‘পান থেকে চুন খসলেই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি কেন’

 

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল চালু করা হবে উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, এ সংক্রান্ত সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে। ৩১ জানুয়ারি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিবেদন প্রকাশ করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ওবায়দুল কাদের এ সব তথ্য দেন। পাশাপাশি তিনি ‘পান থেকে চুন খসলেই’ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঢাকায় মেট্রোরেল কতটুকু আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে, সেটি আপনারা দেখেছেন। চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল হচ্ছে, ফিজিবিলিটি টেস্ট প্রায় শেষ। ৩১ জানুয়ারি আমি আসব, মেট্রোরেলের ফিজিবিলিটি শেষে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব সেদিন। এখানকার নেতারা থাকবেন, সরকারের তথ্যমন্ত্রীও থাকবেন।’

আগামী এপ্রিল-মে মাসে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ পুরোপুরি খুলে দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। কর্ণফুলীর তলদেশে যে টানেল করা হচ্ছে, সেরকম দক্ষিণ এশিয়ায় আর কোথাও নেই। টানেলের কাজ প্রায় ৯৬ ভাগ শেষ। এ বছরের এপ্রিল বা মে মাসের দিকে সেটা সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। টানেল চালু হলে আরও অনেক উন্নয়ন ঘটবে। চীনের সাংহাই সিটির মতো রূপ নেবে চট্টগ্রাম।’

বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের রিজার্ভ ‘স্থিতিশীল’ আছে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘পাঁচ মাস আমদানি করার মতো রিজার্ভ আমাদের জমা আছে। এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হচ্ছে। পুরো বিশ্ব সংকটের মধ্যে আছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ তলানিতে। পাকিস্তানের রিজার্ভ সর্বশেষ হাফ বিলিয়ন ডলারে চলে এসেছে। সেখানে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ করোনার আগে যেখানে আমাদের রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার, সেটা এখন ৩৪ বিলিয়ন ডলারে এসেছে। আমরা এখনো স্থিতিশীল পর্যায়ে আছি।’

২০২৬ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় চার হাজার ডলারে পৌঁছাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অর্থনীতিতে বিশ্বের ৩৫ তম। বর্তমানে আড়াই হাজার ডলারের বেশি আমাদের মাথাপিছু আয়। সেটি ২০২৬ সালে চার হাজারে ডলারে পৌঁছাবে। এ প্রত্যাশা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমি একটা কথা বলতে পারি- বাংলাদেশ এখনো পরিস্থিতি সামাল দিয়ে যাচ্ছে। সেটা একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই সম্ভব হয়েছে। তিনি আমাদের ক্রাইসিস ম্যানেজার। করোনা সংকটেও তার বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতার কারণে আমরা ক্রাইসিসকে মোকাবিলা করতে পেরেছি।’

আগামী নির্বাচন ‘কঠিন চ্যালেঞ্জ’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সামনের বছরের জানুয়ারি মাসে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটি আমাদের আরেকটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। সিই নির্বাচনের প্রস্তুতি ও করণীয় নিয়ে গতকাল (বৃহস্পতিবার) পার্লামেন্টের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় এমপিদের আভাস দিয়েছেন। তার নির্দেশ আমরা পালন করব।’

অনেক দেশেই রাজনৈতিক সংকট আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমেরিকা থেকে ইউরোপসহ বহু দেশেই এ সমস্যা চলমান। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পদত্যাগ তো সেদেশের জনগণ দাবি করে না। সোমালিয়ার মতো দেশ যেখানে প্রতি ৮৬ সেকেন্ডে একজন মানুষ মারা যায়, সেখানেও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ কেউ দাবি করে না।’

‘আমাদের দেশে পান থেকে চুন খসলেই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি করে। এটি কেন ? আমাদের গণতন্ত্র পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত নয়, তবে আমাদের গণতন্ত্র বিকাশমান ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। ভূল থাকলে সেটা আমরা সংশোধন করার চেষ্টা করছি।’

মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাবউদ্দীন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.