চবি রেজিস্ট্রারের অফিস সামলায় যুদ্ধাপরাধী সাকার ক্যাডার

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামের কোতোয়ালির ‘গুডস হিল’কে রাজাকার হিল ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর পুত্রের ‘হুংকারের’ বিরুদ্ধে যখন মুক্তিযোদ্ধারা আন্দোলনরত, ঠিক সেই মুহুর্তে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) রেজিস্ট্রারের দপ্তরে ছড়ি ঘুরাচ্ছে সাকা’র ক্যাডার আবদুল মামুন।

 

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর মনিরুল হাসানের অঘোষিত পিএস হিসেবে কাজ করছেন তিনি। রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পেয়েই সাকা’র এই ক্যাডারকে চবি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে বদলী করে রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের গোপনীয় শাখায় বদলী করে আনেন প্রফেসর মনিরুল হাসান।

 

আবদুল মামুন ২০০৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর অফিসিয়াল সুপারিশপত্র নিয়ে পিয়ন পদে চাকরিতে যোগদান করেছিলেন। বর্তমানে আবদুল মামুন ঊর্ধ্বতন সহকারী পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।

 

 

চট্টগ্রাম সংবাদের হাতে আবদুল মামুনের চাকরির আবেদনপত্রের কপি এসেছে। আবদুল মামুনের চাকরির এই আবেদন পত্রে রয়েছে যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর স্বাক্ষরযুক্ত সিলমোহর।

 

 

তার নিচে সিলযুক্ত লিখা রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার কার্যালয়। ডাইরী নংঃ ৩২২। তারিখঃ ১৮/০৫/২০০৫। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ।

এই আবেদনপত্রে তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. নুরুদ্দিন চৌধুরীরও স্বাক্ষর রয়েছে। নুরুদ্দিন চৌধুরী উপ উপাচার্যকে এ বিষয়ে লিখিত সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ প্রদান করেন এই আবেদন পত্রেই।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব নেওয়ার পরপর সাকার ঘনিষ্ঠ আবদুল মান্নানকে তিনি রেজিস্ট্রার দপ্তরের সংযুক্ত শাখায় বদলী করে আনেন। এই শাখার প্রধান রেজিস্ট্রার নিজেই। তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই শাখায় আবদুল মান্নান বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে জরুরি ও গোপনীয় ফাইল তৈরি, সংরক্ষণ ও সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ করেন।

 

 

শিক্ষকদের অভিযোগ, রেজিস্ট্রার প্রফেসর মনিরুল হাসানের বাড়ি কুমিল্লায়। আবদুল মান্নানের বাড়িও কুমিল্লায়। কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের সাবেক এমপি ও শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরেরও ঘনিষ্ঠ আবদুল মান্নান। আবদুল মান্নানের বাড়ি চৌদ্দগ্রামের তারাশাইল এলাকার দুর্গাপুর গ্রামে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র।

 

 

তার বাবা মো. অলি মিয়া ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চালক। জামায়াতের রুকন পর্যায়ের নেতা অলি মিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জামায়েতের কর্মচারী ইউনিট সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন ধরে।

 

বাবা জামায়াতের রাজনীতি করলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ঠেকাতে সাকা চৌধুরীর গড়ে তোলা ক্যাডার বাহিনীতে জড়িয়ে পড়েন আবদুল মামুন।

 

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে ছাত্রলীগের উপর শিবির-ছাত্রদল নেতাকর্মীরা নির্যাতন শুরু করে। এ সময় বহিরাগতদের পাশাপাশি ক্যাম্পাসের জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন কলোনীতে অস্ত্র যোগান দিতো। কর্মচারীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও একটি অংশ শিবিরের প্রত্যক্ষ মদদদাতা হিসেবে কাজ করতো।

 

 

জানা গেছে, জামায়াতের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীরও একটি বলয় গড়ে উঠে চবি ক্যাম্পাসজুড়ে। সাকা চৌধুরীর নির্দেশে মেধাবী ছাত্রলীগ কর্মীদের উপর গোপনে হামলা হতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।

 

 

চবি ক্যাম্পাসের ভেতরে গড়ে ওঠা শোভা কলোনির বাসিন্দা আবদুল মামুন এসব হামলার নেপথ্যে ভূমিকা পালন করতো বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

 

আবদুল মান্নানের উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংযুক্ত শাখার দায়িত্ব দিয়ে রাখায় প্রফেসর মনিরুল হাসানের সঙ্গেও সাকা চৌধুরীর ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল কি-না তা খতিয়ে দেখার দাবি করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

 

 

এ বিষয়ে আবদুল মান্নান বলেন-আসলে আমার বিষয়ে যা বলা হচ্ছে সব মিথ্যা, আপনি চাইলে স্যারের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন।

 

 

শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রফেসর মনিরুল হাসান ২০১১ সাল থেকে স্যার এএফ রহমানের হলের প্রভোস্ট পদে দায়িত্ব থাকা অবস্থায় এই হলের ৩০টি কক্ষ অলিখিতভাবে শিবির নেতাদের থাকার জন্য বরাদ্দ দিয়েছিল হল কর্তৃপক্ষ।

 

আবার ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ পোস্ট করে ডিজিটাল আইনে মামলার আসামী চবি সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মাইদুল ইসলামের সঙ্গে যৌথ সম্প্রতি রিসার্চ আর্টিকেল লিখে সমালোচিত হন প্রফেসর মনিরুল হাসান। প্রায় ৭০-৭৫ জন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকের পদোন্নতি আটকে রেখে তড়িঘড়ি করে মাইদুল ইসলামকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিতে সহযোগিতা করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মনিরুল হাসানকে কল করা হলে ফোনে সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.