায়। এরপর মাওলানা ফোরকানকে চাঁদাবাজির মামলা করানো হয় সবুজের বিরুদ্ধে।

স্থানীয়দের প্রশ্ন, মঙ্গলবার পুলিশ ডেকে নিয়ে মুচলেকা নিল সবুজের কাছ থেকে। এরপর তাকে ছেড়েও দেওয়া হল। মাওলানা ফোরকানও তাকে ক্ষমা করে দিলেন। এ ঘটনার ভিডিও রয়েছে। তাহলে কেন পরদিন সবুজকে চাদাবাজির মামলা দেওয়া হল? পুলিশ কি সবুজের কাছ থেকে কোনো টাকা চেয়েছিল? সবুজের কাছ থেকে টাকা না পেয়েই কি মীমাংসিত এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এই মামলা দেওয়া হয়েছে? আগের দিন তাহলে ওসি তদন্ত ওমর সাঈদ কেনই বা সমঝোতা করে দিয়ে মুচলেকা নিলেন? আবার তাকেই কেন এখন এই ঘটনায় দায়ের হওয়া চাঁদাবাজির মামলার তদন্তভার দেওয়া হল?

এমন অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আনোয়ারা থানার পরিদর্শকের (তদন্ত) বিরুদ্ধে।

গ্রেফতার হওয়া সবুজ উপজেলার বরুমচড়া ২নং ওয়ার্ডের শামসুর ইসলামের পুত্র।

গ্রেফতার সবুজের ছোট ভাই মোহাম্মদ রকিব হাসানের দাবি, তাঁর বড় ভাই সবুজ মাদ্রাসার ছাত্রের স্বীকারোক্তি ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করায় তাকে মঙ্গলবার রাতে থানায় ডেকে নিয়ে এসে মুচলেকা নেয় পুলিশ। বুধবার আবারো ডেকে এনে আটক করেছে পুলিশ।

আটককৃতের ছোট ভাই মোহাম্মদ রকিব হাসান আরো চট্টগ্রাম সংবাদকে বলেনন, বিকাল তিনটায় ফোন করে ডেকে এনেছেন কথা আছে বলে। তারপর মাওলানা ফোরকান হুজুরকে ডেকে আনেন ওসি। কোন অভিযোগ ছাড়া আটক করে রেখেছে আমার ভাইকে। এখন শুধু আমাদের বলছেন উপরের নির্দেশ আছে।

 

জানতে চাইলে আনোয়ারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওমর সাঈদ বলেন, ‘মামলা রেকর্ড করেন ওসি স্যার। আমি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। কেউ আমার কাছে আগের দিন আসলো। পরদিন সে যে কোনো কারণে গ্রেফতার হতে পারে। কোনো ঘটনায় বাদির অভিযোগ গুরুত্বপূর্ণ। বাদি মামলা করেছে। সুনির্দিষ্ট মামলার প্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়েই সবুজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর বাইরে কোনো বিষয় জানার থাকলে ওসি স্যারের কাছ থেকে জানতে পারেন।’

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি দিদারুল ইসলামকে কল করা হলেও ফোনে পাওয়া যায়নি।

এর আগে বুধবার (২৫ আগস্ট) সকালে উপজেলার কালিবাড়ি এলাকার মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে মৌলানা ফোরকান জানান, ‘তার বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে সম্মান ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছে। এসব ঘটনা থানায় জানালে অভিযুক্ত যুবক সবুজ ক্ষমা চেয়ে একটি মুচলেকাও দেন।’

মাওলানা ফোরকানকে ভিডিওতে বলতে দেখা গেছে, সবুজ যে ভুল করেছে সে জন্য তাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। এসব নিয়ে আর বিভ্রান্তি যেন না ছড়ায়।

এ অপ্রত্যাশিত ঘটনাকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এসময় স্থানীয় একটি বাজার কমিটির সদস্যরা ফুলের মালাও দেন মৌলানাকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ আগষ্ট রাতে মাদ্রাসায় এক ছাত্রকে বলাৎকারের ঘটনায় অভিযোগ এনে সাংবাদিক পরিচয়ে শিক্ষক ও ছাত্রকে ভিডিও ধারণ করেন সরোয়ার উদ্দিন সবুজ (৩০) নামে ওই যুবক। এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে চাঁদাদাবী করে সে। চাঁদা না পেয়ে সে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে সে। ভিডিওটি ভাইরাস করার অপরাধে মুচলেকাও নেন ওসি তদন্ত। এঘটনায় মৌলানা ফোরকান বাদী হয়ে থানায় চাঁদাবাজি মামলা করলে বিকালে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.