পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবন মানোন্নয়নে কাজ করবে ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ কমিটি: আমিন

আমিনুল ইসলাম আমিন। ছাত্রলীগের ইউনিট পর্যায়ের কর্মী থেকে উঠে এসে ধাপে ধাপে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অবস্থান পোক্ত করে নেন নিজ যোগ্যতায়। বক্তব্য-যুক্তিতে বিরোধী দলীয় নেতাদের করেন বরাবরই পরাস্ত। তিনি যখন সরকারের সফলতা তুলে ধরেন; তখন মনে হয় কেউ যেন আবৃত্তি করছেন কবিতা। তৃণমূলে অধিক জনপ্রিয় এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের আস্থাভাজন এই নেতা সম্প্রতি আওয়ামী লীগের ২২তম কাউন্সিলে মনোনীত হয়েছেন দলটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হিসেবে। দায়িত্ব প্রাপ্তির সাতদিন পর আসেন নিজ জেলা চট্টগ্রামে। তৃণমূলের প্রিয় এ নেতার ছুটে আসার খবরে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে নগরের সাব-এরিয়ার বাড়িতে রাত কিংবা সকালে, ফুল হাতে দলে দলে ভিড় করেছেন অসংখ্য নেতাকর্মী।

আর নেতাকর্মীদের সেই ভিড় ঠেলে ফুলেল অভ্যর্থনা গ্রহণের ফাঁকে শনিবার সকালে চট্টগ্রামের জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল সিভয়েস’র হেড অব নিউজ আলম দিদার কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের নতুন ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের সঙ্গে। অনির্ধারিত এ সংক্ষিপ্ত আলাপকালে সাতকানিয়ার সন্তান আমিন তার নতুন দায়িত্ব সম্পর্কে জানিয়েছেন সবিস্তারে। বলেছেন— দায়িত্ব পালনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার কথা। কাজের মাধ্যমে দিতে চান আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থার প্রতিদান এবং করতে চান তৃণমূলের কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন।

টানা পাঁচবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া আমিনুল ইসলাম আমিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি জানিয়েছেন কৃতজ্ঞতা। নিজের চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া; আল্লাহ আমাকে আরও একটু সম্মান দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতিও আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। যিনি এ নিয়ে পর পর পাঁচবার আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখলেন। আমার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে— স্মার্ট বাংলাদেশের প্রবক্তা বঙ্গবন্ধু কন্যা; যিনি আমার উপর আস্থা এবং বিশ্বাস রেখেছেন। আমার প্রথম কাজ হচ্ছে সেই আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা রাখা এবং সেটি যেকোনো কিছুর বিনিময়ে।’

নিজের পদের করণীয় সম্পর্কে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এটি একটি বিশাল কাজের জায়গা। আমাদের বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্ব নিঃসন্দেহে অনেক বেশি সামনের দিকে অগ্রসরমান এবং উন্নয়নের অভিযাত্রায় আমরা অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছি। তারপরও আমাদের সমাজের বড় একটি অংশ পিছিয়ে আছে। এ পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে সরকারের উন্নয়নের ধারা সম্পৃক্ততার পাশাপাশি তাদেরকে দলীয়ভাবেও নানাবিধ সাহায্য-সহযোগিতা করে সমাজের প্রতি আওয়ামী লীগের প্রতি দায়িত্বশীলতার যে বিষয়টি আছে; সেটিকে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা থাকবে আমার। আমি আশা করি, এ কাজটি তেমন কঠিন হবে না। যেহেতু, সারাদেশে আওয়ামী লীগের বিশাল সংগঠন আছে এবং আওয়ামী লীগের শেখড় উচ্চ পর্যায় থেকে নিম্নস্তর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এদের সবার সহযোগিতা নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার নির্দেশনা অনুযায়ী, আশা করি এ কাজটি আমি সম্পন্ন করতে পারবো।’

আগের কমিটিতে উপ-প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গণমাধ্যমের লাইম লাইটে আসেন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত আমিনুল ইসলাম আমিন। সেই সুবিধাকেও কাজে লাগাতে চান নতুন দায়িত্বে। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিটা হচ্ছে জনমানুষের জন্য কাজ করার কমিটমেন্ট এবং মহান ব্রত। আমি মনে করি, প্রচার বিভাগে কাজ করার সময় আমার যে অভিজ্ঞতা ছিল। সে অভিজ্ঞতার আলোকে আমি যদি এখানে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কাজ করতে যাই। আওয়ামী লীগের যারা পিছিয়ে পড়া তৃণমূল নেতাকর্মীরা আছে; তাদের খোঁজ-খবর নিব। এগুলো সবই কিন্তু মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত। মিডিয়া ছাড়া এগুলো কিছুই সম্ভব না। যেহেতু আমি মিডিয়ার সঙ্গে কাজ করেছি সেখানে একটু সুবিধাতো পাব। সুতরাং আমার নতুন দায়িত্বকে আমি কোনো চ্যালেঞ্জিং হিসেবে দেখি না বা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে দেখি না। সেটা আমার জন্য সহায়ক হবে।’

ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের কাজের পরিধি নিয়ে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এটি কাজের একটা বিশাল জায়গা। সমাজের পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগোষ্ঠীর মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ আছে এখানে। এখন কেবলমাত্র বিভিন্ন দুর্যোগে কাজ করাই ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের কাজ সীমাবদ্ধ নয় বরং রাউন্ড দ্য ইয়ার কাজ করার মানসিকতা নিয়ে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে হবে, মানুষের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে। আমাদের আদর্শের মহান শিক্ষক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সারা জীবন এদেশের অসহায়, দুঃখী, নিপীড়িত মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন, যা আমার কাজের ক্ষেত্রে বিশাল এক অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।’

ডিজিটাল বাংলাদেশ স্লোগানকে সামনে রেখে টানা ১৪ বছর দেশ পরিচালনায় থাকা আওয়ামী লীগের এবার লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্লোগান হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। সেই দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আমিন এ বিষয়ে বলেছেন বিস্তারিত।

তিনি বলেন, ‘আমরা ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান দিয়ে ২০২১ সালের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছি। এখন আমাদের নতুন স্লোগান, নতুন কমিটমেন্ট হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের বুঝতে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ কি? জানতে হবে কিভাবে তা অর্জন করতে হবে? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কিন্তু দামী মোবাইল, ব্রান্ডের শার্ট-প্যান্ট কিংবা দামি গাড়ি নিয়ে বিলাসী জীবন নয়। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট গভর্নেস এবং স্মার্ট কান্ট্রি। যেটা অর্জনে আমাদের টার্গেট ২০৪১ সাল। যখন বাংলাদেশ পৌঁছাবে উন্নত বিশ্বের কাতারে। এটি অর্জনে আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয় ঠেকাতে হবে, জীবন-যাত্রায় নীতি নৈতিকতার বিকাশ ঘটিয়ে আদর্শিক প্রতিযোগিতা তীব্রতর করতে হবে। শঠতা, প্রবঞ্চনা, প্রতারণা বিপরীতে সৃজনশীলতার বিকাশ হবে। প্রিয় বাংলাদেশ জায়গা করে নিবে উন্নত বিশ্বের কাতারে। সেটাই হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ।’

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.