ফটিকছড়িতে আড়াইশ মণের শাহী ডেগে পায়েস রান্না হচ্ছে শুক্রবার

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে পায়েস রান্নার মধ্যদিয়ে হজরত গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারীর ২৫০ মণের শাহি ডেগে রান্নার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। তবে ডেগ বসানো চুলার কাজ পরিপূর্ণভাবে শেষ না হলেও শুক্রবার (৮ জুলাই) পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে রান্নার কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

ফটিকছড়ির নাজিরহাট-মাইজভাণ্ডার শরীফ সড়কের রোসাংগিরী ইউনিয়নের মাইজভাণ্ডার শরীফ এলাকার আজিমনগরস্থ বিশাল চুলার ওপর বসানো হয়েছে ডেগটি।

দেশের অন্যতম শিল্পগ্রুপ মোস্তফা হাকিমের হোছনে-আরা-মনজুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ডেগটি বসিয়েছে। এটি ছাড়াও উক্ত স্থানে রয়েছে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফকে কেন্দ্র করে হযরত গাউছুল আজম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (ক.) ও হযরত গোলামুর রহমান বাবা ভাণ্ডারীর (ক.) নামে উক্ত ট্রাস্ট কর্তৃক নির্মিত আশেকানে মাইজভাণ্ডারী বিশ্রামাগার, সুবিশাল মসজিদ, দৃষ্টিনন্দন শাহী গেট।

হজরত গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী শাহি তবারক ডেগ নামের আড়াইশ মণের ডেগটি বসানোর পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সবকিছু তদারকি করেছেন ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম।

জানা যায়, বেশ কয়েকজন প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে প্রায় ছয় মাস সময় লেগেছে ডেগটি তৈরী করতে। স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি এই ডেগটির ওজন প্রায় ৪০০০ কেজি। এর উচ্চতা ৯ ফুট এবং প্রস্থ ১১ ফুট। ১০ ফুট উঁচু চুলায় ডেগটি বসানো হয়েছে। ভারত থেকে আনা অত্যাধুনিক ফায়ার ব্রিক স্থাপন করা হয়েছে চুলায়। ডেগটি ঘুরানোর জন্য চুলার ওপর অটোমেটিক ক্রেন বসানো হয়েছে। বন্দরের কনটেইনার পরিবহনের কাজে ব্যবহার হয় এমন একটি লরি (প্রাইম মুভার) দিয়ে এটি ভাটিয়ারির একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা থেকে ফটিকছড়িতে আনা হয়েছে। এটি স্থাপনের জন্য চার গণ্ডা জমি কিনে শেড নির্মাণও করা হয়েছে। সব মিলিয়ে কোটি টাকার কাছাকাছি খরচ হয়েছে। শুধু ডেগটি তৈরি করতে ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হবে লাকড়ি।

ডেগটিতে একসঙ্গে আড়াইশ মণ খাবার রান্না করা যাবে যা খেতে পারবেন ৬৪ হাজার লোকে। এটাতে খিচুড়ি, পায়েস, শাহি জর্দা রান্না করা যাবে। বড় ডেকের পাশে চারটি অপেক্ষাকৃত ছোট ডেক থাকবে। বড় ডেকে রান্নার পর ছোট ডেকে তবারক নামানো হবে। সেখান থেকে পরিবেশন করা হবে। মাংস, ভাত রান্না প্রক্রিয়া শুরু হবে আরো পরে। সেখানে দায়িত্বরত বার্বুচিকে ভারতের আজমীর শরীফস্থ ডেকের রান্না কিভাবে করে তা ট্রেনিং বা দেখে আনার মাধ্যমে এখানে শুরু করবে বলে জানা যায়।

বছরে প্রধানত পাঁচটি দিনে রান্না হবে এ শাহি ডেকে। সেগুলো হলো ১২ রবিউল আউয়াল, ১০ মহররম, ১০ মাঘ, ২৯ আশ্বিন ও ২২ চৈত্র। এছাড়া কেউ মানত করলে তাকে এ ডেকে রান্নার সুযোগ দেওয়া হবে। প্রধান দিবসগুলোতে রান্নার আগে আগ্রহীরা যাতে শরিক হতে পারেন সেই ব্যবস্থা থাকবে। আগামীকাল শুক্রবার (৮ জুলাই) প্রথমবারের মতো ২৫ মণ পায়েস  রান্নার মাধ্যমে ডেগটির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করা হবে। পরবর্তী বাকি কাজ সম্পন্ন করা হবে।

এদিকে ডেগটি দেখতে স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন আসছেন। বিশেষ করে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ জেয়ারত শেষে এটি দেখতে আশেক ভক্তরা ভিড় যাচ্ছেন।

সেখানে দায়িত্বরত মোহাম্মদ মনির হোসাইন জানান,এ ডেগটি বসানো চুলার কাজ আরো বাকি রয়েছে। তবে ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে পায়েস রান্নার মধ্যদিয়ে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হবে। পরবর্তী বাকি কাজ সম্পন্ন করা হবে।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.