ব্যবসায়ীর প্রতি কক্সবাজার সদরের ওসির বেপরোয়া দাপট

কক্সবাজারের এক হোটেল ব্যবসায়ীকে পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে গ্রেপ্তার করে সাজানো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।

ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের ধরে রিসোর্ট মালিক দেলোয়ারের প্রতিপক্ষের পক্ষ নিয়ে অন্যায়ভাবে কক্সবাজার থানা পুলিশ ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের মালিক দেলোয়ার হোসেনসহ তার দুই ছেলে ও তাদের প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে সাজানো মিথ্যা মামলায় আসামি করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন দেলোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে আতিক ফাহাদ।

তবে দেলোয়ার হোসেনকে ‘প্রতারক’ দাবি করে কক্সবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস বলছেন, কক্সবাজারে তিনিই প্রথম কোনো অফিসার ইনচার্জ যাকে দেলোয়ার হোসেন পকেটে নিতে পারেননি। এই কারণেই ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে এসব অভিযোগ তুলছেন দেলোয়ার হোসেন।

গত ৮ নভেম্বর রাত সোয়া ৯টার দিকে কক্সবাজারের কলাতলীর ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট থেকে দেলোয়ার হোসেনসহ তার দুই ছেলে এবং রিসোর্টের এক একাউন্টস অফিসারকে গ্রেপ্তার করে কক্সবাজার থানা পুলিশ। পর দিন দেলোয়ারসহ ১১ জনকে আসামি করে কক্সবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের জমি মালিকদের একজন এডভোকেট নুরুল আলম।

মামলার এজাহারে ৮ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে দেলোয়ার হোসেনের অফিসে এডভোকেট নুরুল আলম, তার ছেলে এডভোকেট আশরাফুল আলম ও তার ছোট ভাই মনছুর আলমকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করার অভিযোগ করা হয়। তবে ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের সিসিটিভি ফুটেজে রাত ৯ টার থেকে ৯ টা ৭ মিনিট পর্যন্ত এই তিনজনকে ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের সামনে বসে থাকতে দেখা গেছে। যেখানে তাদের শরীরে কোনো আঘাত বা জখম দেখা যায়নি।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যা এডভোকেট নুরুল আলম উনার ছেলে ও ভাইকে নিয়ে আমার অফিসে আসেন। একপর্যায়ে উনারা বিনা কারণে একটা সিনক্রিয়েট করেন। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। তখন আমার গাড়ির ড্রাইভার তাদের চিৎকার শুনে এগিয়ে এলে তারা আমার গাড়িচালকের সাথেও খারাপ ব্যবহার করে। তাদের মধ্যে কিছু কথা কাটাকাটি হয়। এর পরপরই তারা বের হয়ে রিসিপশনের দরজার সামনে বসে ছিল।

তিনি বলেন, কিছুক্ষণ পর দেখি কক্সবাজার থানার ওসি, পরিদর্শক তদন্ত বিপুল চন্দ্র দাশ ও পরিদর্শক (অপারেশন) সেলিম উদ্দিন এসেছেন। তারা বলেছেন ৯৯৯ এর কলে তারা এসেছেন। এসেই কোন কথা ছাড়া আমাকে কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে বের করে থানায় নিয়ে যায়। পরের দিন শুনি আমার বিরুদ্ধে ১২টা ধারা দিয়ে একটা মামলা দেওয়া হয়েছে।

থানার যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে তাকে গ্রেপ্তার করে হয়রানি করার অভিযোগ তুলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘তারা এসে সিনক্রিয়েট করার কিছুক্ষণের মধ্যেই থানার ওসিসহ ৩ জন পরিদর্শক ঘটনাস্থলে চলে এসেছেন এবং সেটাও ৯৯৯ এর কলে— এটা বিশ্বাসযোগ্য? তারা এসে কোন কিছুই যাচাই করলেন না। আমাদের ধরে থানায় নিয়ে গেলেন। এটা তো স্পষ্ট বোঝাই যাচ্ছে যে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে এসব করা হয়েছে।’

শুধু গ্রেপ্তার বা মামলা দেওয়াই নয় দেলোয়ার হোসেনকে আদালতে তোলার ক্ষেত্রেও ওসি যথেচ্ছাচার ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছেন— এমন মন্তব্য করে দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাকে ৮ তারিখ রাতে গ্রেপ্তার করা হলো। সারাদিন আমার কোনো স্টাফ বা ঘরের লোকজনের সাথে আমাকে দেখা করতে দেয়নি। পরদিন আমাকে আদালতে পাঠিয়েছে বিকেল ৫টায়। যাতে আমি জামিন আবেদন করতে না পারি। আমি যেটা বুঝতে পারছি না সেটা হলো ওসি ব্যক্তিগতভাবে এমন আচরণ কেন করবেন? উনার কী স্বার্থ?

দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আতিক ফাহাদ বলেন, ‘তারা মামলায় অভিযোগ করেছে যে তাদের ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। অথচ তাদের সেখানে যাওয়ার ও বের হওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই স্পষ্ট হবে এসব অভিযোগ মিথ্যা। বরং এমন হয়রানির মুখে আমরা যখন জেলার এসপিসহ (পুলিশ সুপার) বিভিন্ন জায়গায় বিষয়টি জানিয়েছি তখন বিভিন্ন জায়গা থেকে ওসিকে কলও করা হয়। আমার বোনজামাইকে উদ্দেশ্য করে সেসময় ওসি বলেন যত কল আসবে তত ধারা বাড়বে। তিনি করেছেনও তাই। এই মামলায় মোট ১১টি ধারা দেওয়া হয়েছে। আমার যে বোনজামাই রাতে এই বিষয়ে কথা বলতে থানায় গেছেন তাকেও এই মামলার আসামি করা হয়েছে। কথা হলো তিনি যদি কোন অপরাধ করে থাকতেন তাহলে তাকে তো তখনও গ্রেপ্তার করার কথা ছিল। থানায় বাদীর সাথে আমার বোন জামাইয়ের দেখাও হয়েছিল। থানার সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই এসবের প্রমাণ পাওয়া যাবে।’

আতিক ফাহাদ বলেন, আমার আব্বু একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। কক্সবাজারে আমাদের অনেকগুলো প্রকল্প আছে। কলাতলী বিচকে আধুনিক পর্যটন স্পট করার ক্ষেত্রে উনার গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। তিনি সাতকানিয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতিও। সেই মানুষকে বৃদ্ধ বয়সে এভাবে পরিকল্পিতভাবে লাঞ্ছিত করা হলো আমরা এর বিচার চাই।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস   বলেন, ‘একজন অপরাধীর বিরুদ্ধে কাজ করবো এটাই স্বাভাবিক। উনি শত শত মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেন উনি আমাকে কনভিন্স করার চেষ্টা করেছেন তার অনৈতিক প্রস্তাবের মাধ্যমে। সেটা করে সফল না হয়ে তিনি আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার করছেন। একজন-দুজন নয় শত শত মানুষের সাথে তিনি প্রতারণা করেছেন। আমি এই প্রথম কোনো অফিসার ইনচার্জ যাকে উনি তার পকেটে নিতে পারেন নাই। এজন্য এখন উনি ত্যক্ত বিরক্ত।’

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.