নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের ১৩ ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করেছে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহম্মেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। এর একদিন পর আরেক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পাঁচলাইশ থানার কমিটিও ঘোষণা করেন তারা।
আবার পাঁচলাইশ থানা কমিটির ঘোষণা দিয়ে কয়েকঘণ্টায় মাথায় আরেক বিজ্ঞপ্তিতে নগর ছাত্রলীগের ছয় জন সদস্য অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে জানানো হয়। এ নিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ৩ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নগর ছাত্রলীগের ১৪ ইউনিট ও নগর কমিটিতে সদস্য অন্তর্ভুক্তির কথা জানাল মহানগর ছাত্রলীগ।
এদিকে ঘোষিত কমিটিকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহের আগুন ধরেছে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটে। পদবঞ্চিত নেতাদের বিক্ষোভ নিয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলোর শিরোনাম হয় চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ। মহসিন কলেজ কমিটির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন নওফেল অনুসারী হিসেবে পরিচিত মায়মুন উদ্দিন মামুন ও আনোয়ার পলাশদের অনুসারীরা। তারা সড়ক অবরোধ করে টায়ারে আগুন জ্বালানোর পাশাপাশি সভাপতি ইমু ও সেক্রেটারি দস্তগীরের ছবিতে জুতা পেটা করেন।
তবে ঘোষিত কমিটি কিংবা অন্য কোন বিষয়ে জানতে বিভিন্ন মিডিয়ার পক্ষ থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করে হলেও সাড়া দিচ্ছেন না নগর ছাত্রলীগের শীর্ষ এই দুই নেতা। উল্টো ব্যক্তিগত মুঠোফোন বন্ধ রেখে নিজেদের পরিচিত বিভিন্ন মাধ্যমে কমিটি করে জানিয়ে দিচ্ছেন তারা।
নগর ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছে, ঢাকায় বসে কমিটির ঘোষণা দিচ্ছেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। নিজেদের পছন্দের লোক নিয়ে কমিটি করার প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবেই তারা ঢাকায় বসে কমিটি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ এসব নেতাদের। আবার ঘোষিত কমিটি পোক্ত করতে পাঁচলাইশ থানা কমিটিতে বসানো হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতার পছন্দের লোক এমনও অভিযোগ কয়েকজনের।
তারা বলছেন, সব ইউনিটেই ইমু-দস্তগীর তাদের অনুসারীদের নেতৃত্বে এনেছে। নগরের আওতাধীন ইউনিট, সবখানেই ঠাঁই পেয়েছে বিবাহিত, অছাত্র, অস্ত্রবাজ, হত্যা ও ধর্ষণ মামলার আসামিরা। দাগি বিতর্কিতদের কমিটিতে রেখেই নিজেদের পক্ষ ভারী করছেন দায়িত্বশীল নেতারা।
এরমধ্যে মহসিন কলেজ শাখা সভাপতির বিরুদ্ধে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত পোস্টার ছেঁড়ার মত গুরুতর অপরাধ। চকবাজার থানা সভাপতির বিরুদ্ধে কিশোর গ্যাং চালানোসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। পাঁচলাইশ থানা কমিটিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতার পছন্দমত বসানো হয়েছে ছাত্রদলের মানপত্রে নাম থাকা একজনকে।
আরো পড়ুন
বাকলিয়া ১৭নং ওয়ার্ডে এক সহ-সভাপতি বিবাহিত হলেও তাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। বায়েজিদ থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক রুবেল খান বিবাহিত ও ধর্ষণ মামলার আসামি। পাঁচলাইশ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন রবিন হামজারবাগ এলাকার চাঞ্চল্যকর নুরুল আলম রাজু হত্যা মামলার প্রধান আসামি।
পদবঞ্চিত নেতাদের অভিযোগ, তাদের এই অভিযোগ কানে নিচ্ছেন না নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক। কমিটি ‘জায়েজ’ করতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের পছন্দের কয়েকজনকে কমিটি আনা হয়েছে। এরআগেও গত এক বছর আগে চান্দগাঁও ও ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগসহ বেশ কয়েকটি কমিটি দিয়ে বির্তক তৈরী করেছিলেন ইমু-দস্তগীর। যদিও কেন্দ্র থেকে তদন্ত করার কথা বলে সেই সময় পরিস্থিতি শান্ত করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের ঘোষিত কমিটিই বহাল আছে।
আবার নগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ১৪ ইউনিটে কমিটি নিয়ে যখন নিজ গ্রুপেই ক্ষোভের আগুন জ্বলছে এমন সময় আ.জ.ম নাছিরের অনুসারীরা চার ইউনিটে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করে বাহাদুরি দেখিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নগর ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মিতুন মল্লিক ও যুগ্ম সম্পাদক ওয়াহেদ রাসেল স্বাক্ষরিত মহসিন কলেজ, বাকলিয়া ও পাহাড়তলি থানায় এসব পাল্টা কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘নগর ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার এখতিয়ার সংশ্লিষ্ট সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের। আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কোন অভিযোগ থাকলে সেটা দেখব। আমি যতটুকু জানি তারা যাচাই-বাছাই করে কমিটি দিছে। তারপরও পৌর নির্বাচন শেষে কমিটিতে বিতর্কিত যাদের নাম এসেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‘
ফোন বন্ধ রাখার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, ‘অবশ্যই তাদের ফোন চালু রাখা দরকার ছিল।’
এর আগে নবগঠিত কমিটির সমালোচনা করে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি লেখেন, ‘বিভিন্ন ওয়ার্ড থানাতে কমিটি দিয়েছে। শতাধিক ছাত্রলীগ কর্মী আজ পদে এসেছে। আনন্দের সংবাদ, ছোট ভাইদের অভিনন্দন। পাশাপাশি আমার সাথে থাকার কারণে ওয়ার্ড থানা থেকে গণহারে বাদ দেওয়ার জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি ইমরান আহমেদ ইমু ও জাকারিয়া দস্তগীরকে। আমাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ভয় পাও জানতাম, আমার কর্মী সমর্থকদেরও যে ভয় পাও আজ জানলাম। ধন্যবাদ।’
হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত এক নেতা বলেন, ‘আমি সবসময় মহসিন কলেজ শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম। তাদের যেকোনো প্রয়োজনে সময় দিয়েছি। মহসিন কলেজ শিবিরমুক্ত করতে নিজের রক্ত দিয়েছি। নগর ছাত্রলীগের নেতারা তার প্রতিদান আমাকে দেননি।’
এ বিষয়ে জানতে আবারও নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।