১০ হাজার টাকায় ভারতে পালায় পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানা

linkedin sharing button
প্রতারণা করে গ্রাহকের ১১শ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া ই- কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা মাত্র ১০ হাজার টাকায় বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়ে ভারতে যান। লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম বুড়িমারী সীমান্ত দিয়ে বাবু নামের একজন ব্যক্তি নগদ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে সোহেল রানাকে ভারতে পাঠান। ওপার থেকে আরেকজন দালাল তাকে রিসিভ করেন। এরপর তিনি ভারতীয় নেপাল সীমান্ত পাড় করে নেপালে পাঠানোর কথা ছিল।

ভারতীয় পুলিশের কাছে বনানী থানার পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানা বিস্তারিত খুলে বলেছেন। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, সোহেল রানা নেপাল যেতে পারলেই সেখান থেকে ইউরোপে চলে যেতেন। তার সঙ্গে একটি বিদেশি পাসপোর্ট ছিল। সঙ্গে ছিল থাইল্যান্ড, ইংল্যান্ড আর ফ্রান্সের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড। এ ছাড়া বাংলাদেশি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডও সঙ্গে ছিল তার।

সিআইডি জানিয়েছে, গত সপ্তাহে তিনি একটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় আড়াই কোটি তুলে নিয়েছেন। বিষয়টি ডিএমপি কমিশনারকে জানানোও হয়েছিল। তবে সোহেল রানা যে পালিয়ে যাবেন তা নিশ্চিত কেউ বুঝতে পারেনি পুলিশ কর্মকর্তাদের কেউ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, সোহেল রানার বিষয়ে এখনো লিখিত কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। ভারত থেকে লিখিত বার্তা পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টাকা তুলে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টাকা তোলার বিষয়টি শুনেছি। তাকে খোঁজা হচ্ছিল। তবে তাকে পাওয়ার আগেই গণমাধ্যমে জানা গেল সে ভারত ধরা পড়েছে।’

গত ১৭ আগস্ট নগদ টাকা পরিশোধের পরেও মাসের পর মাস পণ্য না পাওয়ার অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন তাহেরুল ইসলাম নামে এক গ্রাহক। এ ছাড়াও ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাতের কথাও উল্লেখ করা হয় মামলায়। মামলার প্রতিষ্ঠানটির এমডি ও চেয়ারম্যান আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। এরপর অভিযোগ ওঠে, ওই ই-অরেঞ্জের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়ার ভাই বনানী থানার তদন্ত কর্মকর্তা সোহেল রানা।

এরপর গুলশান থানার মামলাটি সিআইডি তদন্ত শুরু করে। তদন্তের এক পর্যায়ে সিআইডি টাকার পাচারের বিষয়টি জানতে পারে। আর সেই পাচারের সঙ্গে জড়িত মূলহোতা বনানী থানার পরিদর্শক সোহেল রানা। সোহেল রানাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডি পুলিশ সদর দফতরে চিঠি লেখে। তবে সেই চিঠির কোনো সমাধান না হতেই সোহেল রানা কাউকে না জানিয়েই ভারতে পালিয়ে যায়।

সিআইডি সূত্রে জানা যায়, সোহেল রানার নেতৃত্বেই পুরো কোম্পানির প্রতারণামূলক কার্যক্রম চলত। তিনি অভয় দিতেন কোম্পানির কারও কোনো সমস্যার সৃষ্টি হবে না। প্রতিদিন মিটিং সিটিং সবকিছুতেই সোহেল রানা উপস্থিত থাকতেন। প্রতিদিনকার গ্রাকদের জমা করা টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে সরিয়ে নেওয়া হতো। সেই টাকার কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বনানী থানার একজন এসআই সারাবাংলাকে বলেন, ‘একই তো গোপালগঞ্জে বাড়ি, অন্যদিকে বনানী থানার পুলিশ পরিদর্শক। তার ওপর রাজনৈতিক একজন নেতার সাহচার্যে অধিক ক্ষমতার অধিকারী হন। সেই ত্রিমাত্রিক ক্ষমতাবলেই সোহেল রানা ই-অরেঞ্জের মাধ্যমে প্রতারণা করেন। তার বাড়ি বাংলাদেশের গোপালগঞ্জে। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলেন।’

অন্যদিকে পুলিশ সদর দফতর সুত্রে জানা গেছে, ইন্টারপোলের মাধ্যমে সোহেল রানাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। তবে এখনও কোনো কিছু জানা যায়নি। ভারতের পুলিশ এরইমধ্যে সোহেল রানার বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দিয়েছে। তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.