বয়োবৃদ্ধ গৃহকর্তা খুনে আসামির মর্মন্তুদ জবানবন্দি

নিজস্ব প্রতিবেদক

গৃহকর্মীকে কাজের প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে একটু গালমন্দ করতেন সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হক (৯০)। আর তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে বয়োবৃদ্ধ গৃহকর্তাকে খুন করতে ছক আঁকে গৃহকর্মী মো.জমির উদ্দীন (২৫)। পরিকল্পনা মোতাবেক বাছাই করে এমন দিন যেদিন ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বাড়ীর সবাই ছিল বাইরে। ঐদিন রাতেই বৃদ্ধ গৃহকর্তাকে একা পেয়ে লোহার রডের ধারালো অংশ দিয়ে হত্যা করে জমির।

আবার নাটক সাজাতে নিজের পায়ে ছুরি দিয়ে হালকা আঁচড় দিয়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে পড়ে থাকেন নিজের গৃহকর্তা চেয়ারম্যান আব্দুল হকের নিথর দেহের পাশে। একইসঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লোহার রড, ছুরি, গৃহকর্তার ও নিজের মোবাইল পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। পরেরদিন সকালে স্থানীয়দের খবরে আব্দুল হকের মরদেহের পাশাপাশি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় জমিরকে উদ্ধার করে সাতকানিয়া থানা পুলিশ। কিন্তু জমিরের আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে মঙ্গলবার (২ মার্চ) দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়।

জিজ্ঞাসাবাদের প্রথমে স্বীকার করতে না চাইলে একপর্যায়ে পুলিশের কাছে নিজের গৃহকর্তা খুনের বর্ণনা দেয়। ঘটনার আগেরদিন বেতন নিয়ে একটু কথা-কাটাকাটি ও আগের জমানো ক্ষোভে ভোর ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যেই খুন করে তার গৃহকর্তাকে। পরে জমিরের দেয়া স্বীকারোক্তিতে পুলিশ বাড়ির পাশের পুকুর সেচ দিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লোহার রড, ছুরি ও তিনটি মোবাইল উদ্ধার করে। আর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু।

তিনি বলেন, ‘সাতকানিয়ার বয়োবৃদ্ধ সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হক হত্যাকাণ্ডে ব্যাপক তদন্তে নামে সাতকানিয়া থানা পুলিশ। কয়েকটি টিমে বিভক্তি করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে পুলিশ। এদিকে জমিরের বিষয়টি মাথায় রেখে তাকেও নজরদারিতে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। একপর্যায়ে নিহতের পরিবারের দেয়া ও পারিপার্শ্বিক তথ্যে ভর করে পরেরদিন জমিরকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে স্বীকার করে সাবেক এই চেয়ারম্যানকে হত্যাকাণ্ডের কথা। তার কথামত আমরা বাড়ীর পুকুর সেচ দিয়ে লোহার রড, ছুরি ও ৩টি মোবাইল উদ্ধার করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় গতকালকে একটা হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলার আজ (৩ মার্চ) জমিরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। যেহেতু আসামি অপরাধের কথা স্বীকার করেছে, তাই আমরা তাকে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের আবেদন করব। যদি জবানবন্দি না দেয় আমরা আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করব। ‘

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত আবদুল হকের ছেলে মো. মঈন উদ্দিন বলেন, ‘জমিরকে আমার আব্বা খুব স্নেহ করতেন। তার পাকাবাড়ি নির্মাণে তিনি ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দেন। আবার গত সপ্তাহে আমাদের ব্রিকফিল্ড থেকে ৭ গাড়ি ইট দেন। তার যখন যা প্রয়োজন হত আব্বা দিত। কেন সে এভাবে আমার বৃদ্ধ বাবাকে খুন করল বুঝতে পারছি না। ঘটনার দিন বাড়িতে আমার বাবা, একজন গৃহকর্মী, একজন গৃহপরিচারিকা ও একজন দারোয়ান ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে এলাকার লোকজনের মাধ্যমে আমার বাবাকে হত্যা করার বিষয়টি জানতে পেরেছি। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ ও সাংবাদিক ভাইয়েরা আমার পরিবারের জন্য যা করছে তার ঋণ আমরা শোধ করতে পারব না।’

প্রসঙ্গত, সোমবার (১ মার্চ) সকালে কেওচিয়া চেয়ারম্যান পাড়ায় নিজ বাসা থেকে তার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত আবদুল হক উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও কেঁওচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.