ইস্টার্ন ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছর কারাদণ্ড, কোটি টাকা জরিমানা

 

চট্টগ্রাম ব্যুরো : তিন গ্রাহকের স্বাক্ষর জাল করে ৫০ লাখ টাকা আরেক গ্রাহকের হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাতের দায়ে ইস্টার্ন ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে ২৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। যার ব্যাংক হিসাবে টাকা স্থানান্তর করা হয়েছিল তাকেও ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আব্দুল মজিদ এ রায় দেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কৌঁসুলি মাহমুদুল হক মাহমুদ জানিয়েছেন।

দণ্ডিতরা হলেন ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) সাবেক কর্মকর্তা ইফতেখারুল কবির ও একই ব্যাংকের হিসাবধারী গ্রাহক মাহমুদুল হাসান। কারাগারে থাকা দুই আসামিকে রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির করা হয়েছিল। পরে তাদের সাজামূলে কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়।

দণ্ডিত ইফতেখারুল কবির চট্টগ্রাম নগরীতে ইবিএল’র ও আর নিজাম রোড শাখায় প্রায়োরিটি ব্যাংকিং ব্যবস্থাপক ছিলেন। গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর ২০১৯ সালে তাকে বরখাস্ত করা হয়। মাহমুদুল হাসান নগরীর খুলশী এলাকার নিশাত এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক।

দুদক পিপি মাহমুদুল হক সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, আসামি ইফতেখারুল কবিরকে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের বিভিন্ন ধারায় মোট ২৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এক কোটি চার লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

অপর আসামি মাহমুদুল হাসানকে বিভিন্ন ধারায় মোট ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৭৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ইফতেখারুল কবিরকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় ৮ বছর ও মাহমুদুলকে ৫ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৮, ৪৭৭ (ক) ও ১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় ইফতেখারুল কবিরকে দুই বছর করে এবং মাহমুদুলকে এক বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে আদালত দণ্ডবিধির ৪৬৭ ও ৪৭১ ধারায় ইফতেখারুল কবিরকে ৫ বছর করে এবং মাহমুদুলকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন।

বিভিন্ন ধারায় দেওয়া সাজা একসঙ্গে কার্যকর হওয়ায় ইফতেখারুল কবিরকে সর্বোচ্চ ১৩ বছর এবং মাহমুদুল হাসানকে ৫ বছর কারাভোগ করতে হবে বলে জানিয়েছেন পিপি মাহমুদুল হক।

দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর ইফতেখারুল ও মাহমুদুলকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার নথিপত্র পর্যালোচনায় জানা গেছে, ইবিএল’র হিসাবধারী গ্রাহক অন্যনা বড়ুয়া, রুপম কিশোর বড়ুয়া ও সুপ্রভা বড়ুয়ার যৌথ হিসাবে জমা থাকা ৫০ লাখ টাকা ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ এফডি (স্থায়ী আমানত) করার জন্য আবেদন করেন রুপম। ইফতেখারুল কবির ৫০ লাখ টাকার জাল এফডিআর রশিদ বানিয়ে রুপমের হাতে দেন। এরপর কৌশলে তিনজনের অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০ লাখ টাকা একই ব্যাংকের একই শাখায় মাহমুদুলের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন।

ইফতেখারুল কবির ও তার ঘনিষ্ঠ মাহমুদুল হাসান পরস্পরের যোগসাজশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহক রুপম কিশোরের অজ্ঞাতে ৫০ লাখ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাত করেন। ২০২১ সালের ২৫ মার্চ সিআইডির হস্তরেখা বিশারদ তহবিল স্থানান্তর ফরমে গ্রাহক রূপমের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর ভিত্তিতে তদন্ত কর্মকর্তা দুদকে নুরুল ইসলাম দু’জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

দুদক পিপি মাহমুদুল হক জানান, ২০২২ সালের ২১ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মোট ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের পর আদালত এ রায় দিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

Your email address will not be published.