দক্ষিণ চট্টগ্রামে দ্বীনি শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে বাঁশখালীর মনকিচর মাদ্রাসা

বাঁশখালী প্রতিনিধি: দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাঁশখালী উপজেলার শীলকূপ ইউনিয়নে অবস্থিত মনকিচর এমদাদুল উলুম বড় মাদ্রাসা ও এতিমখানা। উক্ত মাদ্রাসাটি সুনামের সহিত এলাকায় বহুমুখী শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। অবকাঠামো এবং আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও দেশ-বিদেশের শুভাকাঙ্কী ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সহযোগিতায় ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭৬ সালে এই দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন চট্টগ্রামের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমেদ্বীন সারাদেশের সাড়া জাগানো বক্তা পীরে কামেল মরহুম আল্লামা শাহ্ আবু বকর (দা.বা.)।

দীর্ঘ ৪৫ বছর পূর্বে মনোরম পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত এই মাদ্রাসায় বিভিন্ন শ্রেণিতে বালক-বালিকা উভয় গ্রুপের শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নরত। এই মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বর্তমানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন অনেকে। গত ২০ জুলাই মরহুম আল্লামা শাহ আবু বক্কর বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের পর এ মাদ্রাসার পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাঁরই সুযোগ্য ২য় পুত্র আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা আনিছুর রহমান। মরহুম আল্লামা শাহ্ আবু বক্কর জীবিত থাকাকালীন সময়ে তাঁর স্বাক্ষরযুক্ত বিগত ১৬ মার্চ ২০১৪ ইং সনে সম্পাদিত অছিয়তনামা মূলে এবং গত ২০ জুলাই মনকিচর এমদাদুল উলুম বড় মাদ্রাসা কার্যালয়ে মজলিশে আমেলার সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে ও সর্ব সম্মতিক্রমে আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদরিস্ (বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড) এর মহাসচিব স্বাক্ষরিত এক রেজুলেশনে হাফেজ মাওলানা আনিছুর রহমানকে এ মাদ্রাসার পরিচালকের দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়।

বর্তমানে এ মাদ্রাসায় ২২ জন শিক্ষক দ্বারা ৭৫০ জন ছাত্রকে শিশু শ্রেনী হতে দরছে নেজামীর সিলেবাস অনুসারে জামাতে উলা (মেশকাত শরীফ) পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। তৎসঙ্গে নুরানী কোর্স মুতার্ফারকা, হেফজখানা, এলমে ক্বেরাত এবং বাংলা ইংরেজী তথা ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষার সু-ব্যবস্থা রয়েছে। এ ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসাটি নিরলসভাবে খেদমতে দ্বীনের একনিষ্ট মহান দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে আসছে অদ্যাবধি। মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই মাদ্রাসায় ৭৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এতিম রয়েছে প্রায় ১৫০ জন। হেফজ বিভাগে অধ্যয়নরত আছে ৯৫ জন। প্রতি মাসে এই মাদ্রাসায় ৮-১০ লক্ষ ব্যয় হয় পরিচালনা বাবদ। এ মাদ্রাসার ছদকা ফান্ড থেকে গরীব ও এতিম ছাতদেরকে ফ্রিতে খাওয়ার ব্যবস্থা এবং মাদ্রাসার লাইব্রেরী হতে সকল ক্লাসের ছাত্রদেরকে ধারস্বরূপ কিতাব সরবরাহ করা হয়। অত্যন্ত গরীব, এতিম ছাত্রদেরকে পোষাক ও চিকিৎসা খরচ প্রদান করা হয়।

মাদ্রাসাটির নবনিযুক্ত পরিচালক আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা আনিছুর রহমান বলেন, মাদ্রাসাটি ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আমার মরহুম আব্বাজন। বর্তমানে এ মাদ্রাসায় ২২ জন শিক্ষক দ্বারা ৭৫০ জন ছাত্রকে শিশু শ্রেনী হতে দরছে নেজামীর সিলেবাস অনুসারে জামাতে উলা (মেশকাত শরীফ) পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। তৎসঙ্গে নুরানী কোর্স মুতার্ফারকা, হেফজখানা, এলমে ক্বেরাত এবং বাংলা ইংরেজী তথা ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষার সু-ব্যবস্থা চালু আছে।

তিনি বলেন, ‘আমার পিতার মৃত্যুবরণের পর থেকে আমাকে মাদ্রাসার পরিচালক নিযুক্ত করা হয়। আমার পিতা থাকাকালীন সময়ে এই মাদ্রাসার যে সুনাম ছিল তা অক্ষুন্ন রাখতে আমি নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো হচ্ছে, আল্লাহর জমিনে তার দ্বীনকে গালিব করার নিমিত্তে দ্বীনি-শিক্ষার পাশাপাশি সুন্নাহসম্মত তারবিয়্যাতের মাধ্যমে আল্লাহর খাঁটি বান্দা তৈরি করে সুশিক্ষিত নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা। উক্ত প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো তথা শ্রেণি কক্ষ, ছাত্রাবাস, বাউন্ডারি, লাইব্রেরি ইত্যাদিসহ আর্থিক সংকট রয়েছে। মাদ্রাসাটির উন্নয়নে সুষ্ঠভাবে পরিচালনা জন্য আমি দেশ-বিদেশের শুভাকাক্সক্ষী ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আন্তরিক দোয়া ও আর্থিক সহযোগিতা কামনা করছি।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.