১০ লাখ টাকার জন্য আব্দুল হককে খুন করে গৃহকর্মী জমির!

“মাত্র ৮/৯ বছর বয়সে আমাদের বাড়িতে এসেছিল জমির। তার খালা তাকে এনে দিয়েছিল। ঐ সময় বাড়ির কোনো কাজকর্মও করতে পারতো না। তবুও আমার বাবা ভালবেসে তাকে রেখে দিয়েছিলেন। জমির আমার বাবাকে নানা বলে ডাকতো। আমার বাবাও তাকে নাতির মতো ভালবাসতেন। কোনোদিন কাজের ছেলে হিসেবে দেখেননি। সবসময় নিজেদের একজন হিসেবে বিবেচনা করতেন। আর সেই জমির আমার বাবাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। ভাবতে অবাক লাগে, আমার বাবা যেন দুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পুষেছিলেন।”

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন নিজের বাড়ির কর্মচারীর হাতে খুন হওয়া সাতকানিয়ার প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও কেঁওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক জনপ্রিয় চেয়ারম্যান আবদুল হক মিঞার বড় ছেলে শিল্পপতি ও সাতকানিয়া ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি নিজাম উদ্দিন।

অশ্রুভেজা কন্ঠে নিজাম বলেন, “আমাদের বাড়ির কর্মচারী জমির উদ্দিন আমার বাবাকে হত্যা করেছে বলে পুলিশের নিকট স্বীকার করেছে। আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট জবানবন্দিও দিয়েছে। তার দেখানো মতে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ক্রোবার, একটি ছুরি ও বাড়ির পেছনে সেচ দিয়ে পুকুরের পানি শুকিয়ে জমিরের ব্যবহৃত ২টি ও আমার বাবার ব্যবহৃত ১টি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে পুলিশের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। আমার পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। তারপরও মনে হচ্ছে বিষয়টি রহস্যজনক। হত্যার পেছনে কারো ইন্ধন আছে কি না, তৃতীয় কোনো পক্ষ আমার বাবাকে হত্যা করালো কি না। তবে এটা নিশ্চিত হতে পেরেছি যে হত্যাকাণ্ডের সাথে জমিরের সম্পৃক্ততা রয়েছে। অন্তরালে কারো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না সেই বিষয়ে একটু খতিয়ে দেখার জন্য পুলিশের প্রতি অনুরোধ থাকবে।”

নিজাম উদ্দিন বলেন, “জমির দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে আমাদের বাড়িতে রয়েছে। আমার বাবা তাকে খুব বেশি ভালবাসতেন। আমার বাবার টাকায় বাঁশখালীতে জমিরের জন্য পাকা বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ৭-৮ লাখ টাকা খরচ করেছেন তিনি। আমার বাবাকে যে দিন হত্যা করেছে এর পরের দিনও কংকর, সিমেন্ট, বালি ও লোহাসহ প্রায় আড়াই লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। শুধু তাই নয়, তার বিয়ের জন্য ৫ লাখ টাকা খরচ করবে বলে জানিয়েছিল। তাদের ভিটে-বাড়ি নিয়ে প্রতিবেশীদের সাথে ঝামেলা ছিল। ঐ ঝামেলাটাও বাবা আমাকে দিয়ে শেষ করিয়েছেন।”

তিনি আরো বলেন, “আমার বাবার সবকিছু দেখাশুনা করতো জমির। চাষের ধান, পুকুরের মাছ, গরুর দুধ ও ফল-ফলাদিও বিক্রি করতো জমির। তার প্রতি বাবার অন্ধ বিশ্বাস ছিল। কর্মচারীর প্রতি অন্ধ বিশ্বাস আর ভালোবাসার বলি হলেন আমার বাবা। কাউকে ভালোবাসার পরিণাম যে এতো নির্মম, নিষ্ঠুর হবে তা হয়তো বাবা বুঝতে পারেননি। আদর, ভালবাসা দিয়ে কাছে রাখা মানুষ যে নিজের জীবন কেড়ে নিবে সেটা কীভাবে চিন্তা করবেন?”

নিজাম উদ্দিন বলেন, “কারো ইন্ধন ছাড়া যদি আমার বাবাকে হত্যা করে থাকে তাহলে নিশ্চিত টাকার লোভে করেছে কারণ ঘটনার কিছুদিন আগে আমার বাবা একটি এফডিআর ভেঙে ১০ লাখ টাকা ঘরে এনেছিলেন। ঐ টাকা কয়েকদিন ঘরে ছিল। টাকাগুলো জমিরও দেখেছিল কিন্তু ঐ টাকা যে ঘর থেকে নিয়ে পুনরায় ব্যাংকে রেখে দিয়েছেন তা হয়তো জমির বুঝতে পারেনি। আর সেই ১০ লাখ টাকা ঘরে আছে মনে করে লুটে নেয়ার জন্য আমার বাবাকে হত্যা করেছে সে। আমরা চাই বাবার হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে বিচার শেষ করে হত্যাকারীকে ফাঁসি দেয়া হোক।”

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.