দোহাজারী পৌরসভায় জন্ম নিবন্ধন সনদ পাচ্ছে রোহিঙ্গারা

চট্টগ্রামের দোহাজারীতে-

চন্দনাইশ প্রতিনিধি:

উপজেলার দোহাজারী পৌরসভা কার্যালয় থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ পেল রোহিঙ্গা নাগরিকেরা। দোহাজারী পৌরসভাধীন ৭ ও ৮নং ওয়ার্ডের ময়নার বাপের পাহাড় ও হাতিয়াখোলা এলাকায় বসবাসরত অনেক রোহিঙ্গা সৃজিত ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহার করে দোহাজারী পৌরসভা থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ পেল। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ময়নার বাপের পাহাড় ও হাতিয়াখোলা এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে অধিকাংশ বার্মার নাগরিক রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা কেউ ২০ বছর পূর্বে, কেউ তারও আগে, তাদের পূর্ব পুরুষেরা এসে এখানে বসবাস শুরু করে। ইতোমধ্যে অনেকের ছেলেমেয়েদের সাথে স্থানীয় লোকের সন্তানদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ফলে তারা নিজেদেরকে স্থানীয় নাগরিক হিসেবে দাবী করে আসছে। এসব এলাকার বাসিন্দা আবদুল রশিদ (৫৩), তার স্ত্রী সুরা খাতুন (৪৬) তাদের মেয়ে ছেনুয়ারা বেগম (২৫), জানু আকতার (১৯) সহ অনেকের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ দোহাজারী পৌরসভা থেকে সরবরাহ করা হয়। একইভাবে দোহাজারী পৌরসভা কর্তৃপক্ষ আবদুর রশিদকে হাতিয়া খোলার বাসিন্দা দেখিয়ে চলতি বছর ১৭ এপ্রিল গৃহকর আদায় করেন, যার রশিদ নং ১৮৬৫৪, হোল্ডিং নং ৭৯৮। হাতিয়াখোলা এলাকার বাসিন্দা হাজেরা খাতুন (৫৫) বলেছেন, আবদুর রশিদের পরিবারসহ এ পাহাড়ে অনেক রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এরা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পাওয়ার জন্য কাগজপত্র ঠিক করতে কামালের সহযোগিতা নিচ্ছে। এ ব্যাপারে পৌরকর আদায়কারী মিজানুর রহমান বলেছেন, আদায়কৃত গৃহকর রশিদের হোল্ডিং নাম্বারে আব্দুল রশিদ নাম রেজিস্টারে রয়েছে। উল্লেখ্য যে, কর আদায়কারী মিজানুর রহমান কম্পিউটার অপারেট করতে না পারার কারণে তার পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে মূলত কাজ করেন উদ্যোক্তা মো. কামাল। এ বিষয়ে আবদুর রশিদ বলেন, তারা কয়েকটি পরিবার বার্মা থেকে প্রায় ৩০ বছর পূর্বে দোহাজারী এসে এ জায়গায় বসবাস শুরু করে। তার স্ত্রী সুরা খাতুন জানান, পৌরসভার উদ্যোক্তা (বাঁশখালীর বাসিন্দা) মো. কামাল তাদেরকে এ সকল জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবস্থা করে দিয়েছে। দোহাজারী পৌর নির্বাহী কমকর্তা মো. মহসিন বলেছেন, জন্ম সনদ দেয়া বিষয়টি যেহেতু জেনেছি, যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাছরীন আকতার বলেছেন, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। স্থানীয় কয়েকটি কম্পিউটার দোকানদার, তাদের সহযোগীদের নিয়ে এসব এলাকার রোহিঙ্গা নাগরিকদের জন্ম নিবন্ধন সনদ ও ভোটার আইডি কার্ড বানাতে সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া দোহাজারী সদরের বেশ কয়েকটি কম্পিউটার সেন্টারে পৌরসভার জন্ম নিবন্ধন সার্ভারের গোপন কোড নম্বরটি থাকার কারণে এ সকল ভুয়া নাগরিকেরা রাতারাতি হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশী নাগরিক। সাবেক দোহাজারী ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম আবুল কাশেমে লেদু ও আবদুল্লাহ আল নোমান বেগের স্বাক্ষরযুক্ত পুরোনো ভুয়া জন্ম সনদের ফটোকপি দিয়ে পৌরসভা থেকে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে পৌরসভার সহায়ক সদস্যরা (সাবেক মেম্বার) এ সকল বার্মার নাগরিকদের প্রত্যয়ন পত্রে স্বাক্ষর দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জন্ম নিবন্ধন সনদ সরবরাহ করার পূর্বে অনলাইনে যাচাই-বাছাই বিষয়টি যথাযথভাবে না করার সুবাদে বার্মার নাগরিকেরা অবাধে পেয়ে যাচ্ছে জন্ম নিবন্ধন সনদ।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.