জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, বিদেশযাত্রা— সবই মিলতো এক প্যাকেজে। তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকার এই প্যাকেজে বিদেশযাত্রা করতো রোহিঙ্গারা।
বৃহস্পতিবার ভোরে দুই রোহিঙ্গাকে পাসপোর্টের কাজে ঢাকায় নেওয়ার পথে চট্টগ্রাম নগরের গরীবুল্লাহ শাহ মাজারের সামনে থেকে চক্রটির চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে ৫টি পাসপোর্ট ও একটি জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন— চক্রের মূলহোতা মো. খসরু পারভেজ (৩৬) ও তার সহযোগী মো. তসলিম (৪০), মো. ইসমাইল (২০) এবং মো. ফারুক (২৭)। এদের মধ্যে খসরুর বাড়ি সাতকানিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে, তসলিমের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে, ইসমাইলের বাড়ি লোহাগাড়ার আধুনগরে, ফারুকের বাড়ি পটিয়ার আশিয়ায়। এছাড়া রোহিঙ্গা দুইজন হলেন— মো. জাবের (২৫) ও রজি আলম (২৭)।
বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানান মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার নিহাদ আদনান তাইয়ান।
উপ-পুলিশ কমিশনার নিহাদ আদনান তাইয়ান বলেন, গত ১০ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবে পালিয়ে যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্টসহ আসাদ উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। গ্রেপ্তার রোহিঙ্গা আসাদ উল্লাহ গত ৯ জানুয়ারি উখিয়া থানায় দায়ের করা একটি হত্যা মামলার আসামি। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে আসাদ উল্লাহ জেদ্দাগামী একটি ফ্লাইটে সৌদি আরবে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। পুলিশ খবর পেয়ে সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে তাকে গ্রেপ্তার করে। এসময় তার কাছে পাওয়া বাংলাদেশি পাসপোর্টটিও জব্দ করা হয়। পরে তার কাছে দেশি পাসপোর্ট কিভাবে এসেছে সেটার তদন্তে নামলে এ চক্রের সন্ধান মেলে। পরে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকায় চলে যাওয়ার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে পাসপোর্ট তৈরির মূলহোতা পারভেজসহ আরও দুই রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পারভেজের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার অপর সহযোগী তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি পাসপোর্ট ও একটি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, বিগত মাস ধরে তাদের অন্যান্য সদস্যদের সহায়তায় রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট/জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠাতে সহযোগিতা করে আসছে তারা। প্রতিটি পাসপোর্ট তৈরিতে ১ লাখ টাকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর জন্য ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে।
এক প্রশ্নের জবাবে উপ-পুলিশ কমিশনার নিহাদ আদনান তাইয়ান বলেন, তাদের এ চক্রের মধ্যে আর ৪-৫ জন সদস্য রয়েছে। তাদের বাকি সদস্যরা ঢাকার পাসপোর্ট অফিসের সামনে থাকে। তাদের মাধ্যমেই পাসপোর্ট তৈরি করে। এছাড়া এ চক্র চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে রোহিঙ্গা নাগরিকের ব্যবস্থা করতো। এরপর শুধু ওই রোহিঙ্গা নাগরিকদের নাম ঠিক রেখে বাবা-মা, স্থানের নাম বিভিন্ন জায়গার দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করতো। এ চক্রটি একটি প্যাকেজের মতো কাজ করতো। যাতে ছিল জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও তাদের মধ্যপ্রাচে পাঠাতে সহযোগিতা করা।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক রোহিঙ্গা পাসপোর্ট বানিয়ে সৌদি আরবে চলে যায়। তারা বাংলাদেশে আসার আগে থেকে তাদের পরিচিত অনেকে সৌদি আরবে আছে। তারাই এই রোহিঙ্গাদের সেখানে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করে। আর এ চক্রটি রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ও সেখানে যেতে যাবতীয় সব ধরনের সহযোগিতা করে।’